আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় বাপের পোলায় খায়!!!

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
বড় বাপের পোলায় খায়। কি যে খায় নিজের চোখে না দেথলে তা বিশ্বাস করতাম না! গত পরশু ঢাকার চক বাজারে ইফতারি কিনতে গেছিলাম। ইফতারি খাওয়া ছাড়ান দিসি বহু আগে। তেল মশলার এই ভাজা পোড়া আর ঘোড়ার খাদ্য ছোলা বুট আমার মোটেও মুখে রোচে না।

একবার এক শাহী হালিমের মাটির খোড়ারর ভেতর কিং সাইজ এক সেদ্ধ তেলা পোকা দেখে পাতলা হাগা সদৃশ্য ঐ জিনিসও খাওয়া বাদ দিসি সেই নূহ নবীর আমল থেকে। প্রশ্ন হইতে পারে কোন দুঃখে তাইলে ইফতারি কিনতে আমি গত পরশু চকে গেছিলাম! হ্যা চকে আমারে যাইতে হইছিল ঠেকায় পইড়া। এখন চকে যাওয়ার কারনটা আগে বাতলামু নাকি চকে গিয়া কেন চেতলাম ওই কাহিনি আগে বয়ান করমু বুইঝা উঠতে পারতাছি না! প্যাক কাদা পাড়াইয়া ইফতারি কিনতে চকে নামতেই আমার বেবী খালাত ভাই বইলা উঠল, ভাইয়া পকেট কইলাম সাবধান! জীবনে প্রথম এমন অভিজ্ঞতা। আগে কখনো চকে ইফতারি কিনতে আসার বদ কিসমত হয় নাই। একে বারে গরুর হাটের মত বেহাল অবস্থা।

একটু পর পরই দোকানি হাক ছাড়ছে, এই যে নবাবী খানা/ এই যে বড় বাপের পোলায় খায়/ দাম হুইনা মুরগীর মত লৌড়ায় ক্যা! আমি প্যাক কাদা থেকে জিন্স ও পকেট সামলাচ্ছি আর বেবী ব্রাদার কে অসহায়ের মত ফলো করছি। ভাই চাঁন আমার মহা সমারোহে ইফতারি কেনায় ব্যাস্ত। চকে নানান আজগুবি পদের ইফতারির সমাহার। আসমানের নিচে ভেড়ার রানের রোষ্ট দাম বেশী নয় ফার্মের মুরগী সাইজের এক খান ঠ্যাং তিনশ ট্যাকা। তার পর রইছে হইলদা হইলদা মশলায় ভেজানো আস্ত মুরগ।

কাবাব বা রোষ্ট ফোষ্ট কিছু একটা বলে হয়ত সেই চীজ কে। একদম খোলা আসমানের নিচে উদাম। সাথে রয়েছে দোকানির অপরিসিম হাতাহাতি! এ্যত্তো বর্ণনা দিতে পারুম না কেবল আমার চাঁন সওদাগর কি কি ইফতারি সওদা করল তাই বর্ননা কইরা আসল কথাটা বলে ফেলি। কেনা হইল আড়াইশ টাকা কেজির সুতি কাবাব, একশ পচাত্তর টাকার একটা বিগ সাইজ জিলাপি, দেড়শো টাকার ১৫ পিস দই বড়া, একশত টাকার ঘুগনি না ফুগনি আর ছোলা/পেয়াজু/মুড়ি/সালাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, মুক্ত দুই হাতে সমানে কচলাকচলি করে বিক্রি হচ্ছে এই সব মুখরোচক(!) খানা খাদ্য।

দোকান্দারের সুতিকাবাব কাটা ও ছুড়ে ছুড়ে পাল্লার মধ্যে ফেলা দেখে উল্টে উল্টে বমি আসছিল। এই খাদ্য মানুষ জেনে বুঝে কেম্নে খায়! পরশু শুটিং শেষে ক্যামেরা সরঞ্জাম রাখতে বেবী ব্রাদার যখন আমার সঙ্গে আমার আস্তানায় এল তখন আবদার করে বসল, চলেন ভাইয়া শাহাবাগ থেকে ঘুইরা আসি। ভাল লাগছিল না তবুও ওর মুখের দিকে চেয়ে না করতে পারি নাই। খালাত ভাইটার দিকে তাকালে কুড়ি বছর আগের নিজের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে পাবলিক লাইব্রেরীর নান্নুর ক্যান্টিনের অদ্ভুত আলুর চপ এর কথা! মোল্লা চাচার হাতের বানানো চা এর কথা মনে পড়ে! স্বৈরশাষনের সেই পচনধরা সময়ে শহরের কোথাও নিজের কোন ভবিষ্যৎ খুজে না পাওয়ার কথা মনে পড়ে! চারুকলার পুকুর পাড়ের ওরিয়েন্টাল ডিপার্টমেন্টের সামনের দুই বেঞ্চিতে কাজিনের কয়েক গন্ডা বন্ধুবান্ধবী বসে আছে তাদের প্রিয় বন্ধুটিকে হ্যাপি বার্থ ডে বলার জন্য।

কেবল তখনই বুঝলাম দিনটি আদরের ভাইটির জন্মদিন ছিল। বিশ একুশ বছর বয়সী এক দল কচি প্রাণ কলকল করে বলছে, অই দোস্ত জন্মদিনে চকের ইফতারি খাওয়াবা না? বন্ধুটি লাজুক লাজুক হাসে আর কায়দা করে বড় ভাইকে বলে, ভাইয়া চলেন আপ্নেরে একটা আজব যায়গা ঘুরাইয়া আনি। চকের ইফতারি বাজারে গেছিলেন কখনো আপ্নি? আমি বলি, না যাই নাই কখনো। কুড়ি বছর আগে এমন একটা বড় ভাই আমার পাশে ছিল না যে কিনা বলতে পারত, চল মিঞা চকে যাই ইফতারি লইয়া আসি আজকে পার্টি হবে এখানেই। সেই দুঃখ মনে হল আমার।

আমি রাজি হলাম বললাম, চল যাই... সাথে ক্যামেরা না থাকায় নেট সার্চ কইরা এপির জন্য ফটোগ্রাফার পাভেল রহমানের গত বছর তোলা চকবাজারের ইফতারি বাজারের এই ছবিটি ব্যাবহার করলাম।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।