আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

|| নিশীথের আশ্রয় ||

আমি পার্থিব বাস্তবতায় অস্থির, অপার্থিব স্বপ্নপায়ী কেউ একজন . . .
*** এবারের পহেলা বৈশাখের সকালটায় বাইশের অনিন্দিতার প্রথম শাড়ি পড়ার উৎসবটাই দেখার মতো হয়ে উঠল ..."মা! আমার বেলী ফুলের মালাটা কোথায় রাখলাম ?? এখানেই তো রেখেছিলাম! মা এ্যাই মাআআআআ !!!" ... ডব্লিউ.এইচ.ও-র চিকিৎসক রুখসানা আহমেদ মেয়ের চিৎকার শুনে সব কাজ ফেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলেন। "আগেই বলেছি, শাড়ি পর শাড়ি পর, একদিনের বাঙালী হয়ার জন্য এবার কেন ক্ষেপে গেলি ? কোন্‌ বাঙালী মেয়ে বাইশ হবার পর শাড়ি পরে ?" সকালে মেয়েকে শাড়ি পরিয়ে মেয়েকে সাজতে বলে তারপর রাঁধতে গেছেন রান্নাঘরে। তখন থেকেই এক মুহূর্তের বিরাম নেই অনিন্দিতার... একের পর এক ঝামেলা হয়েই যাচ্ছে! শেষমেষ সাজগোজ শেষ করে অনিন্দিতা বের হতেই মুগ্ধ হয়ে তাকালেন রুখসানা। মেয়েটাকে কেমন অন্যরকম লাগছে! অনিন্দিতা মুচকী হেসে বললো,"মা দেখো, আমি যেটাই পরি তুমি এমন মুগ্ধ হয়েই তাকাও! এতদিন শুধু তোমাকে মুগ্ধ করেছি, আজকে আরেকজনকে করতে যাচ্ছি। " রুখসানা একটু চমকে পেছনে ফিরে বললেন,"কি বললি?! দাঁড়া দাঁড়া... কে ছেলেটা বল তো?! ধ্রুব না তো ?? " অনিন্দিতা হাসতে হাসতে বলে," নাম মনে নেই মা।

পরে বলি?" রুখসানা মেয়েটাকে বুঝেই পান না, কখন যে কি করে, কি বলে বুঝার উপায় নেই। তাই তেমন একটা আগ্রহ দেখালেন না। অনিন্দিতা ঝমঝম করে নেমে গেল। রুখসানা বিয়ে করেন নি নানা ঝামেলার কথা ভেবে। পড়াশোনার পর নিজের ছিমছাম ফ্ল্যাটটা সাজিয়ে নিয়েছিলেন।

একটা সময় পেরিয়ে যাবার পর জীবনটাকে খুব শুষ্ক লাগা শুরু করে তার। এই মেয়েটা তার জীবনে আসার পর তিনি বেঁচে থাকার পেছনে অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। নিজের সবটুকু ভালবাসা আর সঞ্চয় ঢেলে দিয়েছেন মেয়েটার পেছনে। মেয়েটাকে পেয়েছিলেন মাত্র দশদিন বয়স হবে ওর তখন! কি অসাধারন ছোট্ট আর পুতুল-পুতুল মুখ। তারপর থেকে নিজের সবটুকু দিয়ে মেয়েটাকে রক্ষা করে গেছেন, এতটুকু আঁচ আসতে দেন নি বাইরের।

কেউ মেয়েটার ব্যপারে কোন কথা বলার সাহস পায় নি। আরো তার মাতৃত্ব দেখে মানুষ অবাক হয়ে গেছে... আড়ালে-আব্ডালে বলেছে... মেয়েটার ভাগ্যই ভাল! অফিসের কাজে যেকোন খানে গেলেও অনিন্দিতা সাথে থাকে তার। মেয়েটাকে চাকর-বাকর বা বাকি সবাই বেশ তোয়াজ করেই চলে। রুখসানা তার পৃথিবীর কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছেন মেয়েটাকে, সবকিছু আবর্তিত হয় তার অনিন্দিতাকে ঘিরে । তার সব সিদ্ধান্ত মেয়েটাকে সামনে রেখে হয়।

