পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
-------------------------------------------------------
সালাম, সন্মানিত পাঠক/পাঠিকা। আজ ১১ নভেম্বর, ২০০৮। সকাল ১১:৪৫ বাজে। কিছুণের মধ্যেই আমার প্রথম ব্লগ পোস্ট করতে যাচ্ছি।
আমার প্রোফাইল টা এখনো সেট করা হয়নি। সামনেই করে ফেলবো আশা করি।
রহস্য-গল্প, সাসপেন্স-থ্রিলার পড়তে আমার ভালো লাগে। আর লাগে অনুবাদ করতে। আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক জ্যাক-রিচির একটি ছোট সাসপেন্স-থ্রিলার এখানে অনুবাদ করে দিলাম।
আমার প্রিয় আরো কিছু গল্পের অনুবাদ সামনে পোস্ট করবো, ইনশা-আল্লাহ।
আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তবে শর্ত শুধু একটাই, গল্পের শেষ অংশ আগে পড়া যাবে না। রাজী থাকলে, পড়া শুরু করুন। আপনাদের সুবিধার্থে, এর কাহিনী সংক্ষেপ প্রথমেই দিয়ে দেয়া হলো।
-: কাহিনী-সংক্ষেপ : -
------------------------
দেশে একের পর এক খুন হচ্ছে। নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। দুই পাশে শুধু ধূ-ধূ রাস্তা, কোন জনমানব বসতি নেই। ড্রাইভার ট্রিপ দেয়ার জন্য একজনকে তুলে নিয়েছিল। সে কি খুনীকেই তুলে নিল? কি হবে নির্দোষ লোকটার?
------------ আট নম্বর -----------
মূল: জ্যাক রিচি (নাম্বার এইট্)
ভাষান্তর: মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন
----------------------------------------------------------------------------------
প্রায় আশি মাইল বেগে চলছিলাম, কিন্তু সামনের বিস্তৃত রাস্তার তুলনায় তা হাস্যকর গতি মনে হচ্ছিল।
লাল চুলো ছেলেটার চোখ গাড়ির রেডিও শুনতে শুনতে একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কি যেন ঝিলিক দিয়ে গেল ওর চোখে। খবর শেষ হতেই ভলিয়্যুম কমিয়ে দিল।
হাত দিয়ে মুখের পাশে মুছল সে।
'এ পর্যন্ত ওরা সাতজনের মৃতদেহ পেয়েছে।
'
আমি মাথা ঝাঁকালাম।
'আমিও শুনছিলাম', বললাম। ড্রাইভিং হুইল থেকে এক হাত সরিয়ে পিঠের পিছনে ঘষলাম। আড়ষ্ট ভঙ্গীটা দূর করার চেষ্টা।
সে আমাকে বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখল।
'ভয় পাচ্ছো?' মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল।
ঝট্ করে ওর দিকে তাকালাম।
'না, ভয় পাবো কেন?'
ছেলেটা হাসতেই থাকল।
'পুলিশ এডমন্টনের চারপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। '
'শুনেছি।
'
ছেলেটা প্রায় খিলখিল করে হাসছে।
'ওদের পে একটু বেশিই স্মার্ট ছেলেটা। কোন লাভ নাই। '
ওর কোলের ওপর রাখা ব্যাগটার দিকে তাকালাম। কি আছে ভেতরে?
'দূরে যাচ্ছো?'
সে মাথা ঝাঁকালো।
'জানি না। '
ছেলেটা সাধারণের তুলনায় একটু খাটোই হবে, আর শরীরের গড়ন ও খুব একটা শক্তিশালী না। দেখতে মনে হয় সতেরোর মতো বয়স হবে, তবে বলা যায় না আরো পাঁচ বছর বেশিও হতে পারে। মুখের গড়নটা বাচ্চাদের মতো - বয়স সহজে বোঝা যায়না।
প্যান্টের ওপর হাতের তালু ঘষলো সে।
'কখনো ভেবেছো কেন সে এরকম করে?' বললো।
রাস্তা থেকে চোখ সরালাম না।
'না। '
সে ঠোঁট ভেজালো।
'হয়তো অতিরিক্তই করা হয়েছিল তার প্রতি।
সারা জীবনই অন্যে তার উপর জোর চালিয়েছে। লোকের অবিরাম আদেশ আর নিষেধ তাকে সহ্যের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। সবসময়ই অন্যে কথার ছড়ি ঘুরিয়েছে তার উপর। '
ছেলেটা সামনের দিকে তাকালো।
'অবশেষে তার রাগের বিস্ফোরণ ঘটেছে।
মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা তো আছে! তার বাইরে গেলে কিছু একটা হওয়ারই ছিলো। '
এক্সিলারেটার থেকে পা সরালাম।
সে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
'গাড়ি থামাচ্ছো কেন?'
