আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তখন আমরা কেউই ভালোমতো পৃথিবীতে ছিলাম না



(সুমন প্রবাহন মারা যায় ১৯শে এপ্রিল। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর ২৫শে এপ্রিল তাঁর বন্ধুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছবির হাটে সুমনের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আেয়াজন করে এবং একইসাথে তারা 'একখন্ড একাকীত্ব' নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে যা অনুষ্ঠান শেষে বিনামূল্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। তা-ই ধারাবাহিকভাবে এখানে প্রকাশিত হলো ) কফিল আহমেদ এখন ওকে নিয়ে, ওর জন্য ভালোমতো কিছু করাটা আরো কঠিন হয়ে গেলো। অথচ বেঁচে থাকতে ও আমাদের খুবই খুঁজছিলো। আমাকেও ফোন করেছিলো।

আস্তে করে বললো-'আমার কথাটা একটু শুনুন। আমি না একটা মাছি গিলে ফেলেছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ' আমি ওকে খুব কাছে থেকে, আর খুব দূরে থেকেও চিনি। বললাম, আপনাকে অনেক দিন দেখি না।

দেখা হলে ভালো লাগবে। অনেক কথা হবে। আজ আমরা সিলেটে যাব চৈত্র সংক্রান্তিতে গান করতে। ফিরে এসেই আপনার সাথে দেখা হবে। আপনি অবশ্যই ফোন দিবেন।

কেমন আছেন জানাবেন। ও বললো, ওখানে যেন বেশি দেরি না করি। দু'দিন পর সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরি। ভিতরে ভিতরে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ও ফোন না করলে ওকে পাবো কী ভাবে? আমাদের এমনি বাস্তবতা।

সিলেটের দুদিন পর এর মধ্যে আরো দুতিন দিন পার হলে ও ফোন করলো। বললো, সন্ধ্যায় যেন অবশ্যই ছবির হাটে থাকি। কথা আছে। সেদিন ওর জন্য আমি অপেক্ষা করি। কিন্তু ও এলো না।

অবশ্য ও আগে বলেছিলো, বাড়ি থেকে ওকে বেরুতে দেয় না। আমি ঘরে ফিরে যাই। সেদিনই রাত এগারোটার দিকে আবারো সুমনের ফোন। বললো, আমি বিশ্বরোডের পথে। বিদ্যুৎছাড়া ঘরোয়া গরম তাড়াতে তাড়াতে ওকে বললাম, আজ শরীরটা ভালো লাগছে না।

এখন এতো রাতে বেরুতে ইচ্ছে করছে না। আপনিও বাসায় ফিরে যান। আগামীকাল যখনই ফোন করবেন আমি চলে আসবো, তবে দুপুরের পর হলে আমার জন্য ভালো হয়। ও বললো, ঠিক আছে। কালকেই দেখা হবে।

কথা মতো দুপুর থেকেই ওর ফোনের অপেক্ষায় থাকি। বিকেলে পিছন থেকে অভিজিৎ আমাকে ডাকলো। সঙ্গে প্রবর রিপন। ওরা বললো, সুমন তো... ভাবি, বড়ো ভুল হয়ে গেছে। বোঝা দরকার ছিলো।

ওকে ভালো করে বোঝা দরকার ছিলো। ও কথা বলতে চেয়েছিলো। ওকে আমাদের ভালো করে ভালোবাসা দরকার ছিলো। অনেক কষ্ট করেই ও মাঝে মধ্যে বন্ধুদের খুঁজতো। খুঁজতে আসতো।

কান্ত কিন্তু অদ্ভূত রকমের সুন্দর-শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। বহুদিন থেকেই ওকে কোনোরকম অন্তরঙ্গ সঙ্গ দিতে পারছিলাম না। তা না পারার যাতনাটা নিরবেই জ্বলতো-নিভতো। আর ওকে নিয়ে কম কথায় পরিষ্কার কিছু বলবার মতো সময় ও শক্তি এখন আমার নাই। সেজন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে।

তবে বলি ওকে নিয়ে যে কথাগুলি শুনি, যেমন-মনোরোগ, সিজোফ্রেনিয়া, ...আত্মহনন ... ওকে চিহ্নিতকরণের এইসব তকমার মাঝ থেকে আত্মহননের বড় রকমের ক্ষতিটুকু ছাড়া বাকি শব্দগুলি ওর বেলায় একদম খাটে না। তা অন্যায় এবং মর্মান্তিক। অ্যাডিক্ট কিংবা সিজোফ্রেনিক হলে ওর উৎপাতটা অবশ্যই অন্যের গায়ে পড়তো। ওতো কখনোই কারো উপর চড়াও হয় নাই। আক্রমণ করে নাই।

বরং যাবতীয় প্রতিকুলতার বিপরীতে কাঁদতে কাঁদতে, কাঁপতে কাঁপতে একলা শিশুর মতোই ও এক পা দু পা করে আপ্রাণ দাঁড়াতে চেয়েছিলো। দাঁড়িয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো। সঙ্গে বা সামনে মনোমতো কাউকে পেলেই, একটু ভর পেলেই জীবনের একান্ত অর্জনটুকুর আসল রূপটা আমাদের চোখে আরো সুন্দরমতো ছড়াতে পারতো। এখন ওকে সঙ্গে না নিয়ে পৃথিবীতে থাকি কেমনে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।