আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নজর কি সামনে জিগার কি পাস

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

বাসা থেকে কলেজের রিক্সা ভাড়া তিনটাকা। আমি হেঁটেই যেতাম। পথিমধ্যে এক বাড়ীতে নজর কি সামনে, জিগার কি পাস গানটা বাজতো প্রতিদিন। ক্যাপস্টানের দাম ছিল এক টাকা পচিশ পয়সা। রিক্সা ভাড়া আর সিংগারা খাবার টাকা দিয়ে ৮টা সিগারেট কেনা যেত।

একদিনের জন্য যা ছিল মোর দ্যান এনাফ। ফিল্টারে টান দিতে ইচ্ছে করতো গানটা শুনলে। আশিকী দেখেছি এর কয়েকদিন আগে। এন্টায়রলী রোমান্টিক। প্রেম মানে এমন কিছু আর তার গায়ে লেগে থাকে ক্যাপস্টানের সুগন্ধি - এমন দৃশ্য গানের সাথে লেপ্টে থাকতে দেখতাম।

এরপরে এই গান পাল্টে চারদিকে নতুন গানের জোয়ার এলো। প্রতি বছরই নতুন একটা হিন্দি গান আকাশ-বাতাস শাসন করতো। মাইকে হাই ভলিউমে বা কারো ঘরের অডিও প্লেয়ারে বাজানো হতো। হোটেল, রেস্তোরা বা সাংস্কৃতিক আয়োজনেও ঐ একই গান। যেমন এর কিছুদিন আগেই ছিল হাওয়া হাওয়া, মুচকো লুটা দে আর তার কি তান্ডব! স্কুলে পড়ি তখন।

গানের আবির্ভাবের সাথে সাথে ফ্যাশন পাল্টে গেল। ঢোলাঢালা জিনসের প‌্যান্ট-শার্টের প্রচন্ড কাটতি তখন বাজারে। তবে আশিকীর গানগুলোর মধ্যে কিছু একটা যাদু ছিল। কুমার শানু এই গানগুলোর কল্যাণে বিগ সিংগার হয়ে গেলেন। এরপরে এ মেরি হাম সফর, এক জারা ইন্তেজার এর জামানা।

একইভাবে উচ্চস্বরে গান শোনানো সকল যন্ত্রগুলো এই গান দখল করে নিল। দিল, পরদেশ, রাজা হিন্দুস্থানী, হাম দিল দে চুকে সনম এমন অনেক ছবির গান শোনা যেত মাইকে চারদিকে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বিভিন্ন জায়গায় এই গানগুলো কমন শোনা যেত। মানে সিলেটে যে গানটা গ্রামের বিয়েতে বাজতো বিশেষ মর্যাদায়, নোয়াখালীতেও সেটা ছিল তুমুল হিট। এখন আগের থেকে মনে হয় আরো বেশি ভাল হিন্দি গান তৈরী হচ্ছে।

এইগানগুলো বাংলাদেশের প্রতিটা অলিগলিতে, কানাঘুঞ্চিতে খুঁজে পাওয়া যাবে কেউ গুনগুনিয়ে গাচ্ছে। কিন্তু বাংলা এমন একটা গান মনে হয় অনেক দিন শুনিনা। অথচ ঢাকাতে প্রচুর চমৎকার গান হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। চমৎকার গায়ক। চমৎকার লিরিকের গান হয়েছে।

শুনে মাঝে মাঝে চমকে যেতে হয়, এ-এ-ত সুন্দর, অথচ সেগুলো বাজাতে দেখি না সর্বত্র। হতে পারে বাংলা গানগুলো বেশীরভাগ সিনেমার নয়, আর হিন্দি গানের ছবিগুলো এদেশের বেশীরভাগ মানুষেরা দেখে ফেলা। বাংলা চমৎকার গানগুলো ফলে বেশীরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যায়। অজপাড়াগাঁ বা মফস্বল শহরে এখনও বাংলা ছবিই বৃহত্তর বিনোদন। আর ভিসিডি/ডিভিডি প্লেয়ারের দাম ২/৩ হাজার হওয়ায় একজন বস্তিবাসীর ঘরে এগুলো দেখতে পাওয়া বিচিত্র নয়।

সিডি শপ থেকে বাংলা ছবি ভাড়া নিয়ে নিয়মিত দেখে থাকে। বিভিন্ন এ্যালবামের জনপ্রিয় গানগুলো ফিল্মে সংযোজিত হলে আরো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে যেত হয়তো। বাপ্পা, অর্নব, শায়ান, বালাম এদের অনেকগুলো চমৎকার গান সারাক্ষণ বাজানোর মত এমন সব সরব মাইকে। মানুষের যা ভাল লাগবে তাই শুনবে কিন্তু আমার মনে হয় বাংলা গানগুলোর চেয়ে হিন্দিগান সহজে একজন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সুতরাং যা মানুষ শুনবে এবং সেটা যদি তার ভাল লেগে যায় তবে সেটাই তো সে বারবার শুনতে চাইবে।

বৃটিশ আমেরিকান টোবাকোর ভিতরে আজকে নজর কি সামনে জিগার কি পাস গানটা বাজতে শুনে মনে হলো - কত অতীতে ফেলে এসেছি ক্যাপস্টানের সুগন্ধি। গানটা আমার আবারও শুনতে ইচ্ছে করছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।