আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত-শিবিরের এমন প্রকাশ্য সন্ত্রাস-তা-ব আর কোন মুসলিমপ্রধান দেশেও কি সম্ভব?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ব্যাপকভাবে এবং প্রকাশ্যেই শুরু হয় গত নবেম্বরে। তাদের টার্গেট মূলত পুলিশ, র‌্যাব, বাস, টেম্পো, গাড়ি এবং নিরীহ পথচারী। তখন থেকেই ভাবছি, এমন সন্ত্রাস দুনিয়ার আর কোন দেশে কি সম্ভব? আমার এই উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা চরমে পৌঁছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে জামায়াত-শিবির আহূত হরতালে আহত নিহত মানুষগুলোর ছবি দেখে, তাদের ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ব্যাপকতা দেখে। বাংলাদেশের প্রায় সব ছোট-বড় শহরে তারা হামলা চালিয়েছে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে।

আমার বার বার মনে পড়ছিল, এমন হামলা হয়েছিল ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৬৩টিতে, বিএনপি-জামায়াতের আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে। প্রায় একই সময় সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ৫০০ বোমা হামলা। তখন তারা হামলা চালিয়েছিল পরিচয় গোপন রেখে; হামলা করেই তারা পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই হামলা চালাচ্ছে। মানে, তাদের ঔদ্ধত্য বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে, তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এখন আর রাখঢাক নেই প্রকাশ্যেই তারা দাবি তুলেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে তাদের নেতাদের চলমান বিচার বন্ধ করতে হবে; একাত্তরের ঘাতকদের মুক্তি দিতে হবে। আর এই সন্ত্রাসকে বাতাস দিচ্ছেন মোহ্তারেমা খালেদা জিয়া। দিচ্ছেন কখনও প্রকাশ্যে কখনও কথার মারপ্যাঁচে। তাঁর এমন অবস্থানের কারণ কিছুটা বোধগম্য : তাঁর এক শীর্ষ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং তাঁর স্বামী জেনারেল জিয়াউর রহমানের এক মন্ত্রী ও তাঁর দল বিএনপির একনেতা আবদুল আলীমদের বিরুদ্ধেও বিচার চলছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তারাও বিচারাধীন আসামি।

মোহ্তারেমা এক দারুণ সঙ্কটে এখন। জামায়াতের পক্ষে তাঁর এমন প্রকাশ্য অবস্থানকে নিন্দা জানাচ্ছে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। তিনি দিন দিন জামায়াতের মধ্যেই কি বিলীন হয়ে যাবেন? অন্যদিকে জামায়াতের যে কয়েক পার্সেন্ট সমর্থন বাংলাদেশে আছে, সেই সমর্থন ছাড়া, তার দাবি মতো নির্দলীয়-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তিনি কি ক্ষমতার ধারেকাছেও যেতে পারবেন? যে ভারতকে পক্ষে রাখার জন্য তিনি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই ভারতও প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেÑ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোন শক্তিকে তারা সমর্থন দেবে না। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু’টিতে এই অভিযুক্ত আসামিদের সুষ্ঠু বিচারের পক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোরও প্রকাশ্য অবস্থান মোহতারেমার সঙ্কটকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। তিনি এখন বেপরোয়া।

তিনি বোধ হয় এখন বোধশক্তিহীন। তাই তো তিনি বা তাঁর দল এখনও বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশে এতদিনেও কোনই প্রতিক্রিয়া জানাননি। তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি যখন বঙ্গবন্ধুর দ-প্রাপ্ত আসামিদের কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়, তখনও। ॥ দুই ॥ ইসলামী সম্মেলন সংস্থার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৭। মুসলমানপ্রধান দেশগুলো এই সংস্থাতে তো আছেই; আছে পশ্চিম আফ্রিকার কতগুলো দেশ, যেখানে মুসলমান জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়।

