আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাঁটে (কাহিনী তিন)

maanush84@yahoo.co.uk

কবি বলিয়াছেন, পথ হারা পাখী কেঁদে মরে একা। শৈশব এবং বাল্যকালে উক্ত বাণী সঙ্গীত রুপে বহুবার শ্রবন করিয়াছি কিন্তু কোন পরিস্থিতীর সম্মুখীন হইয়া কবি উক্ত কাব্য রচনা করিবার প্রয়াস পাইয়াছিলেন তাহা তৎকালে বুঝিতে পারি নাই। জীবনে উক্ত সঙ্গীতের মর্ম প্রথম উপলব্ধি করিয়াছিলাম গ্রামের বাড়ি ভ্রমণকালে। আমার গ্রামের বাড়ি যাইবার একমাত্র সহজ পথ হইতেছে রেল গাড়ী, উহা সহযোগে ভ্রমণ করিলে যে স্থানে নামিতে হয় সেখান হইতে আরো মাইল তিনেক পদব্রজে হন্টন করিলে তবে বাড়ির দেখা মিলে। একদা গ্রামের বাড়ি গিয়াছিলাম ভ্রমণ উদ্দেশ্যে।

বঙ্গ দেশের রেলগাড়ীর সময় জ্ঞান সম্পর্কিত সাম্যক ধারণা বোধ করি সকলেরই আছে। ষ্টেসনে গিয়া পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা বারোটায় আর গিয়া পৌঁছাইলাম রাত আটটায়। চারিদিক শুনশান নিঝঝুম। ষ্টেশনে অবস্থানরত দুই চারিটি প্রাণী স্বীয় বাটিতে ফিরিবার তোড়জোড় চালাইতেছে। প্রায় বছর খানেক পর এদিক পানে আসিয়াছি বিধায় পথ ঘাট ঠিক মতো ঠাহর করিতে পারিতেছি না।

জনৈক ব্যক্তিকে ঠিকানা সুধায়লে সে যেদিক পানে আঙ্গুলি নির্দেশ করিলে সেটি দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত। উহার মধ্য দিয়া সংকীর্ণ আল-পথ ধরিয়া হণ্টন করিলে নাকি সহজেই শর্টকাট মারিয়া লক্ষ্যে পৌঁছাইতে সক্ষম হইব। সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করিয়া হন্টন শুরু করিলাম। হালকা কুয়াশা রহিয়াছে ঠিকই কিন্তু তাহা রুপালি চাঁদের আলোর সৌন্দর্য কে ম্লান করে নাই। রুপালি চাঁদের আলো আর হলদে সরিষা ফুল মিলাইয়া যে অপরুপ দৃশ্যের অবতারনা করিয়াছে তাহা অবলোকন করিয়া মর্মে কিঞ্চিত ভাবেরও উদয় হইল।

আমি কবি নহি, কবি হইলে উক্ত স্থলে নির্ঘাত নোবেল প্রাইজ পাইবার যোগ্য এক খানা কাব্য রচনা করিয়া ফেলিতাম। স্নান ঘরে কিঞ্চিত সঙ্গীত সাধনার অভ্যাস রহিয়াছে, তাহা ছাড়া আসে পাশে কোন প্রকার দ্বিপদ প্রাণী দেখিতেছি না যাহারা আমার সঙ্গীত সাধনায় বিপদের কারণ হইতে পারে। সূতরাং ভাবের অতিসজ্যে এক খানা সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করিলাম। সূর যখন সপ্তমে চড়িয়াছে ঠিক সেই কালে কোথা হইতে এক খানা শৃগাল ডাকিয়া উঠিল। বোধ করি আমার সঙ্গীত শুনিয়া আমাকে উহার স্বগোত্রীয় ভাবিয়াছে।

প্রথম শৃগালের সঙ্গীত শেষ হইতে না হইতেই আশে পাশে অবস্থানরত সকল শৃগাল কোরাসে সঙ্গীত সাধনা শুরু করিল। যাহারা পুস্তক পড়িয়াছে শৃগালের ডাক হুক্কা হুয়া, তাহারা যে কিরুপ ভুল ধারণা অন্তরে লইয়া ধরাধামে বিচরণ করিতেছে, আদি এবং আসল শৃগাল সঙ্গীত শ্রবণ না করা পর্যন্ত উহারা তাহা উপলব্ধি করিতে পারিবে না। রক্ত হিম করা সঙ্গীত শুনিয়া মর্মের সকল ভাব কর্পূরের মতো উবিয়া গেল। ম্যারাথন দৌড়বিদ দের দৌড় বোধ করি অনেকে দেখিয়া থাকিবেন, তাহারা না হাঁটে না দৌড়ায়। হন্টন এবং দৌড়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে কোমর দুলাইয়া যাহা করা হয় উহার নাম কোন অভিধানে পাই নাই।

আমার হন্টন প্রক্রিয়া তখন ঐরুপ হইয়াছে। ইতমধ্যে উপলব্ধি করিলাম আমি একই পথে বিচরণ করিতেছি। সংকীর্ন আল-পথ কোথা হইতে কোথায় গিয়াছে আর আমি কোন পথে যাবো সব তালগোল পাকাইয়া একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা। এদিকে হতচ্ছাড়া শৃগালেরা মজা পাইয়া ক্রমাগত ডাকিয়া যাইতেছে। নবাব সিরাজ উদ্দৌলা সিনেমার একটা বিখ্যাত ডায়লগ মনে আসিল, “উপায় নাই গোলাম হোসেন।

” আমিও নিরুপায় হইয়া আল -পথ ছাড়িয়া সোজা সরিষা ক্ষেতে নামিয়া গেলাম। উদ্দেশ্য সরল; বাঁকা পথে চলিয়া আর কাজ নাই সোজা পথে চলিব তাহা হইলে যদি এ যাত্রা প্রাণ লইয়া ঘরের ছেলে ঘরে ফিরিতে পারি। চক্ষে সর্ষে ফুল দেখিতে দেখিতে আর সারা শরীরে হলদে রেণু মাখিয়া হলুদিয়া পাখী রুপে যখন বাটিতে প্রবেশ করিলাম, শুনিতে পাইলাম রেডিওতে বাজিতেছে, পথহারা পাখী কেঁদে মরে একা...। এতক্ষনে বুঝিলাম, কবি কেন উহা রচনা করিয়াছিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।