আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোহা/কাতারের আউলা ঘুরাঘুরিঃ দিন পর্ব

সবকিছুতেই নির্মোক থাকছি, সবকিছুই ইদানীং অর্থহীন মনে হয়; নিজের এই নেতিবাচক প্রবণতায় নিজেই লজ্জিত । :(

বার্লিনে যাবার পথে কাতারে আমাদের ট্রানজিট ছিলো, কিন্তু ভিসা দেবে কিনা সেটা নিশ্চিত ছিলো না। কিন্তু কোনো সমস্যাই হয় নাই, আধঘন্টার মাঝে ভিসা দিয়ে দিলো কোনোরকম ঝামেলা বা প্রশ্ন ছাড়াই। অবশ্য আমরা থাকতে পারবো সর্বোচ্চ্য একদিন, পরদিন বার্লিনের দিকে উড়তে হবে। কাতার এয়ারলাইন্সের ক্রু’দের মাঝে ভারতীয়দের প্রাধান্য দেখেই একটা আন্দাজ দানা বাঁধছিলো, দোহা এয়ারপোর্টএ নেমে ধারণাটা পাকাপোক্ত হলো, কাতার আসলে ভারতীয়দের একটা শস্যভূমিই বটে।

এমনকি নানান জায়গায় ভারতীয়রা এত বেশী যে , ধুমধাম হিন্দিও চলে। এয়ারপোর্টে এরকম একজন আমাকে ভারতীয় ভেবে সুখদুঃখের আলাপ করতে এসেছিলো, বাংলাদেশী শুনে মুমিন নামে একজনকে দেখিয়ে দিলো। মুমিন ভাইয়ের সাথে বেঞ্চিতে বসে নানা আলাপ জুড়লাম। মুন্সিগঞ্জের মানুষ, কাতারে এসেছেন মাত্র মাস ছয়েক। এয়ারপোর্ট এ ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেনান্স এর কাজ করেন।

কাতারের লোকজন ভালোই লাগছে বললেন। শুনেছিলাম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার , বাহরাইন এই দেশগুলো অনেক প্রাগম্যাটিক আর উদার। ধারণাটা কিছুটা পানি পেলো। কলিগদের একজনের শ্বশুর কাতারে থাকেন, কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা। ভাবীও এ যাত্রা আমাদের সাথে আছেন।

তাই দোহায় যাত্রাবিরতি। যোগাযোগ করে রাখা হোটেলে দুপুরের খাবারটা খেয়ে আর একটু গড়িয়ে নিতেই আংকেল (কলিগের শ্বশুর ) চলে এলেন, সাথে দুটো গাড়ির ব্যাবস্থা। এই শুনলাম যে কাতারে পানির লিটার পড়ে দুই কাতারি রিয়ালের ও বেশী (বিয়াল্লিশ টাকা), পেট্রোল ০.৮৫ রিয়াল (ষোল টাকা) আর অকটেন ০.৯০ রিয়াল (আঠারো টাকা)। রাউজানের একজন শুনেছিলাম পানি দিয়ে গাড়ি চালানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন, এই দেশে হলে নির্ঘাত কারাবাস ছিলো কপালে – মূল্যবান সম্পদ পানির অপব্যাবহারের অপরাধে!! কাতারের বিচিত্র সব আর্কিটেকচারের বিল্ডিং দেখতে দেখতে পারস্য উপসাগরের তীরে গেলাম। গাড়ি থেকে নামার পরপরই আবার দৌড়ে গাড়িতে উঠে যাবার ইচ্ছা হলো, এত্তো গরম! চাইরটা এমেরিকান দেখি হাফ-নেংটো হয়ে লাফঝাঁপ দিচ্ছে, আমাদের হাই টাই দিলো।

পরে গাড়ি দেখে বুঝেছিলাম এরা এমেরিকান ফোর্স এর লোক, কাতারে বিশাল এক বিমানঘাঁটি আছে এমেরিকানদের। ইরাকযুদ্ধের বিশাল অংশ নাকি এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত। কাতারের সরকারের মর্জি বেশ মজার। কারণ এরাই আবার আল-জাজিরা নেটওয়ার্ক বানিয়েছে, যেটা প্রায় স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে, বিবিসির মত কাঠামো অনেকটা। দোহায় শুক্র-শনি হচ্ছে ফ্যামিলি ডে, মানে হলো কিছু এলাকা,অবকাশ কেন্দ্র বা মার্কেটে ঢুকতে হলে এইদিনগুলাতে বাচ্চা-কাচ্চা বা মহিলা কেউ সঙ্গে থাকা লাগবে।

