আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেডিও-টিভি: সুনামগঞ্জ হাওর এলাকার প্রিয় এন্টারটেইনমেন্ট

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

হাইটেক প্রযুক্তির এই যুগে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার লোকজন ট্রানজিস্টার ও টেলিভিশনের মাধ্যমেই দৈনন্দিন বিনোদন উপভোগ করছেন। বিশেষ করে হাওর ও যোগাযোগ বিড়ম্বিত এলাকার গ্রামগুলোতে এখনও এই দুই যন্ত্রের জনপ্রিয়তা ল্য করা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা হলেই গ্রামের বিদগ্ধ লোকজন রেডিওতে বিবিসির সংবাদ শোনেন দল বেধে। বিটিভির সাপ্তাহিক মুভিও দেখেন এভাবেÑ। হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকায় উন্নত বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রযুক্তির ছোয়া না পৌছায় লোকজন বিটিভি ও রেডিওতেই সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করে থাকেন।

এ নিয়ে গ্রাম্য লোকদের অনেকেই সন্তুষ্ট থাকলেও অধিকাংশ লোকই অসন্তুষ্ট। সেকেলে এই বিনোদন বাক্সে ভালো মানের ছবি এবং স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রচারিত না হওয়ায় অধিকাংশ লোকজনই ােভ প্রকাশ করেন। দেখা গেছে হাওর এলাকার প্রতিটি গ্রামের স্বচ্ছল অস্বচ্ছল প্রায় সকল লোকের ঘরেই রয়েছে রেডিও। আর স্বচ্ছল লোকের ঘরে রয়েছে টেলিভিশন। হাওর পাড়ের লোকদেও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এই দুই সহজলভ্য যন্ত্রের মাধ্যমেই এসব অঞ্ছলের লোকজন বিনোদন চাহিদা মেটাচ্ছেন।

কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাটারি দিয়েই তারা তা উপভোগ করছেন। এতে তাদের খরচ পড়ে যাচ্ছে বেশি। তাই তারা হাওর এলাকার প্রত্যেকটি গ্রামে বিদ্যুতায়নের অনুরোধ জানান। গ্লোবাল ভিলেজের এই যুগে যখন বিশ্বের এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন গ্রামে বসে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি তাৎণিক ঘটনা গুলো দেখছে তখন সুনামগঞ্জ জেলা শহরের লোকজনই ভালো করে ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারছেনা। আর হাওর এলাকার লোকজন রেডিও আর টিভির মাধ্যমেই বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখে বিনোদন চাহিদা মেটাচ্ছে, পাশাপাশি খন্ডিতভাবে জাতীয় আন্তর্জাতিক ঘটনার খোজ খবর রাখছে।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় দৈনিক সংবাদপত্র প্রতিদিন পৌছলেও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক সংবাদপত্র পরদিন পৌছে। তাই বাধ্য হয়ে রেডিও টেলিভিশনের সংবাদই শোনতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এখানেও ভালো মানের সংবাদের চেয়ে সরকারের খবরাখবই প্রচারিত হচ্ছে। উপেতি থাকছে সাধারণ মানুষের খবর। সুনামগঞ্জের গ্রাম এলাকার সচেতন লোকজন এখনও রেডিওতে বিবিসির সন্ধ্য নিউজ গুরুত্বসহকারে শোনেন।

যার ভালো ব্রান্ডের রেডিও রয়েছে সন্ধ্যা হলেই গ্রামের সচেতন লোকজন ওই বাড়িতে বিবিসি শোনার জন্য ভীড় জমান। বিশেষ করে নিউজ শোনার প্রবণতা বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার মতা নেয়ার পর বেড়ে গেছে। লোকজন প্রতিদিনকার রাজনৈতিক ঘটনা গুলোর খবরাখবর ও বর্তমানের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী খবর খুব আগ্রহ সহকারে শোনছেন বিবিস নিউজ এর মাধ্যমে। গ্রামের লোকদেও অভিযোগ সরকারি এসব গণমাধ্যম জনগণের পূর্ণাঙ্গ খবর দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। হাওর এলাকার রেডিও-টেলিভিশনে বিনোদন ও নিউজ নির্ভর অনুষ্ঠানও নেটওয়ার্কের কারণে ভালো শোনা যায়না বলে লোকজন জানান।

অনেকে এই দুই মাধ্যমে বেশি করে স্থানীয় স্থানীয় সংবাদ প্রচারের অনুরোধ জানান। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড় জয়পুর গ্রামের গৃহিনী সুনজনারা বেগম (৩০) বলেন, সাধ্য নাই তাই রেডিওই ভরসা। রেডিওতে গান শুনি, খবর শুনি। গ্রামে যাদের টাকা আছে তারার ঘরেই আছে টিভি। আর যাদের টাকা নাই তারা রেডিও শোনে বলে তিনি জানান।

একই গ্রামের মোঃ আব্দুল কাইয়ুম (৫০) বলেন, কারেন্ট না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ব্যাটারি চার্জ করতে উপজেলা শহরে বয়ে নিয়ে চার্জ দিতে হয়। এতে টাকা ও সময় লস হয় বলে তিনি জানান। একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৩৫) বলেন, আমি হাওরে মাছ ধরতে গেলে রেডিও সঙ্গে নেই। রেডিওতে খবর শুনি।

গান শুনি। রেডিওতে স্থানীয় খবর প্রচার করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। পাশাপাশি গ্রাম গুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।