আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাধবোধ



খোলা আকাশের নিচে দাড়ালে বুকটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বিশেষ করে রাতের আকাশ। কেমন যেনো নিরব অনুভূতি। মনের ভিতরকার কষ্টগুলো যেনো হাউমাউ করে চিৎকার করে উঠে। তারা বুক ভেদ করে বাইরে বের হয়ে আসার জন্য পাগল হয়ে যায়।

শরীরে শিহরন তৈরী হয়, কালো মেঘের মতো করে মনে কেমন যেনো, কি যেনো জমাট পাকানো শুরু করে। বৃষ্টির অপেক্ষায় যেনো মন হাহাকার করে। কান্নার জন্য চোখের কোণে পানিরা জমাট বেধে ফেলে কিন্তু পারা যায় না। অন্যের কথাতো জানা নেই। শাহেদ পারছে না।

হতাশা, কান্না, কষ্ট সব- সব কিছু আজ তার মনে ভীড় করেছে । কিন্তু সে পারছে না। পারছে না কাঁদতে। তবে কি, তবে কি শর্মীর কথাই ঠিক? শর্মী ওকে বলে গিয়েছিল, তুমি কাঁদবে শাহেদ...একদিন তুমি কাঁদবে.....চিৎকার করে কাঁদতে চাইবে....কিন্তু তুমি পারবে না.....কারণ চিৎকার করে কাঁদতে তোমার লজ্জা হবে। এ যেনো এক অভিশাপ ছিল।

অভিশাপ না হলে কি ঠিক ঠিক কথাটা সত্যি হয়ে যাবে! পুরনো দিনগুলো কেনো আজ এতোগুলো বছর পর শাহেদকে দুমরে মুচড়ে ফেলছে। কেনো সেই দিনগুলো আজ মনে পড়ে যাচ্ছে? সেই প্রথম ভালোবাসার শব্দগুলো, রিকসায় ঘুড়ে বেড়ানো, পেছন থেকে হাত দিয়ে ওর কোমরকে জড়িয়ে ধরা, ওর গায়ের এক অচিন গন্ধ যেনো বাতাসে নাকে এসে লাগছে। চেতনার সমস্ত কিছু যেনো আজ নিস্তব্ধ। আর সেই প্রথম চুমোর ঘটনাটি! যেদিন ওর ঠোঁট স্পর্শ করেছিল শাহেদের ঠোঁটকে। কি দিনটাই না ছিল সেদিন!! প্রচন্ড বৃষ্টি।

শর্মীর ছাদ। ওরা দুজনেই ভিজছিল। আকাশে মেঘের বিকট শব্দ। তখনই আচমকা ভয় পেয়ে শর্মী জড়িয়ে ধরেছিল শাহেদকে। অনেক্ষণ শাহেদের বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল।

আস্তে আস্তে শাহেদ আদর করলো কপালে, তারপর গালে, তারপর স্পর্শ করলো শর্মীর ঠোঁট। শর্মী যেনো আত্মসমর্পণ করলো। সেদিনকার সেই অনুভুতি ভুলবার নয়। শাহেদ আর শর্মী হারিয়ে গিয়েছিল এক অচেনা জগতে। যে জগত ছিল শুধু তাদের দুজনার।

ঠোঁটের উপর ঠোঁট রেখে শক্তকরে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল দীর্ঘক্ষণ। মনে হচ্ছিল, এ পৃথিবীতে আর কিছু চাওয়ার নেই, এখানে কিছুই মুখ্য নয়। শুধু মুখ্য ভালোবাসা, আর কিছুই নয়। সব কিছু যেনো পাওয়া হয়ে গেলো। পৃথিবীর বেচে থাকার সমস্ত অনুভূতি যেনো সেদিনই পাওয়া।

কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো। হঠাৎ কেনো যেনো সমস্ত অনুভূতি ফিকে হয়ে যেতে শুরু করলো। আর থাকা হলো না শর্মীর সাথে। মুক্তির আনন্দে কাটিয়ে দিলো কতগুলো বছর। তবে আজ কেনো সেই অনুভূতিগুলো সাপের মতো তাকে ছোবল মারছে।

আজ কেনো নিজের ভেতরকার সমস্ত কিছুকে মূল্যহীন মনে হচ্ছে? কেনো আজ আয়নার ওপাশের মানুষটি ওকে বলছে, তুই খারাপ, তুই খারাপ একজন মানুষ। একটা মেয়েকে তুই স্পর্শ করেছিস। একটি মেয়ের কতোটা বিশ্বাস থাকলে তার দেহ কোনো ছেলেকে স্পর্শ করতে দেয়। তুই একটি মেয়ের বিশ্বাস নষ্ট করেছিস!! তুই খারাপ মানুষ। বিচলিত শাহেদ কোথায় যাবে ভেবে পায় না।

কার কাছে বলবে তার কষ্টের কথা তাও ভেবে পায় না। এই অভিশপ্ত জীবনে যে অপরাধবোধ নেমে এসেছে তা সে কি করে বোঝাবে অন্যকে। শর্মীর কাছে কি করে মাফ চাইবে? এবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সে। তার সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। একটি চুমোর জন্য অপরাধবোধ, বিশ্বাস হরণের অপরাধবোধ ওকে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।

শাহেদ আবার তাকায় খোলা আকাশের দিকে। বলে ওঠে, মৃত্যুর পর নাকি মানুষ তারা হয়ে যায়? তুমি কি দেখতে পাচ্ছ আমার অপরাধবোধ? তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? সেই অজানা অন্ধকার জগত থেকে অনুভব কি করতে পারো আমার অপরাধবোধকে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।