আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের 'ভোরের কাগজ'-এ আমার একটি লেখা

কবিতা ও যোগাযোগ

আজকের 'ভোরের কাগজ'-এ আশির দশকের এক অনালোচতি কবির একটি গ্রন্থ নিয়ে আমার একটি ছোট্ট লেখা রয়েছে। লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম Click This Link ইচ্ছে হলে কেউ পড়তে পারবনে। কিংবা আমিই একসময় খুঁজে নিতে পারব, সেই সুযোগটাই বা কম কী! অগ্রীম শুভেচ্ছা সবাইকে। ভোরের কাগজ : সাময়িকী : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ রেহমান সিদ্দিক : দীর্ঘ এক পথের কবি তপন বাগচী : আশির দশকের এক অনালোচিত কবির নাম রেহমান সিদ্দিক। একটি শুদ্ধ কবিতা না লিখেও অনেক কবি তার সময়ে আলোচিত ও প্রচারিত হয়েছেন।

কিন্ত অনেক শুদ্ধ কবিতা লিখেও রেহমান সিদ্দিক থেকে যান আলোচনায় বাইরে। তবে রেহমান তার শক্তি সম্পর্কে জানেন। আত্মবিশ্বাসী এই কবি তাই সরল স্বীকারোক্তি করেন-- শুধু জানি দীর্ঘ এক পথ আমাকে একাই অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে হবে সুদূরে কোথাও (দীর্ঘ এক পথ, পৃষ্ঠা-৫) দীর্ঘ এই পথে তার সঙ্গী কেউ না থাকুক, কিন্ত সামনে পাঠক থাকলেই চলবে। কবিতার পাঠক যে খুব বেশি থাকে, তেমন না কোনোকালেই। ভারতচন্দ্র কি আমরা এখন আর পাঠ করি? কিন্ত তার অমর উচ্চারণ এখনো বেঁচে আছে।

পাঠকও কবিতার মাপকাঠি না। একালের অনেক কবির একটি কবিতাও হয়তো পাঠযোগ্য নয়। কিন্ত টাকা এবং চেয়ারের গুণে তার কাব্যসমগ্র বের হতে পারে। দলীয় আশীর্বাদ থাকলে ৫৯৯ কপি বিক্রি হয়ে যেতে পারে শিক্ষা মন্ত¿ণালয়ের কাছে। আলোচিত ও স্বীকৃত হলেও যে কবি হিসেবে সফল হয়ে ওঠে তেমনও নয়।

কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া অন্তত ০৫ জনের নাম বলা যাবে, যারা এখনই বিস্মৃত হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে জীবিত কবিও দুএকজনকে পাওয়া যাবে। রেহমান সিদ্দিকের কবিতা পাঠ করার সময়ে এই বিষয়গুলো মনে আসার বিশেষ কোনো কারণ নেই। রেহমান সিদ্দিকের কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে কবি শামসুর রাহমানের হাত দিয়ে। কিন্ত তিনি গ্রন্তিত হন তার একুশ বছর পরে।

এই প্রতীক্ষাও আমাদের কবিদের ক্ষেত্রে বিরল উদাহরণ। প্রস্ত'তিতে তিনি এই যে বেশি সময় নিলেন, এর মূল্য তিনি অবশ্যই পাবেন। কারণ, আমরা ধরে নিতে পারি যে, এই সময়ে তিনি আরো প্রাজ্ঞ হয়েছেন, আরো শীলিত হয়েছেন। আমরা দেখতে পাই যে, কবিতার প্রতিষ্ঠিত প্রকরণকে তিনি অমান্য করেননি। বিশেষ করে ছন্দকে তিনি অঙ্গীকার করেছেন অনেক কবিতায়।

অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত 'অভিশাপ', 'বেদে', 'একাকী খুঁড়ছি অন্ধকার', 'মনমনুয়ার দেশ' প্রভৃতি চমৎকার কবিতা। 'কবর খোঁড়ার গান', 'শস্যের ছেলে' প্রভৃতি কবিতা মাত্রাবৃত্তে রচিত। তবে রেহমান সিদ্দিক তার প্রথম কাব্য 'দীর্ঘ এক পথ'-এ বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন স্বরবৃত্তে। এই ছন্দের হালকা চালের ভেতরে তিনি সফলভাবে জুড়ে দিতে পেরেছেন কবিতার গাম্ভীর্যকে। 'নিবেদন', 'চাই পেতেছি' কবিতাগুলো তার প্রমাণ।