এই দেশগুলোর কয়েকটি হচ্ছে নাইজিরিয়া, মোজাম্বিক, আইভরিকোস্ট, ক্যামেরুন। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশÑতিনটি বৃহত্তম সদস্য দেশ জনসংখ্যার দিক থেকে। গত নবেম্বর থেকেই ভাবছি, এই ৫৭টি দেশের কোন একটিতেও কি বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের এমন সন্ত্রাস, তা-ব সম্ভব হতো? সম্ভব হবে কি সৌদি আরব, বাহরাইন, আমিরাত, কুয়েত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কোন দেশে? যে মিসর নামের দেশটিতে জামায়াতে ইসলামের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর জনক ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ (ইখওয়ানুল মুসলিমুন)-এর জন্ম সেই মিসরে এখন কি হচ্ছে? মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সক্রিয় নেতা থাকলেও এই পার্টির নমিনেশনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেননি গত বছর, কারণ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নিষিদ্ধ ছিল তখন। তাই নতুন এক রাজনৈতিক দল “ফ্রিডম এ্যান্ড জাস্টিস” নামের রাজনৈতিক দলের আড়ালে মোহাম্মদ মুরসিকে প্রার্থী হতে হয়। আমাদের দেশেও আমরা তা দেখেছি ৬০-এর দশকের ইসলামী ছাত্রসংঘ এখন ইসলামী ছাত্রশিবির।

বঙ্গবন্ধুর আমলে জামায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল; জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলাম কিছুদিন, মনে পড়ে, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির নামের আড়ালে তৎপরতা-অপতৎপরতা চালিয়েছে। তারপর এই জেনারেলের আমলেই গোলাম আযম এবং জামায়াতের আগমন। ১৯২৮ সালে হাসান আল বান্না নামের এক মিসরীয় ইসমাইলিয়া শহরে “মুসলিম ব্রাদারহুড” নামের এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই “মুসলিম ব্রাদারহুড” এর নীতি-আদর্শে দুনিয়ার বিভিন্ন, মূলত মুসলমানপ্রধান দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। ১৯৪১ সালে মাওলানা মওদুদী লাহোরে প্রতিষ্ঠা করেন জামাত-ই-ইসলামী, ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ এর অনুকরণে।

বাহরাইনে এর নাম ‘আল মেনবার ইসলামিক সোসাইটি’, জর্দানে ‘ইসলামিক একশন পার্টি’। কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এককালে যেমন দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর এবং সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল যেমন দুনিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টিগুলোর কার্যকলাপ, প্রোগ্রাম সমন্বয়, তদারকি করত, মুসলিম ব্রাদারহুডেরও এমন একটি ভূমিকা ছিল। কিন্তু ঘোরতরভাবে সাম্প্রদায়িক এই ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ পছন্দ করে না ফিলিস্তিনীদের ফাতাহ সংগঠনটিকে বা “প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন” পিএলওকে। কারণ, ফাতাহ এবং পিএলও সেক্যুলার, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছরের মধ্যে এই সংগঠনটির সন্ত্রাসী চরিত্র প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৪৮ সালে মিসরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আননকশী পাশাকে হত্যার অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। প্রতিশোধে হত্যা করা হয় ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নাকেও, ১৯৪৯ সালে। মিসরের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের জনক জামাল নাসেরকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে এই দলটি, ১৯৫৪ সালে। নাসেরের বিরুদ্ধে এমন আর এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার হয় ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর আর এক শীর্ষ নেতা এবং চিন্তাবিদ সাঈয়েদ কুতুবের। বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তার ফাঁসি হয় ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।

এই প্রসঙ্গে পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বিভাগ-পূর্ব ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীকেও ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল লাহোরের একটি আদালত, ১৯৫৩ সালে, আহমদীয়াদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার উস্কানি দেয়ার অপরাধে। কিন্তু পরে পাকিস্তানের তৎকালীন গবর্নর জেনারেল খাজা নাজিমউদ্দিন তাকে মাফ করে দেন। কিন্তু মাফ করেননি জামাল নাসের সাঈয়েদ কুতুবকে। ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ এবং বিভিন্ন দেশে তার ছায়াদলগুলো সংখ্যালঘুদের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে না মহিলাদের সম্মান দিতেও। সাঈয়েদ কুতুব আমেরিকান তরুণীদের কি ভাষায় বর্ণনা করেছেন নিচের উদ্ধৃত প্যারাগ্রাফে তা দেখা যেতে পারে `The American girl is well acquainted with her body seductive capacity. She knows it lies in the face and in her expressive eyes and thirsty lips. She knows seductiveness lies in round breasts, the full buttocks and in the shapely thighs, sleek legs and she shows all these and does not hide it." একজন তরুণীর শরীরের এমন ‘লুরিড’ বর্ণনা বোধ হয় দুনিয়ার ‘মশহুর’ সেক্স ম্যাগাজিন ‘প্লে বয়’ও দিতে পারবে না।