'তেল ফুরিয়ে আসছে', আমি বললাম।
'গত চল্লিশ মাইলের মধ্যে একটা ও তেলের পাম্প পড়েনি।
সামনেরটা থেকে না নিলে আরো চল্লিশ মাইল বর্তমান তেলে চলবে না। '
রাস্তা থেকে বাঁক নিয়ে পেট্রোল পাম্পে ঢুকে পড়লাম। একজন বয়স্ক লোক কাছে এগিয়ে আসলো।
'ট্যাংক ভর্তি করো', বললাম।
'আর তেলের কি অবস্থা দেখে নিয়ো আগে।
'
ছেলেটা খুব মনোযোগ দিয়ে পাম্প দেখছে। ছোট্ট একটা বিল্ডিং, দু'পাশের এক সমুদ্র গম ক্ষেতের মাঝে একমাত্র কাঠামো।
গাড়ির জানালার দিকে তাকালাম। ধূলায় ধূসরিত। পরিষ্কার করা দরকার।
পাম্পের একপাশে একটা দেয়াল ফোন চোখে পড়লো।
ছেলেটা অধৈর্যের সাথে একটা পা ঠুকলো।
'বুড়োটা বড্ড বেশি দেরি করছে। অপেক্ষা করা আমি পছন্দ করি না। ' পাম্পের লোকটাকে দেখা যাচ্ছে গাড়ির হুড তুলে তেল চেক করতে।
'এতো বয়সের একজনের বেঁচে থাকার দরকারটা কি? মরলেই মানাতো ওকে। '
একটা সিগারেট ধরালাম।
'ও তোমার সাথে একমত হবে বলে মনে হয় না। '
ছেলেটার চোখ আবার ফিলিং স্টেশনের দিকে গেল।
'ওই তো একটা ফোন দেখা যাচ্ছে।
' সে হাসলো। 'কাউকে ফোন করতে ইচ্ছা করছে? চাইলে করো। '
সিগারেটের এক রাশ ধোঁয়া ছাড়লাম।
'না। '
বুড়ো লোকটা যখন ভাংতি পয়সা ফেরত দিতে এলো, ছেলেটা জানালার দিকে ঝুঁকে পড়লো।
'রেডিও হবে আপনার কাছে? '
লোকটা মাথা নাড়লো। 'না। আমি কোলাহল মুক্ত থাকতেই পছন্দ করি। '
ছেলেটা হাসলো।
'ঠিক বলেছেন।
চুপচাপ থাকলে বেশিদিন বাঁচবেন। '
রাস্তায় আবার বের হয়ে স্পিড আশি মাইলে তুললাম।
ছেলেটা কিছুণ চুপচাপ থাকলো। তারপর বললো, 'সাতজনকে খুন করতে কলিজা লাগে। জীবনে কখনো পিস্তল ধরে দেখেছো?'
'প্রায় সবাই-ই ধরেছে।
'
ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে দাঁত দেখা যাচ্ছে ছেলেটার।
'কারো দিকে তাক্ করেছো কখনো?'
আমি ওর দিকে তাকালাম।
চোখগুলো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
'লোকে তোমাকে ভয় পেলে মন্দ লাগবে না, বিশ্বাস করো। '
'পিস্তল থাকলে তুমি আর খাটো থাকো না।
'
'না', বললাম।
ছেলেটা খাটো, তা আগেই দেখেছি। উচ্চতা কতো হবে অনুমান করার চেষ্টা করলাম।
'তুমি আর পুঁচকে ছেলে টি নও। হতচ্ছাড়া বদমাশ ও না।
'
ওর চোখে কি যেন ঝিলিক দিয়ে গেল।
'পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা লোকটা তখন তুমি!'
'ঠিক, যতণ না অন্যের ও একটা পিস্তল থাকে। '
'ভালো বলেছো তো! হা হা!'
'তবে খুন করতে কিন্তু বুকের পাটা লাগে, জানো তো?' ছেলেটা আবার বললো।
'অনেক লোকই তা জানে না। খুন হওয়াদের মধ্যে পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা ও আছে।
' বললাম আমি।
'তাতে তোমার এতো আপত্তি কেন?'
জিভ্ দিয়ে ঠোঁট চাটলো সে।
'হতে পারে ওটা একটা দুর্ঘটনা ছিলো?'
আমি মাথা ঝাঁকালাম।
'কেউ তা মনে করছে না। '
ওর চোখে একটু অনিশ্চয়তার ছায়া পড়লো।
'ও একটা বাচ্চাকে হত্যা করবে মনে করছো কেন?'
