আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচোর-১০ম পর্ব

দ্যা ব্লগার অলসো.....

স্বপ্নচোর-৯ম পর্ব ওরা মেয়েটার ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে দিল, জয় এরপরেও দাঁড়িয়েই থাকল, তারপর ওর মনে হলো মেয়েটা যদি আলো হতো, ও কি সাহায্য করতো না। ভাবনাটা মাথায় আসতেই দ্বিধা-দ্বন্ধ ঝেড়ে ফেলে দিল ও। একছুটে পৌঁছে গেলো ওখানে,তখন ওরা মেয়েটার কাছ থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়েছে, কাঁদছে ও। ‘ব্যাগটা দিয়ে দাও। ’ দৃড়, প্রত্যয়ী কন্ঠে বললো জয়।

সবাই একযোগে তাকাল ওর দিকে। দলনেতা (দেখে জয়ের তাই মনে হলো) খানিক চেয়ে রইলো ওর দিকে, তারপর সুর করে গেয়ে উঠলো,-‘খনডে বাড়ি, খনডে গর, কি তোঁয়ার ঠিকানা....., খডিয়ার লাট সাব ওবা তুঁই?’ (কোথায় বাড়ি, কোথায় ঘর, কি তোমার ঠিকানা....., কোথাকার লাট সাহেব তুমি?) ‘আমি কে সেটা জানলে তুমি কাপড় খারাপ করে ফেলবে, তারচেয়ে বেটার, ভালোয় ভালোয় সরে পড়। ’ বললো জয়। মনের ভাব মুখে যাতে না ফোটে সেজন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে ও, আর যাই হোক ভয় পাওয়া চেহারা নিয়ে নায়কগিরি ফলানো যায়না। ‘হতা ফুনি মনে অর দে যেন, প্রধানমন্ত্রীর মহাসচিব; ফটকাবাজির আর জাগা ন ফদ্দে না অবাজি।

একই পরামর্শ আঁই এহন তোরে দির, বালা থাকতে গরত যাগুই, ফরাণ বাঁচা। ’ (কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন প্রধানমন্ত্রীর মহাসচিব; ফটকাবাজির আর জায়গা পাচ্ছিসনা, না। একই পরামর্শ আমি এখন তোকে দিচ্ছি, ভালো থাকতে বাড়িতে চলে যা, প্রাণ বাঁচা। ) এবার জয়ের ভেতরটা কেঁপে গেল, দলনেতার সম্বোধন পাল্টে গেছে, লক্ষণ ভালো নয়। তবু টললনা সে।

‘ঠিক আছে, এক্ষুনি প্রমাণ হয়ে যাবে আমি মিথ্যা বলছি কিনা। নাও আমার মোবাইলটা নাও, এখানে একজন মন্ত্রীর নাম্বার আছে, তার সাথে কথা বল। তাকে জিজ্ঞেস করো জয় নামে কাউকে চেনে কিনা। ’ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলো দলনেতা, ইতস্তত ভাব দেখা গেলো তার চেহারায়। সুযোগটা নিল জয়, ‘কই নাও, কথা বলো।

’ ‘দরকার নাই,’ বললো দলনেতা, বোঝা গেলো পিটটান দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, ‘আঁরা আসলে বুজিত ন ফারি, মাফ গরি দও বদ্দা, এই আয়। ’ চলে গেলো ওরা। রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমেছে, মেয়েটা সেই পানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে। এতক্ষনে জয়ের দিকে তাকালো সে, চেহারায় এখনো ভয়ের চিহ্ন ফুটে আছে। ‘কি বলে যে আপনাকে....’ ‘ধন্যবাদ জানাবেন?’ কথা কেড়ে নিয়ে বললো জয়, ‘সেটা আমাকে না দিয়ে ভাগ্যকে দিলেই ভালো করবেন।

’ তাকিয়ে থাকলো মেয়েটা ওর দিকে, চেহারায় প্রশ্ন। ‘বুঝতে পারেননি? ওরা আসলে ছিঁচকে মস্তান, পাতি ধরণের আর কি, ক্যাডার ধরণের কেউ হলে ভয় পেয়ে ভেগে যেতোনা। তাই বলছি, ধন্যবাদটা ভাগ্যেরই প্রাপ্য। ’ খানিক চুপচাপ, তারপর জয় সৌজন্যের খাতিরে বললো, ‘কোথায় যাবেন, চলুন আপনাকে পৌঁছে দেই। ’ মেয়েটা কোন জবাব দিলোনা, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

‘কই, বললেন না, কোথায় যাবেন আপনি?’ এরপর জয়কে অবাক করে দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। শুরু করার পর আর থামাথামির কোন লক্ষণ দেখা গেলোনা। দারুণ বিব্রত বোধ করলো জয়, কাউকে সান্তনা দেওয়া আসেনা ওর। ‘প্লিজ কাঁদবেননা, দয়া করে বলুন কি সমস্যা। ’ কাজ হলোনা, মেয়েটা কেঁদেই চলেছে।

উপরে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, নিচে ভেজা রাজপথ, তার উপর দাঁড়ানো ক্রন্দণরত খুব সুন্দর একটা মেয়ে, এই পরিস্থিতিতে ওর কি করা উচিত, ভেবে পেলোনা জয়। একসময় থামলো মেয়েটা, সেই সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো জয়, এই শহরে অবলা নারীদের সাহায্য করার লোকের অভাব নেই, একেও বিপদগ্রস্ত ভেবে তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলেই কম্ম সাবাড়। ‘আমার কোথাও যাবার জায়গা নেই। ’ বললো মেয়েটা, একটু থেমে আবার বললো, ‘আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। ’ ছোটবেলায় কার কাছে যেন শুনেছিলো জয়, কোনো জিনিস আন্দাজের উপর ভর করে মাপার জন্য তোলা হলে যদি বরাবর হয়ে যায়, তাহলে যে জিনিসটা মাপলো তার হায়াত নাকি কমে যায়।

মেয়েটার ব্যাপারে যা ভেবেছিলো ও, সেটা একদম মিলে যাওয়ায় মনে হলো; ও কি বেশিদিন বাঁচবেনা। এখন সময় বেলা একটা, মেয়েটা নিশ্চয়ই কিছু খায়নি, ওকে কিছু খাওয়ানো দরকার। কিন্তু পকেট তো ফাঁকা ময়দান, কি করা যায়। একবার ভাবলো কি দরকার এই ঝামেলা কাঁধে নিয়ে, তারচেয়ে নিজের রাস্তা মাপলেই বোধহয় ভালো হবে। কিন্তু মেয়েটার চেহারার দিকে তাকাতেই ভাবনাটা বাতিল করতে হলো, খুব অসহায় মনে হলো ওকে, তাছাড়া ওই যে আলোর সাথে মিল, সেটাই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করলো ওকে।

‘কিছু যদি মনে না করেন, তাহলে আপনি আমার সাথে আসতে পারেন। ’ ‘কোথায়?’ ‘আপাতত আমার এক বন্ধুর অফিসে। সেখান থেকেই ঠিক করবেন কোথায় যাবেন। ’ মেয়েটা কোন কথা বললনা, বোঝা গেলো ভাবছে ও। ‘চলুন।

’ দু মিনিট পর বলল ও। ঠিক এ সময় পূব আকাশে চোখ পড়ল জয়ের, সাত রঙের সমাহারে উঠেছে সেখানে রঙধনু। জীবনে রঙের ছোঁয়া লাগল নাকি; মনের গহীন কোনে কেন যে ভাবনাটা উঁকি দিল, বুঝতে পারলনা ও। চলবে.......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।