মহিলাদের প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুডের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে এই বর্ণনায়। মুসলিম ব্রাদারহুড তথা বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির একই, শুধু ‘সেক্স অবজেক্ট’-এর দৃষ্টিতেই তারা মহিলাদের দেখে থাকে। আমাদের দেশের “ফিল দি রিচ” ব্যবসায়ী শিল্পপতি, এবং গামের্ন্টসের অমানুষ মালিকদের বোঝা উচিত, ‘শিবির ক্ষমতায় গেলে তাদের মা-বোনদেরও এই নোংরা দৃষ্টিতেই দেখবে। ॥ তিন ॥ মিসরের ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীরও বাবা। এই মুসলিম ব্রাদারহুডের এক শীর্ষ নেতা, এখন মিসরের প্রেসিডেন্ট, মোহাম্মদ মুরসি গত সপ্তাহে মিসরীয়দের বিক্ষোভ দমনে, পোর্ট সাঈদ, পোর্ট সুয়েজ এবং ইসমাইলিয়া শহর তিনটিতে ‘কারফিউ’ও জারি করেছেন; তার আগে পুলিশের গুলিতে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ৩৫ মিসরীয় নিহত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং কারফিউ জারির তাৎক্ষণিক কারণ পোর্ট সাঈদ শহরের ফুটবল দল ‘আল মাসরী’র ২২ সমর্থককে মিসরের একটি আদালত গত সাপ্তাহে ফাঁসির আদেশ দেয়। তাদের অপরাধ, এক বছর আগে স্থানীয় এই ফুটবল দল “আল মাসরী” এবং কায়রোর ফুটবল দল ‘আল-আহলী’র মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচ শেষে দাঙ্গা, সংঘর্ষ এবং পায়ে চাপা পড়ে ৭৩ জনের প্রাণহানি। দ-প্রাপ্তদের সকলেই পোর্ট সাঈদের মানুষ। তারা এখানকার এক জেলে বন্দী। তাদের ছাড়িয়ে আনতে স্থানীয় জনতা জেলে হামলা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রেসিডেন্ট মুরসির ওপরে উল্লিখিত কঠোর সব ব্যবস্থা। তিনি তখন জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে জরুরী অবস্থাও ঘোষণা করেন। মিসরের জামায়াতী সরকার পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়। কিন্তু বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাস চালাচ্ছে প্রকাশ্যে; পেট্রোল বোমা হাতে তারা শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের তাড়া করে, তারা ঘরবাড়ি, বাসে-ট্রাকে, রিকশায় আগুন দেয়। তারা মানুষ মারে।

মিসরে জামায়াতী সরকার বিক্ষোভ দমনে যা করছে, তা জামায়াতী সন্ত্রাসীদের কি জানা নেই? প্রেসিডেন্ট মুরসীর প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের ওপর প্রয়োগ করলে এতদিন অনেক জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে মারা পড়ত। ॥ চার ॥ সৌদি আরবের দীর্ঘ তিরিশ বছরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম প্রিন্স নায়েফ এই মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে বলেছেন, ‘ঞযব ংড়ঁৎবপ ড়ভ ধষষ ঢ়ৎড়নষবসং রহ ঃযব ষংষধসরপ ড়িৎষফ.’ (ইসলামী দুনিয়ার সকল সমস্যার উৎস হচ্ছে এই মুসলিম ব্রাদারহুড)। এই মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে তার আরও কিছু কঠোর কথাবার্তা আছে। কঠোর কথাবার্তা আছে ওমানের শাসক সুলতান কাবুসেরও। বস্তুত যেখানেই মুসলিম ব্রাদারহুডের ছায়া গিয়েছে সেখানেই ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস হয়েছে।

