মাথায় ফিমারের গুতা খেয়ে ঠায় বসে আছি । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,আমার জানের দোস্ত চারজন রাকিব,শুভ,ইমরান,আর আশিক দাত কেলিয়ে হাসছে। আমার মনে হচ্ছে এমন দোস্ত যেন হিটলারের ও না থাকে।
আদ্রিতা আমার মাথায় কিছুক্ষন আগে ফিমার দিয়ে বারী দিয়েছে। যারা জানেননা তাদের জন্য বলা ফিমার শরীরের সবচেয়ে শক্ত হাড্ডি।
ফিমার দিয়ে বারী দেয়া আর হকিস্টিক দিয়ে বারী দেয়া একই কথা । ভিড় জমে যাবার আগেই পালানো দরকার। জুনিয়ররা দেখে ফেললে এই মুখ আর কাউকে দেখানো যাবে না। ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে ঝুলে পরতে হবে।
আর তেমন কি দোষ ছিল আমার? আমি শুধু গত সাতদিনে ২১ বার প্রপোজ করেছি।
ঠিক প্রপোজ ও না। দেখা হলেই বলতাম, সুন্দরী আমায় বিয়া করবা? প্রথম কয়েকদিন শুধু হাসত। তারপর আস্তে আস্তে মুখটা গম্ভীর হত। আজ একেবারে ফিমারের বারী। রাকিব অবশ্য দুইদিন আগেই বলেছিল, মামা তওবা পইরা রেডি হও।
তোমার সময় শেষ। যেকোনোদিন তোমারে কোপানো শুরু করবে। আল্লাহর রহমতই বলতে হবে কোপ খাইনাই । ফিমারের বাড়ির উপর দিয়া গেছে।
আদ্রিতা আমাদের ব্যাচের সবচে সুন্দরী আর রাগি মেয়ে।
সুন্দরীরা একটু রাগি হয় তাতে দোষের কিছু নাই। কিন্তু ফিমারের বারী একটু বেশিই বাড়াবাড়ি । সব দোষ ঐ শাঁকচুন্নি বর আপুটার । এমন ভাবে ধরল কিছুতেই না করতে পারলাম না।
একটু খুলেই বলি তাহলে ।
বড় আপুটার নাম আদর । আদর আর আদ্রিতা দুই বোন । ওনাদের মা নাম রেখেছেন। কি রোম্যান্টিক নাম । বোন দুইটা একেবারে মায়ের মত হয় নাই।
পুরাই পাজির পা ঝারা দুইটা । আদর আপু যাও একটু নম্র ভদ্র । আদ্রিতা একেবারে মহিষাসুর মর্দিনী । আদর আপুর সাথে প্রথম পরিচয় সন্ধানীতে । বন্ধু আশিক পুরাই মানবদরদী ।
আমারে জোর কইরা রক্ত দিতে নিয়া আসছে । আমি আবার সিরিঞ্জ খুব ভয় পাই। সেই যে ছোটবেলায় একবার ডাক্তার এর মাথায় ইনজেকশন দেবার সময় বোতল ছুড়ে মেরেছিলাম । তারপর আর কোনদিন সিরিঞ্জ মুখো হই নাই । সিরিঞ্জ দেখে তো আমার ভিম্রি খাবার দশা ।
আশিকরে বললাম দোস্ত মানুষের জন্য কোনও সিরিঞ্জ নাই? আশিক বলল ফাজলামি করস?আইজকে রক্ত না দিয়া পার পাবিনা। হেল্পের আসায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছি ,তখনই আদর আপুকে প্রথম দেখি । কিছু কিছু মুভি আছে যা দেখলে খুব শান্তি শান্তি ভাব আসে,মুভিগুলাকে বলে ফিল গুড মুভি । আদর আপুর চেহারা হল ফিল গুড চেহারা । আপুর দিকে তাকিয়ে কাঁদকাঁদ চেহারায় বললাম আপু আপনি রক্ত নিলে দিব , নইলে দিব না।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল , আহা শান্তির উপর যেন আরেকটু শান্তির প্রলেপ। হায়। তখনকি জানতাম শান্তির মা কিছুক্ষন আগে মারা গেছে।
