আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

~প্রসঙ্গ: গানের কলি~

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
একটা সময় শুধু অন্যদের শোনা গান শুনতাম। ছোটবেলায় খুব অবাক লাগত যখন দেখতাম শুধু গান শুনেই অন্যরা বলতে পারছে সেটা আশার গান নাকি লতার, রফির গান নাকি কিশোরের। আমি পার্থক্য বুঝতাম না স্বরের। একটু বড় হবার পরে খেয়াল করলাম গান শুনে আমি বলতে পারি গায়ক বা গায়িকা কে। তারপর অনেকদিন ধরেই বুঝতাম কিছু মানুষ গানের গলা নিয়ে জন্ম হয় এবং তারাই গান গাইতে পারে।

নিজেকে কোন বিশেষ গানের জন্য যে রেওয়াজ করে অনেক অনেক দিন ধরে তৈরি করতে হয় তা ভাবতে পারতাম না। ভাবতাম যারা গান গায় তারা নিজেদের ভাল লাগে বলে প্রতিদিন রেওয়াজ করেন। কিছু কিছু গানকে খুব সহজ মনে করতাম। জানতাম সেগুলো যে কেউ গাইতে পারে। যেমন আমাদের অতি পরিচিত “সাধের লাউ” গানটি।

গানের মাঝে শব্দের উচ্চারন, টান ইত্যাদির ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝলাম আজকালের টিভিতে দেখানো গানের প্রতিযোগিতার (বাংলাদেশের ক্লোজাপ, ইন্ডিয়ার ভয়েস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান আইডল) অনুষ্ঠান গুলোতে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশি একটা মেয়ে কলকাতার এরকম একটা টিভি অনুষ্ঠানে গাইছিল। গানটা ছিল “সাধের লাউ বানাইল আমায় বৈরাগী”। বিচারক ছিলেন কুমার শানু, রুনা লায়লা। গানটা মেয়েটা ভালই গাইল কিন্তু কিছু একটা নাই বলে মনে হচ্ছিল।

কুমার শানু বললেন, গানটার সব ঠিক আছে শুধু গানের শক্তিটাই নাই। তিনি রূনা লায়লাকে অনুরোধ করলেন গাইবার জন্য কয়েকটা লাইন। রুনা লায়লার কন্ঠে শুনবার পরেই বুঝলাম “ওস্তাদের গান” কাকে বলে। এই রকমই এক অনুষ্ঠানে এক বিচারক বলেছিলেন গানের কোন ভাষা নাই। শ্রোতা শুনবে এবং তার ভাল লাগতে হবে।

গানের কথা বোঝা যাক আর না যাক। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একটা সাক্ষ্যাতকার দেখেছিলাম এনটিভির এক অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকাতে এক অনুষ্ঠানের উনি গান গাইছিলেন। গানটি ছিল “সহে না যতনা” রবীন্দ্রসংগীতটি। তা গান শেষ করবার পরে একজন বিদেশী মহিলা বন্যাকে শুধালেন, “তুমি কি কোন দুঃখের গান গাইছিলে, আমার চোখে পানি চলে আসল”।

আসলে একেই বলে হয়ত গানের ভাষা এবং আসল শিল্পীর গান। ইদানিং রিমিক্সের যুগ চলছে। ভারতের মত আমাদের দেশেও এর হাওয়া বইছে। এই রিমিক্স গুলোতে শুধু মিউজিকের আধুনিকতাই থাকে, গানের মিস্টি ভাবটা পাওয়া যায় না। আসলে গানের মূল শক্তি তার গায়ক/গায়িকার মাঝে।

প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ, টান দেওয়া। কারো উচ্চ টানে গাওয়া অংশ হৃদয় নাঁড়িয়ে দেয় তো কারোটা চিৎকার বলে মনে হয়। জেমসের গান গুলো কিন্তু চিৎকার মনে হয় না, বোঝা যায় গায়কের বুকের গভীর হতে প্রতিটা শব্দ বেরিয়ে আসছে। ইন্ডিয়ার ঐ গানের অনুষ্ঠান গুলোতে অনেকেই জেমসের গান গাইবার চেষ্টা করে কিন্তু তার মাঝে সেই অনুভব থাকে না। একই গানের দুইটা ভার্সন দিলাম, শুনে দেখুন।

প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি টার্ন খেয়াল করুন। আকাশ পাতাল পার্থক্য, অন্তত আমার কাছে। গানটা নজরুলের “শুকনো পাতার নূপুর পায়ে গানটি”। ফাতেমাতুজ্জোহরার গাওয়া গানটিতে অন্য ভাষায় (খুব সম্ভব আরবী বা ফার্সি) কিছু অংশ আছে। বুঝি নাই কিন্তু ভাল লাগল।

ফাতেমতুজ্জোহরার কন্ঠে মিলার গাওয়া রিমিক্স সাথে গানের কথাও দিলাম শুকনো পাতার নূঁপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায় জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি ঢেউ তুলে সে যায়। । দীঘির বুকে শতদল দোলে ঝরায়ে বকুল চাপার কলি চঞ্চল ঝরণার জলছল ছলি মাঠের পথে যে ধায়। । জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি ঢেউ তুলে সে যায়।

। বনফুল আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া আলু থালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া পাগলিনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া ধুলি ধূসর পায়। । জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি ঢেউ তুলে সে যায়। ।

ইরাণী বালিকা যেন মোর চারিণী পল্লির প্রান্তর বন মন হারিণি হাসে ধেঁয়ে সহশা গৈরিক বরণে বালুকার উর্ণি গায়। জলতরঙ্গে ঝিলি মিলিঝিলিমিলি ঢেউ তুলে সে যায়। । শুকনো পাতার নূঁপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায় জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি ঢেউ তুলে সে যায়। ।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।