'কি জানি। '
'বলা কঠিন', বললাম। 'সে শুরু করেছে একজনকে হত্যা করে। তারপর আরেকটা, তারপর আরো একটা। হয়তো কিছু সময় পরে কে খুন হলো দেখার ধৈর্যই থাকলো না ওর? পুরুষ, মহিলা, বা না হয় বাচ্চাই হলো? তার কাছে তো একই ব্যাপার।
'
ছেলেটা মাথা ঝাঁকালো।
'আসলে একটা আলাদা মজা চলে আসে। ব্যাপারটা অতো কঠিন না। প্রথম কয়েকটার পরে, কোন কিছুতেই আর কিছু আসে যায় না। কাজটা ভালো লাগতে শুরু করে।
যতই হোক, লোকগুলি একদিন না একদিন তো মরতোই। কয়েক দিন আগেই না হয় মরলো। তার বিনিময়ে যদি একজনকে মজা দেয়া যায়, তি কি?'
গাড়ি ঝড়ের বেগে চালাচ্ছি। আরো মিনিট পাঁচেক চুপচাপ থাকলো সে।
'তারা ওকে কখনো ধরতে পারবে না।
সে ওদের চেয়ে একটু বেশিই স্মার্ট। '
রাস্তা থেকে কিছু সময়ের জন্য চোখ সরালাম।
'এতো নিশ্চিত হচ্ছো কিভাবে? পুরো দেশটা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সবাই জানে ও দেখতে কেমন। '
ছেলেটা অনীহার ভঙ্গীতে কাঁধ উঁচু করলো।
'হয়তো ওর কিছু আসে যায় না এতে। ওর করার ছিল, তাই করেছে। আরো করবে, আমি জানি। লোকে বলতে বাধ্য হবে, ও কিছু করে দেখাবার মতা রাখে। '
পরের এক মাইল একটা শব্দও না বলে পার হলাম।
তারপরই গাড়ির সিটে ছেলেটা নড়েচড়ে বসলো।
'রেডিও তে ওর বর্ণণা শুনেছো?'
'অবশ্যই', বললাম আমি। 'গত পুরো সপ্তাহ জুড়েই। '
সে আমার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালো।
'তাই? তারপরও আমাকে গাড়িতে তুলতে ভয় করে নি?'
'না।
'
ছেলেটার মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা।
'ইস্পাত-দৃঢ় নার্ভ তো তোমার?'
আমি মাথা নাড়লাম।
'না। ভয় পাওয়ার অব¯থা হলে ঠিকই ভয় পাই। '
ওর চোখ আমার ওপর স্থির।
'রেডিওর বর্ণণার সাথে আমি পুরোপুরি মিলে যাই। '
'হ্যাঁ। '
যতদূর চোখ যায় খালি রাস্তা চলে গেছে সামনে। দু’পাশে ধু ধু সমতল মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। একটা বাড়িও না।
কোন গাছ পর্যন্ত না।
ছেলেটা হাসলো।
'ঠিক খুনীটার মতোই দেখতে আমি। সবাই ভয় পায়। ভালো লাগে আমার।
'
'আশা করি ব্যাপারটা উপভোগ করেছো। ' আমি বললাম।
'গত দুইদিনে এ রাস্তায় তিনবার পুলিশ আটকেছে আমাকে। খুনীর যোগ্য প্রচারই দেয়া হয় আমাকে। আমি সন্তুষ্ট।
'
'বুঝতে পারছি', বললাম।
'জানি তুমি প্রচার আরো পাবে', যোগ করলাম। 'আমার মনেই হচ্ছিলো এ হাইওয়ের কোথাও তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্য পিছু পিছু চলেই আসে। '
গাড়ির গতি কমিয়ে আনলাম।
'দয়া করে আমার ব্যাপারেও একটু চিন্তা কর। আমি ও কি বর্ণণার সাথে মিলে যাই না?'
ছেলেটা প্রায় চুকচুক শব্দ করলো।
'আহা! ঐ বাদামী চুল নিয়ে? ওর চুল তো লাল। এই যে আমারটা দেখো। '
আমি হাসলাম।
'কিন্তু আমি তো চুলে কৃত্রিম রং ও লাগাতে পারি?'
ছেলেটার চোখগুলো বড় বড় হয়ে উঠলো যখন বুঝতে পারলো কি ঘটতে চলেছে।
ও হতে যাচ্ছে আট নম্বর।
-------------------- ------------সমাপ্ত-------------------------------
-- সামনে আসছে ---
*চোখের আড়ালঃ
স্ত্রী নিরুদ্দেশ হওয়াতে স্বামীকে সন্দেহ করা হচ্ছে, এবং পুলিশ তার বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। কিছু তথ্য-প্রমাণ নির্দেশ করছে স্বামী দোষী, কিন্তু অন্য কিছু বলছে এ ব্যাপারে স্বামীর কোন ভূমিকা থাকার কথা না। প্রকৃত রহস্য কি? পুলিশ কি পারবে আসল ঘটনা উদ্ঘাটন করতে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।