রক্ত নেবার জন্য আপু যেই সিরিঞ্জ পুশ করেছে ওমনি ফোয়ারার মত রক্ত ছুটলো ,রক্ত দেখে ত আমি শেষ। আশিকরে বললাম দোস্ত খবরটা বাবাকে জানাইয়া দিস ।
আর মারে বলিস ভালবাসি । ততক্ষনে রক্ত পরা বন্ধ হইছে । আদর আপুর দিকে তাকালাম চোখ লাল,শুধুই লাল আর একটুখানি মায়া। ওই মায়া টুকুই তো সব গরবর করে দিলো । ঝাড়ি দেবার বদলে আপুকে বললাম আপু কাদবেন না প্লিজ ,দুর্ঘটনা ত যেকোনো কারো হাতেই হতে পারত।
একবেলা ভাল মন্দ খাওয়ালে মাপ করে দিব। আপু হেসে ফেলল । বলল ঠিকাছে, রাত ৮ টায় লেডিস হোস্টেলের সামনে আসিস।
সেই থেকে শুরু । সপ্তাহে কম করে হলেও দুই দিন আপুর কাছে ভালমন্দের দাওয়াত।
আস্তে আস্তে দাওয়াত তা বেড়ে চারদিনএ, তারপর প্রতিদিন। কত ঘুরেছি আপুকে নিয়ে। ক্লাস ফাকি দিয়ে দুজনে ঘুরে বেড়িয়েছি কত জায়গায় । তখন ও কি জানি আদ্রিতা ওনার ছোট বোন ।
আদ্রিতা আমাদের ব্যাচ এর সবচেয়ে রূপবতী মেয়ে ।
প্রথমদিন ওকে দেখেই আমি ওর প্রেমে পরে যাই । কিন্ত আমার সামনে তখন লম্বা লাইন । ভাল ছাত্র থেকে শুরু করে পলিটিকাল লিডার,ছয়ফুটি থেকে শুরু করে বডিবিল্ডার সবাই আছে লাইনে । চারিদিকে তাকাই আর হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়াই । কোন আশার আলো দেখি না।
দিন যায়, আদর আপুর আদরে ভালই দিন কাটে, শুধু আদ্রিতার কথা নবে হলেই বুকটা ছটফট করে । শ্বাস নিতে পারিনা । ঘুমাতে পারিনা । সারারাত হোস্টেলের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করি ।
একদিন বিকেল বেলা ক্যাম্পাসের কদম গাছটার নিচে বসে সিগারেট টানছি , পিছন থেকে কে যেনও হাসান বলে ডাকল ।
তাকিয়ে দেখি আদ্রিতা । হাতে টিফিন বক্সটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমার বুকে তখন দেড়শ পাউন্ডের হাতুড়ীর বাড়ি পরছে , বললাম তুমি নিজে বানাইছ? আদ্রিতার চোখ সরু হয়ে গেল । ভুরু কুচকে বলল, আমি বানাব কেন আদর আপু পাঠাইছে। আমি তখন পুরাই হা ।
বললাম ইয়ে মানে আপু তোমার কাছে পাঠাইতে গেল কেন?তুমি কি ওনার রুমে থাক ? আদ্রিতা এবার একেবারে ফেটে পরল। কেন তুমি জাননা আদর আপু আমার আমার বড় বোন। আমার মাথায় এবার আকাশ ভেঙে পড়ল । আমতা আমতা করে বললাম, ইয়ে মানে ,ঠিক জানিনা তো।
তুমি জানবে কিভাবে? তুমি তো একটা ছাগল ।
এতদিন আপুর সাথে ঘুর ,আর আমার বোন এটা জাননা? রাম ছাগল একটা।
বিকাল বেলাই আপুকে ধরলাম, আপনি আদ্রিতার বোন একথা আগে বললেন না কেন? আপুতো অবাক। বললেন , জানতিনা? আমি বললাম, না।
জানলে কি করতি?
ইয়ে মানে আপু একটু সেট কইরা দাওনা।
কি কইরা?
মানে আপু আমি আদ্রিতাকে মানে ইয়ে।
ভালবাসিস?
বেশি।
যা যা হবেনা । আয়নায় নিজের চেহারা দেখছস?
