আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাসের ৩য় অংশ)

সুন্দর সমর

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে।

আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর।

আজ তার তৃতীয় পর্ব পরিবেশিত হল। ) বিকেলের আলো মিলিয়ে আধার নেমে আসছে। সন্ধার পরই বাইরের গেট আটকে দেয়া হল । এভাবে গেট আটকাতে দেখলেই ঝিনুর খারাপ লাগে ভয় চেপে বসে। সৈন্যরা যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত তখন এ খাবে গেট আটকে দেয়া হতো।

বলেছে আপা। ১৬ তারিখের পর আর গেট আটকানো হয়নি। যে দিন রাস্তার মোড় হতে সুজন ব্যাপারীর টাকা হাইজাক হয়ে গেল। ক’ দিন পর কথা নেই, বার্তা নেই, কালচে সবুজ পোশাকের লেকেরা ইউ এন মাকা ট্রাকে এসে ধরে নিয়ে গেল বজলুর ভাইয়াকে। সেদিনই বাংলাদেশে নতুন করে গেট আটকানোর পালা শুরু হয়।

বজলুর ভাইয়াকে সাতদিন পর পাওয়া যায় কোথাকার এক নদীর কিনারে। আহ, হাত পা বাঁধাা। সারা শরীরে চাকুকের দাগ। মরে ভাসছিল। বজলুর বুড়ো বাবা এখনও কাঁদেন রক্ষীবাহিনী পরে বলেছে, তাদের কেউ বজলুর ভাইয়াকে ধরে নেয়নি।

অথচ বারান্দা হতে ঝিনু নিজের চোখে দেখেছে আবছা সন্ধায় মস্ত ট্রাকটো এসে থামল। হুটমুট করে কয়েকজন রক্ষী ঢুকে গেল ওদের বাসায় । এরপর পিছমোড়া করে হাত বেঁধে বজলুর ভাইয়াকে ধরে নিচ্ছে । সমানে চালা্েছ কিল লাথি। বজলুর ভাইয়া কেমন চুপসে ছিল।

কিèন্তু আর্তস্বরে চেঁচাছিল বুড়া বাবা, ছোট দু’ভাই এবং এক বোন। ঝিনু জানে না কেন তাকে ধরে নিয়ে গেল। মেরে ফেলল। আবার রক্ষী বাহিনী বলল তারা ওকেই ধরেইনি। তাহলে কি ঝিনু ভুল দেখেছে? নাকি ওটা ছিল কোন খারাপ ঘুমের স্বপ্ন যাকে কিনা কেবল সত্যি বলেই মনে হতে থাকে।

কাউকে কিছু প্রশ্ন করার সাহস ওর হয়নি। শুধু ভাইমনিকে বলতে শুনেছে -‘অন্য দল করলেই তাকে মেরে লেতে হবে? আম্মু সে কথার পিঠে বললেন, -‘শোলার বাদশাহী শেষতক টিকিয়ে নে। দেখ কদিন টেকে। মানুষ খেতে পায়না সোনার মুকুুট দিয়ে রাজপুত্রের বিয়ে !’ চাপা গলায় কথা বলছিলেন আম্মু এবং ভাইমনি । রাতের আকাশ চিরে মাঝে মাঝে ঁেকদে ককিয়ে উঠে আারেক জন।

সুরুজ মিয়া। ওদের বাসার উল্টো দিকের বাসিন্দা। তাগড়াই শরীর । দারুণ জোয়ান। সেই পাক সৈন্যদের দিনে ওর ঘরে পাওয়া গেল গুলী গ্রেনেড রাইফেল ।

সৈন্যরা বেদম মেরে ট্রাকে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। পরে নাকি হাত পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়। পানিতে ফেলে দেবার আগে মেরছিলো ভীষণ। আল্লামালুম সুরুজ মিয়া যেনো কিভাবে ঁেবচে যায় তবে পাগল হয়ে গেছে। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে।

খালি রাত হলে ঁেচচিয়ে কেঁদে কেঁদে ওঠে। বাইরে সন্ধা পেরোবার আগেই রাত নেমে এসেছে। গাড়ীর ঘরঘর রিক্সার টুং টাং হেটে চলার থপথপ শব্দ ব্যস্ত মানুষের গলার স্বর কমে কমে আসতে থাকে। এক সময় তা হঠাৎ হাঠাৎ শোনা যেতে লাগল। আব্বু বি বি সি শুনছেন।

বি বি সি শুনে হঠাৎ দাঁত সিটিয়ে উঠছেন। বিবিসি শুনে আব্বু যখন ঢাকা ধরলেন সে সময় ঢাকা বেজে উঠেছে। রেডিও শুনতে শুনতে টুক করে বন্ধ হয়ে ফের রেডিওর আওয়াজ ফিরে আসলে রেডিওর লোকেরা বলে ‘যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা দুঃুখিত। ’ রেডিও শুনতে যেয়ে বহুবার একথা শুনেছে। এখন ঝিনু স্বপ্নেও কথাকটি বলতে পারবে।

কোন কষ্ট হবে না। অথচ দেখ কান্ড আজ সারাদিন রেডিও বন্ধ থাকলেও কেউ ও কথাগুলো বলল না। আববু বললেন, -‘ওরা সত্যি কথা বলতে সাহস পাচ্ছেনা। রেডিও কেনও বন্ধ ছিল তা বলতে ভয় পাচ্ছে। ওদের ভয়, যদি জনগণ ক্ষেপে উঠে।

ঢাক গুড় গুড় যাইাই কর না কেন...’ কথার মধ্যে ভাইমনি বলে উঠেন -‘চাট্টি-বাট্টি গোল করতে হবে। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।