এখন মেয়েটাকে অবলম্বন করেই বাঁচেন তিনি। খালি ভয় পান... কাঁদা থকথকে অতীতটা নিয়ে মেয়েটার মুখোমুখি না হতে হয়! সন্ধ্যায় অনিন্দিতা ফিরে এসে পাশে বসে মাকে জড়িয়ে বকবক শুরু করে দিলো..."মা জানো ধ্রুব যা করে! আজকে আমরা যখন ফুচকা খাচ্ছি..." মেয়েটার কথা শোনার সময় দূর থেকে পঞ্চাশোর্ধ রুখসানাকেও ওর সমবয়সী মনে হয়...তিনি এতটাই লাফালাফি করেন মেয়েটার সাথে! দু-তিন সপ্তাহ পর ... রুখসানা মেয়েটাকে কয়েকদিন একটু অন্যরকম দেখছেন। কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কি যে হয়েছে ব্যপারটা বুঝে উঠতে পারছেন না। আজকের নাস্তায় অনিন্দিতা ঝিমিয়ে ছিল, তিনি মাথায় হাত রাখতেই হেসে উঠে বলেছিল, "মা! আজ শরীরটা ভাল না। ভার্সিটি যাবো না।

" দুপুর না হতেই বললো, "মা আমরা একসাথে অনেকদিন ঘুরি না। চলো আজকে ঘুরবো। আর আমি কিন্তু ড্রাইভ করবো। " রুখসানা বললেন, "তোর না শরীর খারাপ!" - তোমার সাথে ছিলাম তো মা সারাদিন! এখন একদম ভাল হয়ে গেছি! এখন যাও তো মা, তোমার সবুজ-সোনালী শাড়ী আর বেগুনী রং-এর টাঙাইল তাঁত দু'টা বের করো। - কেনো ? - সবুজটা তুমি পরবে আর বেগুনীটা আমি - হঠাৎ! - হুমম - তোর কি ধ্রুব-র সাথে ঝগড়া হয়েছে মা ? - নাহ! মা তুমি দেরী করছো! যাও ! শাড়ি নিয়ে এসে পরিয়ে দাও! রুখসানা মেয়েকে নিয়ে বের হলেন।

তারা দুপুরের খাবার শেষ করেও আশুলিয়া পর্যন্ত গেলেন ড্রাইভ করে। তারপর মেয়েটার হালকা গা গরম দেখে রুখসানা প্রায় ধমকে তাকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন, তখন রাত প্রায় দশটা। অনিন্দিতা ডিনার করে মা'র ঘরে উঁকি দিয়ে বললো, "মা! আজকে তোমার সাথে ঘুমাই!?" রুখসানা বিরক্ত অথচ প্রচন্ড খুশি লুকানো গলায় বললো, "তোর কি হয় এসব মাঝে মাঝে! আচ্ছা আয়..." মেয়েটা জড়িয়ে ধরলে রুখসানা নরম গলায় বলেন, "মা তোর কি হয়েছে?" অনিন্দিতা বলে..."মা! আমার কি হয়েছে সেটা তুমি কেন বুঝতে পারছো না?" - না বললে কিভাবে বুঝবো ? - না বললেও মা'রা বোঝে। আমিতো তোমার-ই একটা অংশ! তাই না মা!? রুখসানা খুব চমকে ওঠেন!..."কি বললি?" - এত অবাক হলে কেন মা ? আমি তোমার অংশ না ?? - সেটাতো অবশ্যই! আচ্ছা আমাকে একটু আঁচ করার জন্য ক্লু দে! প্লিজ মা! অনিন্দিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জড়ানো গলায় রুখসানা কে বলে..." মা আজকে রাতটা আমাকে টাইম দাও... কালকে বলবো, সত্যিই খুব ঘুম পাচ্ছে। " রুখসানা আর কথা না বাড়িয়ে মেয়ের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেন! মেয়েটার মনে হয় খুব ঘুম পাচ্ছিল।

কথা শেষ করেই তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু রুখসানা প্রচন্ড অস্থির হয়ে থাকলেন সকাল হবার জন্য... মেয়েটা বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে! (চলবে) গল্পের শেষটা...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।