আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুদ নির্ভর বিশ্ব অর্থনীতির ধ্বস O শরিয়া ভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার ।। অর্থপ্রতিষ্ঠানের পরে এবার দেশ দেউলিয়া!

আওরঙ্গজেব

ছবি: (A) নিউইয়র্ক শেয়ার বাজার, (B) নিউইয়র্কে নাসডাক প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে মানুষ এর বাজারের অবস্হা দেখছে, (C) পতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাচ্ছে, (D) প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (আল-কোরআন ৩:১৩০) ভূমিকা: মিডিয়াতে বিশ্ব অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক ধ্বসের কাহিনী নিয়ে প্রায় ফিচার আসছে। সুদ নির্ভর বিশ্বঅর্থনীতির এই বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বে ইসলামিক অর্থনীতি বা শরিয়া ভিত্তিক অর্থনীতির ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মালেশিয়া ও বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি বিশারদরা বলছেন।

আমেরিকা ইউরোপের অর্থপ্রতিষ্ঠান ধ্বসের সংক্ষিপ্ত খবরের পরে আমরা শরিয়া ভিত্তিক অর্থনীতির আশাপ্রদ খবরের দিকে নজর দিব। আমেরিকার বেইল-আউট বিল: বিশ্ব অর্থনীতির কর্ণধার আমেরিকার বড় বড় অর্থপ্রতিষ্ঠান গুলো (যেমন, ওয়াল স্ট্রিট) একের পর এক দেউলিয়া ও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে দেশের সরকার সম্প্রতি বেইল-আউট বিল পাশ করেছেন অর্থনীতি পূনুরুদ্ধারের জন্য। কিন্তু এতে এখনো কোন সাফল্য আসেনি। ইউরোপে ধ্বস: এদিকে দেনার দায়ে দেউলিয়া হতে যাচ্ছে জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্ধকি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হাইপো রিয়েল এস্টেট। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে জার্মানির অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারের উদ্ধার পরিকল্পনার প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।

অবশেষে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল হাইপো রিয়েল এস্টেটকে বাঁচাতে আমেরিকার মতো সরকারী বিনিয়োগ নিয়ে এগুচ্ছেন। এবার দেশ দেউলিয়া! আমেরিকা-ইউরোপের অর্থ মন্দার প্রভাবে বিভিন্ন অর্থপ্রতিষ্ঠানের পরে এবার দেউলিয়া হতে বসেছে ইউরোপের একটি দেশ - আইসল্যান্ড। সুদভিত্তিক ব্যাংকিং খাতে বিশাল উন্নতির ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশ হচ্ছে আইসল্যান্ড! কিন্তু তাদের মুদ্রার মান এখন এক লাফে নেমে অর্ধেকে গিয়ে ঠেকেছে। ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে একের পর এক ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ল্যান্ডসব্যাংক ও গ্রাহকের সাথে সবরকম লেনদেন স্হগিত করেছে।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ব্যাংকটি জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুলোর সুদের হার হ্রাস! তীব্র অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে বিশ্বের প্রধান প্রধান নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, কানাডা, সুইডেন, চীন ও সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশ্চাত্যের অর্থনীতিতে ধ্বসের হাওয়া লাগতে পারে আমাদের বাংলাদেশেও। সেজন্য বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহীদের ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।

জাপানে সুদের হার সর্বনিম্ন: আমেরিকার পরে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জাপানে সুদের হার বিশ্বের সর্বনিম্ন, মাত্র ০.৫ শতাংশ। তাই তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ কমানোর কোন উদ্যোগ নেয়নি। শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতি: খুব হিসাব নিকাশের দরকার নেই। বড় অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার নেই বিষয়টি বুঝার জন্য। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার হ্রাস প্রমাণ করে, সুদহীন ব্যবসা সবচেয়ে বেশি স্হিতিশীল।

বিশ্বব্যাপী শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক প্রভাব বিষয়ক কতিপয় খবর তুলে ধরছি: ১. ইন্টারন্যাশনাল হ্যারাল্ড ট্রিবিউনে উমেশ দেশাইয়েরINVESTING: Islamic finance offers safeguards to investors রিপোর্টে বলা হয়েছে, শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতির স্বচ্ছতা ও শক্ত ভিত এখন বিশ্ব অর্থনীতি ধ্বসে আক্রান্ত বিনিয়োগকারীদের আকর্ষন করছে। ফলে সুদ ভিত্তিক ঋনী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ এক মহা বিপদ সংকেত! বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ইসলামী অর্থনীতি প্রচলিত সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এটা বুঝতে পারেন, কখন একটা অর্থপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হতে পারে। এছাড়া ইসলামী অর্থনীতিতে অর্থপ্রতিষ্ঠানও একজন বিনিয়োগকারী। ফলে সকল বিনিয়োগকারীর সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় যেকোন সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

২. আমিরাত বিজনেসের West eyes Islamic finance market share রিপোর্টে লেখা হয়েছে, পশ্চিমা অর্থপ্রতিষ্ঠান গুলো এখন ক্রমেই শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে। কুয়েতের ফিনান্স হাউস বলছে, ২০১০ সালের মধ্যে শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতির সর্বমোট সম্পদ হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার। ৩. মালেশিয়ার দ্য স্টারের Islamic finance strong despite global credit crisis রিপোর্টে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনীতি ধ্বসের দাগ শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতি এখনও অনুভব করেনি। ব্যাংক নেগারার গভর্ণর মিসেস জেতি আখতার আজিজ এক বিবৃতিতে অনুরূপ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলামী অর্থনীতি সবসময় একটি প্রডাক্টিভ খাতে (প্রজেক্ট) অর্থ বিনিয়োগ করে এবং প্রজেক্ট থেকে উদ্ভূত লাভ-ক্ষতি শেয়ারের কারণে ইসলামী অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বসের আগেই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।

উপসংহার: অতএব এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, বিশ্বের সুদভিত্তিক অর্থনীতির মন্দাভাব শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতিতে মানুষের আস্হার সৃষ্টি করছে। এর ফলে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বিশ্বের মানুষ এরকম অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে রেহাই পাবে। ইসলামী শরিয়া তাই বলছে। হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।

(আল-কোরআন ৩:১৩০) অথচ শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে মানুষ নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে। ... তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ্‌ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। ... (আল-কোরআন ২:২৭৫) এছাড়া এটা আল্লাহর ইচ্ছা যে, সুদকে তিনি ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। ... (আল-কোরআন ২:২৭৬)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।