আমাদের সংগে ভাবী আছেন, সুতরাং নো চিন্তা ডু ঘোরাঘুরি। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের মত নয়, রাস্তায় প্রচুর মহিলা দেখলাম গাড়ি চালাচ্ছেন। সরকারি অফিস,ব্যাংক, হোটেলগুলোতেও প্রচুর কাতারি, সুদানী-কাতারি মহিলা কর্মী দেখেছিলাম। কার্নেগী-মেলন,কর্ণেল ইউনি’র মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এরা কাতারে নিয়ে এসেছে। ওইখানকার আইনবিভাগের প্রধান ও দেখি এক মহিলা, ডঃ নুরি আল মাহমুদ এইরকম নাম মনে হয়।

ওনারে দেখে আমার সাধ জাগল ওই ইউনিতে আবার আইনে ভর্তি হয়ে যাবার জন্য! আহা! কাতারে গাড়িতে ঘুরছিলাম আর রাস্তায় সবার তীক্ষ নজর, যদি আদ্দেকটা হলেও মানুষ দেখা যায়! যক্ষপুরীর মত লাগছিলো, সো সা গাড়ি চলে কিন্তু রাস্তায় একটা মানুষ ও নাই। আমাদের হোস্টদের একজন, মুসা ভাই ধারণা দিলেন। সাধারণত এখানে সামাজিক জীবন শুরুই হয় সন্ধ্যার পরে। ঘোরাফেরা , আড্ডা, বিনোদন,কেনাকাটা চলে প্রায় রাত একটা-দুটো পর্যন্ত। আমরা গিয়েছিলাম রোজার মাসে, এই পুরো মাসটাই এদের উৎসব।

গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় সবই খোলা। তাই এশিয়ান গেমস স্টেডিয়াম পার হবার পর একটা সাইকেল দেখে (!) সবার সেকি চিৎকার। ছবি তোলার জন্য তাড়াহুড়া শুরু হয়ে গেলো!! দোহায় একটা মার্কেট প্লাস কমন সেন্টার বানিয়েছে , নাম দিয়েছে ভেনিস ইন কাতার। গেলাম। কনসেপ্ট হিসাবে নতুন, ভালোই।

ইনডোর একটা জায়গায় ইউরোপিয়ান আদলে দোকানপাট , রেস্টুরেন্ট। চমৎকার জায়গা সময় কাটানোর জন্য, কিন্তু পরে ইঊরোপে গিয়ে বুঝেছিলাম মিনিয়েচার হিসাবে ওটা ছিলো একটা ব্যার্থ প্রচেষ্টা। আল-জাজিরা নেটওয়ার্কের অফিস পার হয়ে একটা মজার জিনিষ দেখলাম, কাতারিরা বড় কিছু একটা বানাতে হবে এই চিন্তা করে নাকি বিশাল একটা ট্রলি বানিয়েছে , আর নাম ফাটাচ্ছে ‘ওয়ার্লল্ড বিগেস্ট ট্রলি’ হিসাবে!! ওটা দেখে আর আইডিয়াটা চিন্তা করে আমাদের হা হা হো হো হাসি আর থামেই না! অবশেষে বিকালের মরা রোদে তাপ কিছুটা কমে এলে, পারস্য উপসাগরের পাড়ে বসে হাওয়া খেতে খেতে আমাদের দোহার দিন শেষ হলো। রাতের কথা পরে, এম্নিতেই বেশ বড় হয়ে গেছে। কিছু ছবি দিলাম,কিছু আপলোড করা যাচ্ছে না সাইজ বড় হবার কারণে; কিন্তু আফসোস আপাতত ‘ওয়ার্লল্ড বিগেস্ট ট্রলি’ এর বিখ্যাত ছবিটাই দিতে পারলাম না।

হা হা হা... মিশ্রিত আর্কিটেকচার। চোঙা বিল্ডিং। নাচুনে বিল্ডিং। আল জাজিরা। আমাদের বাত্তি জ্বালানোর বিদ্যুৎ নাই, আর এদের ল্যাম্পপোস্ট দেখেন! দাঁত কিড়মিড় করে।

এশিয়ান গেমসের মশাল এই টাওয়ারে জ্বালানো হয়েছিলো। রাত ঘনালো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।