আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় সুন্দর আমাদের এ নগরী.......

একটি নিষ্ক্রিয় ব্লগ

কাকডাকা ভোরে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাথে হাটতে গিয়ে একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম, তা হলো আমি সবসময় ভোরের ঢাকাকে শুধু চোখ দিয়েই দেখি মন দিয়ে নয়। অবশ্য মন দিয়ে দেখার কিছুই নেই......এত নোংরা আবর্জনা দুর্গন্ধ কি আর কোথাও আছে! কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে এসব আবর্জনার মাঝ থেকে দেখার মত জিনিস বের হয়ে যায়। আজ একটা বিশেষ কাজ থাকার কারণে খুব ভোরে ঘর থেকে বের হতে হল। ভোর ৬:১৫মিনিট.....আমি এত সকালে জীবনে মনে হয় আর একবারই বের হয়েছিলাম। যাই হোক বের হয়েই দেখি পুরো রাস্তা ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ, কোন রিকশা বা যানবাহন নেই.......মাঝে মাঝে এক দুজন মানুষ.....যাদের কেউ কেউ জগার।

কোন যানবাহন না পাওয়ার কারণে আমিও হাটতে লাগলাম.....মেঘলা আকাশ, মৃদু ঠান্ডা বাতাস তার সাথে মনের মধ্যে হাজার চিন্তা....পরিবেশটা খারাপ না। গায়ে গা লাগানো ইট কংক্রিটের খাঁচাগুলোতে কত পরিবারের কত হাসি কান্নার গল্প। এরা সবাই ধীরে ধীরে ঘুম থেকে জেগে উঠছে......তাদের জীবন গল্পের আরেকটা পর্ব শুরু হয়ে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে। ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম আমি একটা গার্মেন্ট শ্রমিকের দলের মাঝে........সবাই ছিপছিপে গড়নের কিশোরী বা তরুনী, সবাই দ্রুত পায়ে হেটে চলছে...রং বেরং এর সালোয়ার, কামিজ আর ওড়নায় চরম অসামঞ্জস্য.....কিন্তু তবুও এদের মাঝে কিছু একটা আছে যা আমার মাঝে নেই। কি হতে পারে সেটা?....আমার মনে হয় এদের চেহারার কাঠিন্যতা, দৃঢ়তা, পরিশ্রমী ক্লান্ত অথচ স্বপ্নময় চোখ...যে চোখে মাঝে মাঝে আশার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠে।

এই মেয়েগুলোর জন্য সবাই খুব মায়া দেখায়, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে অনেক কলামিস্ট পত্রিকায় লিখতে লিখতে কাহিল হয়ে যান। কিন্তু যারা লেখেন তাদের কয়জন এদের পাশে এসে দাঁড়ান? ওদের সাথে হাটতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমি তাল মেলাতে পারছিনা....ওদের হাটার গতি এত বেশি যে আমি পিছিয়ে পড়ছিলাম বারবার। কিন্তু তবুও একটা ছেলেমানুষী খেলা খেলতে লাগলাম। মনে মনে ওদের সাথে প্রতিযোগীতা শুরু করে দিলাম....আমি হারতে চাইনা তাই হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেলাম.....কাদা দেখে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম পাছে জুতায় কাদা লেগে যায়।

আর ওরা কাদা মাড়িয়েই আমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল। ভোরের ঢাকার আরেকটা দেখার জিনিস হলো সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী.....গাঢ় সবুজ এ্যাপ্রন পরা মানুষগুলোকে দেখতে আগে কোনদিন এত মজা লাগেনি। এদের ব্যস্ততা দেখতে ভালোই লাগে। ব্যস্ত হাতে মহিলাটা রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে যাচ্ছে........তার ঝাড়ুর এক একটা ঝাঁটে কত সিগারেটের প্যাকেট, বিস্কিটের প্যাকেট, চিপ্‌সের প্যাকেট, কগজ উড়ে যাচ্ছে। তখন মনে হলো আমরা নিজেরাই এ শহরকে ইচ্ছে করেই বেশি নোংরা করে ফেলি।

প্রত্যেক ঢাকাবাসীকে যদি পালা করে প্রতি সকালে নিজ এলাকার পরিচ্ছন্নতার কাজ দেওয়া যেত তাহলে মনে হয় কেউ আর অযথা নোংরা করার সাহস পেতনা। এসব পরচ্ছন্নতাকর্মীর পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় একটু গা বাঁচিয়ে হেটে চলি....যদি ময়লা লেগে যায়। তোমাদের প্রতি শ্রদ্ধা, তোমরা আমার ফেলা ময়লাটাকেই ঝেঁটিয়ে বিদায় করছ.....আর আমি গা বাঁচিয়ে চলি। মেয়েগুলোকে এবং সেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মনে মনে বিদায় জানিয়ে আমি রিকশায় উঠে পড়ি। মেয়েগুলো তখনও দ্রুত পায়ে হেটে চলে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীটি তখনও ব্যস্ত হাতে ঝাড়ু চালাতে থাকে........আমি তাদের দিকে তাকালেও তারা আমার দিকে তাকানোর সময় পায়না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।