আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেও কেও ফিনিক্সঃ কিস্তি-১

হঠাৎ শুন্যতা ...................

বিজয় স্বরণীর মোড়ে Rangs ভবন। ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধা ভাঙা ভবনটার মাঝ বরাবর ধ্বসে গেছে। পথচারীরা এলাকাটা পার হয়ার সময় ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভবনটার দিকে। যেন একটা অভিশপ্ত প্রাসাদ...ভেঙে পড়বে যে কোন সময়।

ইতমধ্যে নমুনা দেখিয়েছে এই ভবন, মাঝ রাতে আংশিক ধ্বসে পড়ে। জামান লোকাল বাসে করে ফিরছিলো মিরপুর। জায়গা পায়নি। মাঝের রড ধরে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাদ্র মাসের গরমে দর দর করে ঘামছে।

চার পাশের মানুষেরও একি অবস্থা। প্রতিটি ঝাকুনির সাথে চার পাশের সকলের সাথে ঘাম বিনিময়, গালা-গালি, খিস্তি-খেউর, ড্রাইভার আর হেল্পারের গুষ্টি উদ্ধার। কেমন একটা দম বন্ধ করা গা গুলান পরিবেশ। জামানের কিছু মনে হয়না অবশ্য। এই লকাল বাস আছে বলেই কিছুটা যাতায়াত করা যায়।

তাও কালেভদ্রে, যেমন আজকে। আজ ছিল জামানের ১৯তম ইন্টারভিউ। সে নিশ্চিত এই চাকুরী্টাও তার হচ্ছে না। প্রায় দু’বছর ধরে বেকার সে। একটা সময় জামান খুব সিরিয়াস ছিলো ইন্টারভিউ এর ব্যাপারে, রিফিউজ হলে তা নিয়ে চিন্তা করতো।

নিজের কোথায় ঘাটতি আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতো। কিন্তু ১১ নম্বর ইন্টারভিউতে তার কাছে কঠিন বাস্তবতাটা ধরা দেয়। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ফয়সলের সাথে দেখা। ফয়সল ছিলো অনার্সে তার ক্লাসমেট। কোন মতে পাশ করেছিল সে।

মার্কসিটে দেখা গেল কান ঘেসে ফেল মিস্‌ করেছে। অবশ্য তৃতীয় বিভাগ পেয়ে ফয়সলের আনন্দের যে বহিঃপ্রকাশ ছিল তাও আতুলনিও। সেই ফয়সল ইন্টারভিউ দিতে এসেছে! জামান মনে করার চেষ্টা করল চাকুরীর বিঙ্গপ্তি টা...শধু মাত্র প্রথম বিভাগ প্রাপ্তরা আবেদন করুন। এই লাইনটা বড় করে লেখা ছিল। তাহলে? কথা বলতেই জানা গেল তার ডিআইজি খালুর বন্ধু এই অফিসের অন্যত্তম বড় কর্তা।

জামান ভিতরে ক্ষোভ আর রাগে ফেটে পড়ছিল। কিছু বলেনি শুধু রাগে চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গিয়েছিল। নিজের যোগ্যতায় একটা চাকুরীর নুন্যত্তম সম্ভাবনাও কি এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে? আজকাল জামান ইন্টারভিউ বোর্ডে গেলেই বুঝে ফেলে এটা নাটক না সত্যি। আজকেরটা ছিল নাটক, স্রেফ সাজান নাটক। বাস চলতে চলতে বিজয় স্বরনির বাঁক ঘুরতেই জামানের চোখ পড়ল Rangs ভবনে।

ভবন্টার কঙ্কালটা দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় এই ভবনের ভিতর নিশ্চয় হাজারো স্বপ্ন তৈরী হত। আজ কোন স্বপ্ন নেই, শুধু কঙ্কালটা আছে। জামানের হঠাৎ নিজেকে ঐ ভননের মত মনে হল। তার স্বপ্ন গুলো ঝরে গিয়ে আজ শুধু কঙ্কালটা রয়ে গেছে।

মিথ্যা দিয়ে সাজান ছিল ভবনটা তাই তার খোলসটা আজ খুলে গেছে। কিন্তু জামানের ভীত্‌ তো সে নিজে গড়েছে। কষ্ট করে টিউশনি করে পড়ালেখার সাথে সংসার খরচও চালিয়েছে। স্যারদের পিছনে না ঘুরে নিজে পড়ে একটা চলনসই রেজাল্ট করেছে, আশা ছিল এই কষ্টের ফল সে পাবে। কিন্তু জীবনের গল্প ভিন্ন... বাস ঘুরে জীয়া উদ্দানের দিকে চলা শুরু করেছে।

জামান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে Rangs ভবনের দিকে। বিশাল আত্মাহীন মহিরুহের মত দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ জামান এর একটা মানে খুঁজে পায়..(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।