আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডা. টুটুল শেষ পর্যন্ত ক্রসফায়ারেই নিহত হলেন!



শেষ পর্যন্ত কথিত সর্বহারা-চরমপন্থি নেতা পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল, লাল পতাকা) প্রধান ডা. মিজানুর রহমান টুটুল ‌'ক্রসফায়ার' এ নিহত হলেন। আজ ভোরে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের কসবা গ্রামের ঈদগাঁপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে রোববার ভোর সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। তাঁকে নাকি পুলিশ এই ক্রসফায়ার করে। গত শুক্রবার ২৫ জুলাই, ২০০৮ দিবাগত রাত ১‌০টার দিকে ঢাকার উত্তরার এক আত্মীয়ের বাসা হতে টুটুলকে আটক করে RAB-১ এর সদস্যরা। RAB ডা. টুটুলকে গ্রেফতারের খবরটি অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে পুরো চেপে যায়।

আজ রোববার সকাল হতে না হতেই ডা. টুটুল গ্রেফতার ও ক্রসফায়ার এ নিহত হবার ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়ে। এই হলো বাংলাদেশের আইন, রাষ্ট্র, মানসিকতা! ডা. টুটুল অপরাধী হলে তার বিচার হতে পারতো। কিন্তু বিচারহীনভাবে এভাবে একটি প্রাণ কেড়ে নেয়ার অধিকার কি রাষ্ট্রের আছে? ধিক্ এই বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের ঘটনা। এধরনের হত্যাকান্ড আর সন্ত্রাসী কিংবা টুটুল যে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন (যদি কোন হত্যাকান্ড সত্যি সত্যি করে থাকেন) তার মধ্যে কি কোন পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন সচেতন ব্লগার, নাগরিক হিসেবে? বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডা. মিজানুর রহমান ওরফে টুটুলের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে। কোটচাঁদপুর শহরের বাঁধেরপাড়ায় তাঁর একটি বাড়ি আছে।

ডা. মিজান নকশালবাড়ি আন্দোলনের নামে তৎপর গোপন চরমপন্থি সংগঠন লা পতাকার শীর্ষ এবং তাত্ত্বিক নেতা। ১৯৮০ সালে তিনি পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির (এম-এল) গোপন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর তিনি ১৯৮৬ সালে এক মাস সরকারি চাকরিও করেন। এরপর থেকে তাঁকে আর প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। বহু ভাঙ্গা-গড়ার পর ডা. টুটুল পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা) এর প্রধান হয়েছিলেন।

সূত্র মতে, এই পার্টির প্রধান হিসেবে কাজ করলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিনি এই পদ ছেড়ে দিয়ে দলের কার্যক্রম থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। গত ২৫ জুলাই রাতে গ্রেফতার হবার খবর চাউর হয়ে গেলে ২৬ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে ডা. মিজানের মা নভেরা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ছেলে ডা. মিজানুর রহমান গরীব মানুষের চিকিৎসাসেবায় জড়িত। মিজান গোপন রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও কোন প্রকার চাঁদাবাজি বা খুনের সঙ্গে জড়িত নন। বরং পৈত্রিক জম-জমা-সম্পদ বিক্রি করে গরীব মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি (মিজানের মা) বলেন, আমার ছেলে কোন অন্যায় করলে তাঁর রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করা হোক।

তাঁকে যেন ক্রসফায়ারে হত্যা করা না হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে মিজানের মা ৮০ বছর বয়সী নভেরা খাতন তাঁর অন্য আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঝিনাইদহ জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে। কিন্তু অফিস ছুটি থাকায় তাঁকে আজ রোববার আসতে (ডিসি অফিসে) বলা হয়। সরকারের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, ডা. মিজান জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। আমরা মনে করি, জনগণের তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।

কাজেই ডা. মিজান জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য জানিয়েছেন তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। নওগাঁর একজন সাংবাদিক আজ দুপুরে আমাকে জানিয়েছেন যে, পুলিশের পক্ থেকে জানানো হয় ডা. মিজানের নামে সারাদেশের বিভিন্ন থানায় অন্ত:ত ২০০টি হত্যা মামলা রয়েছে। তবে ডা. মিজানের পরিবার এই বক্তব্যকে ক্রসফায়ারে হত্যাটিকে জায়েজ করার কৌশল বলে দাবি করেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।