বাংলাদেশেও তা এখন নোংরাভাবেই আমরা দেখছি। ইসলামী সম্মেলন সংস্থাও ১৯৯৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিজমকে’ নিচের উদ্ধৃতিতে সংজ্ঞায়িত করেছে : "An act of violence arrived out with the aim of, among other things, imperiling peoples honor, occupying or seizing Public Or Private property Or threatening the stability, territorial integrity, political unity Or sovereignty Of a state" ঘোষণাটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ওপর হলেও, কোন দেশের ভেতরেও যদি কোন সংগঠন সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে, তার সমর্থন কেউ কোথাও করবে না। জামায়াতের সন্ত্রাসও দুনিয়ার সকল সচেতন মহল নিন্দা করবে। কারণ গণতন্ত্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সরাসরি সাংঘর্ষিক সম্পর্ক। পাকিস্তানের এবং বাংলাদেশের মিলিটারি শাসকদের সাথে জামাতের ঘনিষ্ঠতা আমরা বার বার লক্ষ্য করেছি।

জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মিথ্যাকে কেমন আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে তার উদাহরণ দেখলাম গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিবিসি বাংলার খবরে। জামায়াতের এক নেতা সফিকুল ইসলাম মাসুদ বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে বলছিলেন, জামায়াত-শিবিরের কেউ কোন বাস-ট্রাকে বা কোথাও আগুন দেয় না। আগুন দেয় সরকারের লোকজন, মানুষজনের কাছে জামায়াত-শিবিরকে হেয় করতে; জামায়াত-শিবিরের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে। ইসলাম ও রসুলের (স.) নামে এরা রাজনীতি করে, দেশে শরিয়াহ শাসন তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ নির্জলা মিথ্যা বলতে এদের এতটুকু লজ্জা, সঙ্কোচ, শরমবোধ নেই।

সেই শৈশবেই তো মক্তবে আমাদের হুজুর শিক্ষা দিয়েছিলেন, ইসলামে মিথ্যা বলা মহাপাপ। মানুষ টিভিতে দেখে জামায়াত-শিবির পুলিশকে মারধর করছে, বাসে আগুন-বোমা ছুড়ছে, রিকশা উল্টে দিচ্ছে, বাস থেকে ড্রাইভারকে নামিয়ে চারদিক থেকে কিল-ঘুষি মারছে এর সবই নাকি সরকারের এজেন্টদের কাজ। আমাদের মহানবী (স.) সত্যবাদী ছিলেন বলে তাঁকে ‘আল-আমিন’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। আর তাঁর তথাকথিত এই অনুসারীরা ইসলাম এবং সুন্নাহকে কেমন অপবিত্র করে চলেছে, কোন রকমের শরম বা অপরাধবোধ ছাড়া! আজকের শেষ কথাটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক নামে স্বঘোষিত টিভি ‘চ্যানেল ৭১-এ পর্যন্ত এই জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের শিবির ‘কর্মী’ হিসেবেই বর্ণনা করা হচ্ছে, তাদের “শিবির সন্ত্রাসী” হিসাব বর্ণনা করা হচ্ছে না।

তাদের প্রকাশ্য সন্ত্রাসকে আড়াল করে তাদের মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা আমরা উদ্বেগের সঙ্গেই লক্ষ্য করিছ। বস্তুত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাশেম আলীর ‘দিগন্ত টেলিভিশন’ এবং এই ‘চ্যানেল ৭১’ এই সন্ত্রাসীদের একইভাবেই “শিবির কর্মী” হিসাবে বর্ণনা করে চলেছে। ‘চ্যানেল ৭১’ কি আসলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে? বিএনপি-জামায়াতীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য, নাকি নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে? এমন সন্ত্রাস যে আর কোন দেশেই, রাজতন্ত্র-গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র কোথাও সম্ভব নয় এই বিষয়টা চ্যানেল ৭১-এর ‘টকশো’ বা অন্য কোন আলোচনায় আসেনি কেন? ইসলামী ঐক্য জোটের একনেতা, জামায়াতীদের এক ‘টেরর’ মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে এখন পর্যন্ত চ্যানেল ৭১-এর কোন টক শো বা আলোচনা অনুষ্ঠানে দেখছি না কেন? জামায়াত-শিবিরকে এক্সপোজ উন্মোচন করার এমন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা আর কোন বাংলাদেশী ধর্মীয় নেতার মধ্যে দেখিনি। এমন চ্যানেলগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন। এই আলোচনা পরে আর একদিন।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।