আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না হইলাম দেশী না বিদেশী লোকে বলে প্রবাসী।

মিডিয়া

বন্ধুরা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছো দেশ নিয়ে এত গবেষণার কি আছে ? নিজের দেশ নিয়ে ভাবো। আসলে নিজের দেশ কোনটি ? ব্রিটেনের কথাই যদি ধরি,যারা যুগ যুগ ধরে এদেশে পরে আছেন তারা তো বৃটেনের নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাহলে বাংলাদেশতো সে অর্থে তাদের দেশনা , তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বাস্তবিক অর্থে তাদের মাথা না ঘামানই উচিৎ । আর যারা কিছু দিনের জন্য পড়াশুনা কিংবা চাকুরির সুবাদে এসেছেন তাদের নাহয় একটা যুক্তি আছে তারা নিদিষ্ট সময় শেষে দেশে ফিরে যাবেন। এখন কথা থেকে যায়, ডুয়াল পাসপোর্ট নিয়ে, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তারা দুই দেশ নিয়ে মাথা ঘামাবে এটাই স্বাভাবিক। আর আপাদমস্তক যারা চীর কালই বাঙালি , যাদের ধমণীতে বাংলাদেশের রক্ত প্রতিনিয়তই টগবগ করে তাদের তো বাংলাদেশকে নিয়ে না ভেবে উপায় নেই।

আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম তারা বাংলাদেশী অরিজিন হলেও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভাবনা চিন্তা গুলোও খুব সীমিত। ২২ জুন ঢাকায় একটি সমাবেশে প্রবাসীদের বিদেশে বসে দেশীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা নিয়ে বিতর্কের সুত্রপাত করেছেন টিআইবির চেয়ারপার্সন মুজাফ্ফর আহমেদ। একদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে রাজনৈতিক দলগুলোর দেশের বাইরে কোন শাখা থাকতে পারবেনা, অন্যদিকে দুই নির্বাচন কমিশনার সহুল হোসাইন ও বিগ্রেডিয়ার অব: এম শাখাওয়াত হোসনে গত বছর বিলেতে এসে বিভিন্ন সভা সম্মেলনে বলছেন প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়া হবে, এবং এই বছরই সেটি কার্যকর হবার সুযোগ রয়েছে। কথা হচ্ছে, প্রবাসীরা যদি দেশীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে না পারে তাহলে ভোট দেবারই বা দরকার কি ? তাহলে কেনই বা প্রবাসী প্রতিনিধিদের নির্বাচনে নমিনেশন দেয়া হচ্ছে ? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন মোজাফ্ফর আহমেদ খানিকটা রুঢ় ভাবেই বলেছেন, ’যারা আমার দেশের পার্সপোট ত্যাগ করে বিদেশী পার্সপোর্ট নিয়েছেন তাদের কেন আমার দেশের ভোট দিতে হবে?’ কথাটা এতটা রুঢ় ভাবে না বলে হয়তো প্রবাসীদের অবদানের কথাগুলো স্বীকার করে , যৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করা যেত। লন্ডনে এসে জেনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিলেত প্রবাসী বাঙালিরা মাস শেষে যে বেতন পেতেন কোন রকমে চলার অর্থটা রেখে বাকী টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সহায়তা হিসাবে।

ট্রাফলগার স্কয়ারে, হাইড পার্কে গনআন্দোলনের মাধ্যমে আন্তজার্তিক সমর্থন আদায়ে সহায়তা করেছিলো এই প্রবাসীরাই। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের যেকোন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রবাসীরা যেভাবে পাগলের মতো ফান্ড রেইজ করে দেশে পাঠান সেগুলো বাংলাদেশে বসে জানবার কথা নয়। সম্প্রতি সাইক্লোন সিডরের সময়ে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের টাকার অংকটা বিদেশী দাতাদের চেয়ে কোন অংশে কমনয়। এই বিষয়গুলোকে সম্মানের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তাছাড়া সদ্য পাশ করা বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা চাকুরির জন্য হাপিত্বেষ না করে প্রবাসে এসে অন্তত তার বেকারত্বটা ঘুচাতে পারছে সেই সাথে একটা পরিবারের অবলম্বন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে এটাওবা কমকি ? এতে দেশ প্রেম কমে যাবার প্রশ্ন আসেনা।

বরং বিভিন্ন পরিস্থিতি আর প্রতিকুল অবস্থার কারনেই মানুষ কেবল প্রবাস যাপন করে। দেশের প্রতি পিছুটানটা আসলে থেকেই যায়। শেখ রেহানা দীর্ঘ দিন ব্রিটেনে বসবাস করছেন, এমন যদি হয় তাহলেতো তাঁর কোন দিন বাংলাদেশে গিয়ে রাজণীতি করা বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকেনা। সেই সাথে শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকান নাগরিক ও রেহানা পুত্র রেজোয়ান সিদ্দীকী ও কন্যা টিউলিপ সিদ্দীকীও ব্রিটিশ নাগরিক তাদের ক্ষেত্রে কি নিয়ম প্রযোজ্য হবে ? এই সুত্র ধরে তাদেরকি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে উৎসাহ দেখানো উচিত ? এবার কিছু যুক্তির কথা বলি, জনপ্রতিনিধী নির্বাচন করবে কারা ? ধরা যাক আমি কুমিল্লা ৮ নির্বাচনী এলাকার ভোটার। নির্বাচনে আমি যদি আমার এলাকার জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিতে যাই তাহলে আমাকে অবশ্যই সেই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে, কথা হলো আমি গত ৪ বছর ধরে প্রবাসে অবস্থান করছি, প্রবাসে এত ব্যস্ততার মঝে প্রার্থীদের সাথে পরিচিত মাধ্যম হলো সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেল।