যেমন-- গহীন গাঙে চাঁই পেতেছি অপর বেলায় লালন শাহের তন্ত্রে বোনা আনকোরা চাঁই আটকাবে কি চন্দ্রমাছের রূপের ঝিলিক? (চাঁই পেতেছি, পৃষ্ঠা-৪৩) বাউলতত্ত্বের বিষয় নিয়ে লেখা এই কবিতা পড়লে এর ছন্দের হালকা চাল মনে আসার সুযোগ থাকে না। কারণ কবিতার ভাব গভীর শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রতীক ও রূপক। লালন-দর্শন তথা বাউল দর্শকের রূপায়ণ আমরা প্রত্যক্ষ করি রেহমান সিদ্দিকের কবিতায়। 'উড়াল', 'চাঁই পেতেছি', 'বাউলের গান', 'নির্বাণের দেশ', 'মনমনুয়ার দেশ', 'রূপ দেখা কঠিন ব্যাপার' প্রভৃতি কবিতায় রেহমানের বাউলিয়া ও সহজিয়া জীবন দর্শনের লোকায়ত চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাউলশ্রেষ্ঠ লালন শাহ এবং বাউল পদকর্তা মহিন শাহের নাম সরাসরি উঠে এসেছে তার কবিতায়-- খিলকায় ভর দিয়ে উড়ে যায় মহিন বাউল মৃত্তিকায় একটিও দানা নেই পড়ে নিজেকেই খুঁটে খেতে খেতে মরে গেছে ক্ষুধা একদিন (উড়াল, পৃষ্ঠা-৩৯) লোকায়ত দর্শনকে আধুনিক কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপন করে রেহমান সিদ্দিক তার নিজের কাব্যদর্শনকেও প্রকাশ করলেন।

উত্তরাধুনিকতা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, রেহমান সিদ্দিক তাতে যোগ, দেননি, তবে লিখে দেখালেন নিজের ধারণাকে। উত্তরাধুনিক ধারায় কোনো আঙ্গিক নির্ধারণ করা হয়নি, বিষয় ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কেবল কর্পচানি চলছে। রেহমান সিদ্দিকের বিষয় উত্তরাধুনিক বলে তার কবিতাকে কেউ উত্তরাধুনিক বলতে চাইলে ঠেকায় কে? একটি গ্রন্তে একজন কবিকে মাপার সুযোগ নেই। তবু কিছু প্রবণতা চিহ্নিত করা যেতে পারে। রেহমান সিদ্দিকের কবিতায়-- ০১. ছন্দের শুদ্ধ প্রয়োগের চেষ্টা রয়েছে; ০২. লোকায়ত জীবন চেতনার প্রতিফলন রয়েছে; ০৩. অতিকথনের চেষ্টা নেই; ০৪. শব্দ প্রয়োগে জীবনমুখী; ০৫. চমকসৃষ্টির অপচেষ্টা নেই; ০৬. সমগ্র চিত্র অংকনের সাধনা আছে।

কবি যেমন বলেন 'মগ্ন হও সুন্দরের ধ্যানে/দেহের কঠিন মন্ত্র শুদ্ধরূপে পাঠ করো মুনি/খুলে যাবে তৃতীয় দরজা/পৌঁ-ছে যাবে নির্বাণের দেশে। ' তেমনি আমরাও রেহমান সিদ্দিকের তৃতীয় দরোজা খুলে যাওয়ায় অপেক্ষা করছি। আশির দশকে যারা মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে ছিলেন ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে অনেকের নাম। আবার কেউ কেউ উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছেন। রেহমান সিদ্দিক শেষোক্তদের দলে।

বাংলাদেশের কবিতায় শুদ্ধতাবাদী কবিদের দলে রেহমান সিদ্দিকের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তার কবিতা আমার ভালো লেগেছে। আমার মতো অনেকেরই ভালো লাগবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।