আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ব্যস্ত সকাল - োঃ শামীম –উল- আলম



তাড়াতাড়ি ওঠ , সাড়ে পাচঁটা বাজে । ভার্সিটিতে যাবিনা ? ওফ্ ! এক রকম বিরক্তি নিয়েই ঘুম থেকে উঠে বসল শরীফ ওরফে মুহাম্মাদ শরীফ-উজ-জামান । বাবার ডাক শুনে আর শুয়ে থাকার জ়ো নেই ,কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল সে ! ঢুলুঢুলু চোখে সে উঠে বসল বিছানায় । হাতে মোবাইলটা নিতেই চোখে পড়ল -2 missed calls . চেক করতেই ভেসে উঠলো সুখেন আর রিমার নাম ; রিমার কল ছিলো রাত ২ টায় আর সুখেনের কল ছিলো রাত আড়াইটায় – তবে বেশিক্ষণ মনেহয় কথা বলা যেত না । তারটা সিটিসেল ,সুখেনেরটা গ্রামীন তাও আবার ইজি গোল্ড আর রিমারটা ডিজুস ! হলে থাকলে ডিজুস সিম ধার নিয়ে কথা বলা যেত ।

সেট রফিকের কাছে চাইলেই সে দিয়ে দিত ; সিম পাভেল ভাইয়ের কাছ থেকে নেয়া যেত । ওনার সিমটা শরীফই চালায় বলতে গেলে - সেই টাকা ভরে । নাহ্ , একটা সেট না কিনলেই নয় । সেট তো নকিয়া ছাড়া ভাল নাই - আচ্ছা একটা নকিয়ার দাম কত ? নতুন দরকার নেই সেকেন্ড হ্যান্ড হলেই হবে। ইশ্, তাদেরগুলো কেন যে সিটিসেল হল না ! ঘুম থেকে উঠে বসে আছিস কেন ? তাড়াতাড়ি দাঁত মেজে গোসল করে আয় ।

- এবার মার ডাক । ওফফ্ , শান্তিমত চিন্তাও করা যায়না । যাচ্ছি বলে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পাশে রাখা চেয়ারটায় পায়ের আঙ্গুল্টা বাড়ি লাগল । ব্যাথায় ককিয়ে উঠল সে । নাহ্ , দিনের শুরুটা ভাল হল না - আর কত বিপদ আছে কে জানে ? ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে বাথরুমে ঢুকে সে দাঁত মাজা শুরু করল ।

দাঁতের আবস্থা দেখে তার নিজেরই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল – একদম হিমুর হলুদ পাঞ্জাবির মত হলুদ দাঁতের রং ! কাল সে দাত মাজতে ভুলে গিয়েছিল - এটা ঠিক কিন্তু কেন ভুলে গিয়েছিল তা তার মনে পড়ছে না । কি যে হল তার , কিছুই মনে থাকছে না – বুড়ো হয়ে যাচ্ছে নাকি সে ! ধুস্ কি চিন্তা করছে সে ? এখনি সোয়া ছয়টা বাজে ,আরো তাড়াতাড়ি করা উচিত তার । তার আবার বাথরুমে ঢুকলেই নানা রকম সৃষ্টিশীল চিন্তার উদয় হয় । কখন দু চারটে ধাঁধাও মনে পড়ে তার - সেগুলো সমাধান না করে যে সে বের হতে পারে না সেটা কি কাউকে বোঝানো যায় ! আচ্ছা আমি না একটা স্বপ্ন দেখছিলাম ! কি জানি দেখছিলাম ? দূর ছাই , মনে আসছে না কেন ? এ কথা ভেবে সে বিরক্ত হয়ে পড়ে । কিছুক্ষণ পর যথারীতি দরজায় আবারো টোকা পড়ে- একবার বাবা , পরেরবার মা।