তাও ৩০০ আসনের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের খবর গনমাধ্যমে ঘুরে ফিরে আসতে আসতে অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যপার। বাকী থাকে টেলিফোনে বা ইন্টারনেট। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধব আতœীয় পরিজনের সাথে যোগাযোগের সময় নিজের এলাকার খবর নেয়া কিংবা বছরে দু’একবার হলিডেতে দেশে বেড়াতে গেলে এক পলক দেখা। এখন কথা হলো এইটুকুই কি একজন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যথেষ্ঠ ? ধরে নিলাম কোন না কোনভাবে যোগ্য প্রার্থীকে প্রবাসীরা সনাক্ত করতে পারলো। তাছাড়া নির্বাচিত হলে জনপ্রতিনিধিরা যেহেতু একটি নিদিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচিত হবেন সেক্ষেত্রে তার পুরো প্রবাসীদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ কম থাকবে।

তারপরও প্রবাসীদের ভোট নির্বাচনের জন্য যতটানা জরুরী তারচেয়ে মনেহয় জরুরী প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো নিরসনে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়কে কার্যকর করা। প্রয়োজনে প্রাবসীদের সমস্যাগুলো দেখার জন্য প্রবাসীদের মধ্য থেকে টেকনোক্রেট পার্লামেন্টারিয়ান নির্বাচিত করা যেতে পারে। অথবা প্রত্যেক দেশ থেকে প্রবাসী উপদেষ্টা নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রবাসে বসেই তারা প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে মতামত দেবেন। তিনি তার কাজের জন্য প্রবাসীদের কাছেই দায়বদ্ধ থাকবেন।

প্রতিবছর প্রবাসীরা ভোট দিয়ে প্রয়োজনে তাকে সেই দেশের উপদেষ্টা বানাবেন। তাহলে সবার মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা থাকবে। কিন্তু প্রাবাসীরা দাবী তুলতে পারেন,আমরা প্রতি বছর ৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠাই যা বিদেশী সাহায্যের চেয়ে বেশী, আমি ভোট দেবোনা তো কে দেবে ? দেশ পরিচালনায় আমাদের অংশ গ্রহনও থাকতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তর হলো, প্রবাসীদের কল্যানের জন্য যে বিষয়গুলো উত্থাপন করা যায় সেই বিষয়গুলোতে সরকারের নজর বাড়ানোর জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। প্রবাসীদের মনোনিত উপদেষ্টা যিনি প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনে সরকারের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করবেন তার মাধ্যমেই সকল দাবী দাওয়া পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সাংবাদিকতার সুবাদে যে সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের নজরে আসে তার মধ্যে অন্যতম , প্রবাসীদের জায়গা জমি জোর করে দখল, আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সমস্যা , ভূয়া জমি বা ভূয়া ফ্লাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পরে টাকা গচ্চা যাওয়া ,বাড়ী কিংবা ব্যবাসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির স্বীকার হওয়া, বিমান বন্দরে হয়রানী, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের আরোহন ও অবতরণ কার্ড পূরণে জটিলতা, রেমিটেন্স প্রেরণে ব্যংক গুলোর দীর্ঘ সূত্রিতা এই সব। আর কিছু লোক আছেন বিদেশে আসবার আগেই দালালের খপ্পরে পড়ে অর্থ খুইয়ে সর্বশান্ত হওয়া। মোট কথা ঘুরে ফিরে এই সমস্যাগুলোর মধ্যেই প্রবাসীরা ঘুরপাক খায়। এই সমস্যাগুলোকে নিরসনের উদ্যোগ নিতে হলে প্রবাসীদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়কে শক্তিশালী করতে হবে। আরো একটি বিষয় আলোচনা হয়েছে সম্প্রতি, ’বেসরকারী ব্যংকগুলো বিদেশে একচেঞ্জ খুলতে চায়’ (১০ জুলাই , প্রথম আলো) এটি সম্ভব হলে হুন্ডি ব্যবসা অনেক কমে যাবে।

সেই সাথে প্রবাসীরাও নিশ্চয়তা পাবে। তবে প্রবাসে একচেঞ্জগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যংকের ছায়া তলে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। তাহলে প্রবাসীদের একটা শেষ আশ্রয়স্থল থাকবে। অতীতে ব্যক্তিগত মালিকাধীন বেশ কিছু রেমিটেন্স কোম্পানী মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ নিয়ে উধাও হয়েছে। তাই এখনও প্রবাসে সোনালী ব্যংক ই ভরসা।

তবে স্বল্প সংখ্যক শাখা আর দূর্বল ব্যবস্থাপনা দিয়ে সোনালী ব্যংক্ও সঠিক সেবা দিতে পারছেনা। কয়েকদিন আগে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধূরী লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে দারুন একটা কথা বলেছেন,”আপনারা নিজেদেরকে ব্রিটিশ বাংলাদেশী বলেন কেন ? আপনারাতো বৃটিশ , তবে আপনাদের সুন্দর একটা বাংলাদেশী হেরিটেজ আছে যা গর্ব করার মতো, নিজেদেরকে কেন আপনারা এথনিক মাইনরিটি বলে দাবী করে সুবিধা চাইতে যাবেন, আপনি বৃটিশ , বৃটিশ নাগরিক হিসাবেই আপনার দাবী উত্থাপন করবেন। ” আসলে আমরা প্রবাসে থেকেও না হতে পারলাম ব্রিটিশ না বাংলাদেশী , হয়ে রইলাম প্রবাসী !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।