আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধুনিশা-২০ (শেষপর্ব)

শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি

খুব ভোরে উঠা মাসুদের অনেকদিনের অভ্যাস। এ সময় সে লিখতে বসে। মনে যা আসে তাই লিখে যায়। সেই লেখাগুলোই কখনো কবিতা কখনো বা গল্প হয়ে ফুটে উঠে। মৌলিক রচনা হিসেবে সেগুলো কতটা ব্যর্থ বা সফল তা নিয়ে কখনোই ভাবে না।

নিজের আনন্দের জন্যে, মনের মুক্তির জন্যে লেখে। না লিখে থাকতে পারে না। লেখাটা তার একটা গোপন আনন্দের জগৎ। সে জগৎটাকে বিস্মৃত হয়ে থাকতে পারে না বেশিদিন। শব্দেরা মগজের ভেতর যেন কিলবিল করতে থাকে।

কাগজের বুকে লেখাগুলোকে সাজানোর আগপর্যন্ত শান্তি পায় না। আর এভাবেই দেখতে দেখতে তার তিনটি কবিতার বই একটি ছোটগল্পের বই আর দু’টো উপন্যাস ছাপা হয়ে গেছে। আজ লিখতে বসে তার হঠাৎ মনে হলো যে, মা নামাজ পড়বেন। তাঁকে ডেকে দেয়া দরকার। কিন্তু মার ঘরের কাছে এসে দেখলো দরজা খোলা।

বিছানায় মিঠু ঘুমাচ্ছে। মাকে নামাজের জায়গাটায় দেখা গেল না। তাঁর বাথরুমটাও বাইরে থেকে বন্ধ। মাসুদ অবাক হয়ে গেল। সে কিছুটা ভীত হয়ে কিচেন বারান্দা সবই দেখলো।

কিন্তু মাকে দেখতে পেলো না। দুরুদুরু বুকে ড্রয়িংরুমে ঢুকেই বর্ণিল কাগজের বাহার দেখে অবাক হয়ে গেল। দেয়ালের উপর চোখ পড়ার আগেই সোফার উপর মাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হবার বদলে ভয় পেলো আরো বেশি। 'মা, মাগো!' সে এগিয়ে গিয়ে মায়ের পায়ে হাত দেয়। মা সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠেই বললেন, 'কিরে, কি হয়েছে?' মার কন্ঠস্বরে ভয় আর উদ্বেগ মিশে থাকে।

'আমার ও তো একই কথা! তুমি এখানে এলে কখন? প্রেশার কি বেড়েছিলো? দু'তিনদিনের ভেতর প্রেশার চেক করিয়েছিলে?' একই সঙ্গে অনেকগুলো প্রশ্ন করে উদ্বেগাকূল হয়ে মায়ের প্রশান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো মাসুদ। 'আমার তো মনে হয় প্রেশারটা নেই!' মাসুদ অবাক হয়ে বলে, 'কি করে বুঝলে?' 'তোর মাথার উপর দেখ!' বলে মৃদু হাসলেন তিনি। বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বিস্ময় আর খুশিতে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো সে, 'এটা কোত্থেকে এলো?' মা রহস্যের জট না খুলে বললেন, 'এভাবে আর কেই বা চমকে দিতে পারে বল?' মাসুদ কিছু বুঝতে না পেরে মায়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বাবার ছবিটার দিকে তাকালো আরো অবাক হয়ে। মিঠু কখন উঠে এসেছে ওদের কেউ খেয়াল করে না। মাসুদকে বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিঠু বললো, 'তোমার ছবি পেয়েছো ভাইজান?' 'এটা কোথায় পেলি?' মাসুদ ফিরে তাকায় মিঠুর দিকে।

'তোমার ওই পাসপোর্ট সাইজ থেকে!' তারপরই বললো, 'ওটা আর ফেরত চেয়ো না!' 'কেন? ওটা তো আমার!' 'হারিয়ে গেছে!' 'কিভাবে?' 'পার্সের ভেতর ছিলো। রিকশা করে আসার সময় ছিনতাই হয়ে গেছে!' মাসুদ এগিয়ে এসে বোনের চিবুক তুলে বললো, 'ওটার বদলে তুই যা দিয়েছিস তার কোনো বিনিময় হয় না! তবুও বল, কি চাস তুই?' মিঠু মার দিকে তাকিয়ে বললো, 'মা, কি চাইতে বল?' 'কি চাইবি তুই?' 'বলো না চাইবো কি না!' মা কিছু বলার আগেই মাসুদ বললো, 'তুই যা চাইবি তাই!' তারপর আবার বললো, 'অবশ্য আমার সাধ্যে কূলায় এমন!' মিঠু বললো, 'চাঁদে যাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব হলেও আমাদের পক্ষে অসম্ভব!' 'আরে এত ভাবাভাবির কি হলো? তুই তো সম্ভাব্যটাই চাইবি!' 'তাহলে বল রাগ করবে না!' 'বলিস কি? আজ আমার জন্মদিন! মায়ের প্রেশার নেই! বাবা উপস্থিত! এমন একটি দিনে রাগ করবো ভাবতে পারিস?' 'তাহলে মিতাপুকে বিয়ে কর!' একটি পাখি উড়তে উড়তে হঠাৎ ভুমিতে আছড়ে পড়লে যতটা না বিস্মিত হয়, তার চেয়েও যেন আরো বেশি বিস্মিত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল মাসুদ। মা বললেন, 'খুব ভালো কথা বলেছিস! এবার যদি কিছু একটা হয়! আমি তো বলে বলে হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম!' মাসুদ মায়ের আর বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো শুধু। কিন্তু কিছু বললো না। তারপর বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো।

যা মিঠু কিংবা মা কারো গোচরে আসে না। (সমাপ্ত) পুরো উপন্যাস

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।