নাহ্, আর পারা গেলনা। তার চিন্তায় এত বাধা দেয়া হচ্ছে কেন ? সারাবিশ্বেই তো মুক্তবুদ্ধির ধারক-বাহকদের উপর নির্যাতন চলছে। কত বড় বড় লেখক সাংবাদিক জেলে পচছে ; অনেককে মেরেও ফেলা হচ্ছে । সরকারগুলোও কোন রকম গা করছে না , তারা যেন সমাজের প্রভাবশালী, গোঁড়া মানুষদের খুশী করতেই বেশি আগ্রহী । তাদের চিন্তাটাও অনেকটা এরকম - মরলে মরুক, আমাদের কি? কি দরকার ছিল বাবা এত কিছু লেখার ! যাও , এখন স্বর্গে গিয়ে যত খুশী মুক্তবুদ্ধির চর্চা কর ! নাস্তা খেতে খেতে এসব কথাই ছিন্তা করছিল সে।

মা তা দেখে বললেন, ভাত গো্নার জন্য দেইনি, খাওয়ার জন্য দিয়েছি । সাতটা বাজে প্রায় , তাড়াতাড়ি বের হয়ে যা , দেখ বাস পাস কিনা ! আসলেইতো অনেক দেরি হয়ে গেছে ! তারপর নাস্তা সেরে ব্যাগটা টান দিয়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেল বাসা থেকে । একটা রিকশা দেখে উঠে বসল। তারপর রিকশায় যেতে যেতে একটা হিসাব কষে ফেলল সে । তার বাসার ঘড়ি দশ মিনিট ফাস্ট ; এখন বাসার ঘড়িতে বাজে সাতটা দশ তার মানে সাতটা।

বাস ধরে সাইনবোর্ড যেতে লাগবে বড়জ়োড় দশ মিনিট । বুয়েটের বাস সাতটা পনের মিনিটে সাইনবোর্ড পাস করে তার মানে তার হাতে সময় থাকছে টেনেটুনে পাঁচ মিনিট ! বাহ্ , অনেক সময় দেখা যাচ্ছে । বাসে উঠে সিট নিয়ে বসল সে । সকালের সোনালী রোদ তার মুখের একপাশে পড়ল । আহা কতদিন এমন রোদ মুখে পড়ে না ! আসলেই অনেকদিন ? নাহ মাত্র তিনদিন ।

এই তিনদিনই সে বাসায় ছিল । বাসায় আসলে তার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় , রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। তার আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ; প্রতিদিন সকাল ছয়টার আগে ঘুম থেকে উঠে সে । তারপর হাতমুখ ধুয়ে জিমে যায় ; শালার বাসা আসলেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় । নিজেকে সম্মানিত অতিথি মনে হয় ! এই মুহূর্তে তার একটা কবিতা মনে পড়ছে – আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর কেমনে পশিল গুহার আধারে প্রভাত পাখির গান ।

আচ্ছা কার কবিতা যেন ? মনে পড়েছে - কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর । তার কবিতা শরীফের ভালই লাগে তবে উপন্যাসগুলো কেমন জানি ! একটা মোটে উপন্যাস পড়েছে সে - শেষের কবিতা । নৌকাডুবি উপন্যাস্টা পড়তে হবে । তার কাছে এই উপন্যাসটা নেই ; এখন বইটি কেনাও যাচ্ছে না । হাত খালি করা উচিত হবে না ।

কারো কাছ থেকে ধার করা যায়না ? রিমার কাছে চাওয়া যায় , কিন্তু সেতো এখন হলে আছে - কবে আসবে ঠিক নেই । আরে মেজ চাচার কাছ থেকেইতো ধার করা যায় ; উনিতো প্রচুর বই পড়েন । উনার নিজের লেখা একটা উপন্যাস আছে । ঐ সাইনবোর্ড নামার আছে ? থাকলে গেটে আয়েন । হেলপারের চিৎকার শুনে আর বসে থাকার উপায় নেই ।

চিন্তা বাদ দিয়ে সে নেমে গেল বাস থেকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।