দেখছি বইলাইতো তোমারে ধরছি। নইলেতো নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারতাম।
আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
এই বলে আপু চলে গেল। পরদিন আপুর জরুরি তলব।
শোন , তোর কথা বলছি আদ্রিতাকে?
কি বলছ?
বলছি ও বড় ভাল ছেলে। চেহারায় একটু এতিম এতিম ভাব আছে, কিন্তু মনটা একেবারে সোডিয়াম লাইটের মত। শুনে বলল কি জানিস?
কি?
ঐ ছাগলটা? ওইটা পঞ্চাশবার প্রপজ করলে ভেবে দেখতে পারি।
পঞ্চাশবার? আমি পারব?
চেষ্টা করে যা । চেষ্টায় সবই হয় ।
ইয়ে মানে কিভাবে প্রপজ করলে ভাল হয়?
ও মাচো ম্যান খুব পছন্দ করে। সরাসরি বলে দিবি সুন্দরী আমারে বিয়া করবা?
কাজ হবে?
একশো বার হবে । বুকে সাহস রাখ ।
আর কাল থেকে চেষ্টা শুরু কর।
তারপর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু ২১ বার হতেই ফিমারের বাড়ি । বাকিগুলো কিভাবে শেষ করব কে জানে।
বিকালে হোস্টেলে উদাস হয়ে সিগারেট টানছি ।
ক্যাম্পাসের সবাই ফিমার কাহিনী জেনে গেছে । আমার নতুন নাম হয়েছে ফিমার ম্যান । সব হোস্টেলের কোনায় কোনায় আমার পোস্টার। তাতে আমি ফিমার নিয়ে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে আছি । সব রাকিবের কাজ ।
সব বন্ধু বেইমান । এই বন্ধুদের সাথে একসাথে থাকার কোন মানেই হয় না । হিলট্রাক্স চলে যাব । দরকার হলে জুম চাষ করে খাব । হটাৎ অচেনা নাম্বার থেকে ফোন।
হ্যালো।
আমি আদ্রিতা। আমার সাথে একটু দেখা করবা ? জরুরি দরকার ছিল ।
কোথায়?
ক্যান্টিনে আসো।
আবার মারবানাতো ?
আমি বসে আছি ।
তুমি তাড়াতাড়ি আসো ।
আমি আর আদ্রিতা মুখোমুখি বসে আছি । আদ্রিতার চোখ ফোলা । চোখের কোনায় কোনায় কান্নার ছাপ স্পষ্ট ।
আমি খুব সরি ।
না আসলে আমি একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম ।
আদর আপু বিকাল থেকে কাদছে । এখন বিছানাপত্র ঘুচিয়ে ফেলছে , আর এখানে থাকবেনা বলছে।
আসলে উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেনতো তাই তুমি মেরেছ বলে রাগ করেছেন। আমি বুঝিয়ে বলব।
আমি মেরেছি বলে রাগ করেছেন?
তাইতো।
এবার আদ্রিতা রাগে একেবারে ফেটে পড়ল।
তোমাকে শুধুশুধু সবাই রামছাগল ডাকে? রামছাগলের মাথায় ও
তোমার থেকে বেশি বুদ্ধি থাকে। সারাবছর আপুর সাথে ঘুরে বেড়িয়েছ আর ২১ বার আমাকে প্রপজ করছ । আবার এখন বলছ আমি মেরেছি বলে আপু রাগ করেছে।
গাড়ল কোথাকার। কি দেখে যে আপু তোমার প্রেমে পড়লো।
আমি হা । আমার চারিদিকে তখন রিক্টার স্কেলের ৯ মাত্রার ভুমিকম্প ।
কিন্তু উনিতো আমার দুই বছরের সিনিয়র।
সারাবছর ঘোরার সময় মনে ছিলনা ?
কতক্ষন চুপচাপ বসে আছি জানিনা । সময় যেন আজ মধ্যবিত্তের বেতন। কিছুতেই চলছে না। লাফ দিয়ে উঠে পরলাম, না এভাবে বসে থাকলে চলবে না। আপু থুক্কু আদরকে আমার আটকাতেই হবে ।
কিছুতেই বাড়ি যেতে দেয়া চলবেনা । পরশুযে ভ্যালেন্টাইন ডে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।