আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই জয়েও সাভারের ছায়া

জয় মানে কেবলই আনন্দ নয়। কখনো কখনো স্বস্তিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় এর অর্থ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া জয়ের অর্থও এখন সেটাই। যে দলের বিপক্ষে হার মেনে নিতে না পারার মতো অপরাধ, সে দলের বিপক্ষে জয় একটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা পূরণ মাত্র।
প্রথম টেস্টের বিশাল হার সে কারণেই হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিল সবাইকে।

নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়ে সিংহ, তাই বলে এতটা সহজে জয় পাওয়ার আশা বোধ হয় তারাও করেনি। ওই টেস্টের পর বাংলাদেশ দলের প্রতিটা পদক্ষেপে ছিল ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা। দ্বিতীয় টেস্টে প্রতিজ্ঞাপূরণের কাজটা দারুণভাবে হলেও সেটাকে উৎসবের উপলক্ষ মনে করেনি মুশফিকুর রহিমের দল। খেলা শেষে মাঠের উদ্যাপনে বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাসই চোখে পড়েনি। ড্রেসিংরুমে রীতি অনুযায়ী ‘আমরা করব জয়’ বিজয়সংগীতও গাওয়া হয়নি।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পরপরই হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে গিয়ে যেন সবাই বোঝাতে চাইলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টাই আসলে রোজরোজকার ব্যাপার হওয়া উচিত। হারলেই বরং সেটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো যেতে পারে।
মুশফিকুর রহিম অবশ্য জয়োৎসব না করার আরেকটা কারণও বললেন। সাভার ট্র্যাজেডির কান্না এখনো শুকায়নি। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে আছে দেশ।

আহতদের আহাজারি আর স্বজন হারানোদের হাহাকারে হারারের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশও যখন বিষাদের মেঘে ঢাকা, উৎসবের কথা মনে আসে কীভাবে! ‘এ জয় এবং আমাদের সবার নৈপুণ্য আমরা সাভার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের উৎসর্গ করছি। যদিও জানি এটা এমন কিছু না। তবে এ মুহূর্তে এখানে বসে আমাদের এর বেশি কিছু করারও নেই। দেশে গিয়ে কিছু করার ইচ্ছা আছে। ম্যাচ জিতে আমরা আজ গান গাইনি।

উৎসবও করব না’—সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলার সময় জয়ের আনন্দটা বোধ হয় চোখমুখ থেকেও হারিয়ে গেল মুশফিকুর রহিমের।
তবে এই টেস্ট, এই জয় কিছু কিছু খেলোয়াড়ের জন্য বিশেষ কিছু তো বটেই। ম্যান অব দ্য সিরিজ রবিউল ইসলাম তাদের পুরোভাগেই থাকবেন। দুই টেস্টে ১৫ উইকেটই শুধু পাননি, বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল দায়িত্বটাও যেন তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের কোনো পেসারের এটাই সেরা পারফরম্যান্স।

পেসার-স্পিনার মিলিয়ে তৃতীয় সেরা। ফুটবল খেলে ফিরে আসা রবিউলের ঘর্মাক্ত চেহারা আর কথায় সেই সাফল্যেরই দ্যুতি, ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়ে যাব, এতটা আশা করিনি। একই সঙ্গে দলও জিতেছে। আসলেই খুব ভালো লাগছে। ’
মোবাইলে সম্ভবত দেশেই কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন পেসার জিয়াউর রহমান।

কথা শেষে অভিষেক টেস্টটা কেমন হলো—জানতে চাইলে হাসি ছড়িয়ে গেল মুখে, ‘সবচেয়ে বড় কথা আমার অভিষেক টেস্টে দল জিতেছে। শুধু এ কারণেই এই টেস্টটাকে মনে রাখব। ’ কিন্তু অভিষেক টেস্টে যে অল্পের জন্য গলায় পরা হলো না ৫ উইকেটের গৌরবমাল্য, সেজন্য কোনো আফসোস নেই? কিংবা প্রথম ইনিংসে উইকেট না পাওয়ার জন্য? জিয়া মনে হলো যা পেয়েছেন তাতেই তৃপ্ত, ‘প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও আমার মনে হয় আমি দুই ইনিংসেই ভালো বল করেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছি, সেজন্য উইকেটও এসেছে। সব মিলিয়ে অভিষেক টেস্টের পারফরম্যান্সে আমি খুশি।


আরেক পেসার সাজেদুল ইসলাম দুই ইনিংসে উইকেট পাননি একটিও। দ্বিতীয় ইনিংসে তো বলই করলেন মাত্র ৩ ওভার। প্রত্যাবর্তন টেস্টে জয়ের আনন্দ তাতে খানিকটা প্রলেপ দিয়েছে ঠিকই, তবে নিজের প্রসঙ্গ উঠতেই সাজেদুলের সরল স্বীকারোক্তি, ‘মনে হয় বোলিং নিয়ে আরও কিছু কাজ করার আছে আমার। আরেকটু ভালো হওয়া উচিত ছিল আমার বোলিং। ’
সাকিব আল হাসানের জন্যও এটা একধরনের প্রত্যাবর্তন সিরিজ।

প্রথম টেস্টে বোলিংয়ে বিধিনিষেধ ছিল। দ্বিতীয় টেস্টেও নাকি খেলেছেন ব্যথা নিয়ে। তার পরও দুই ইনিংসে ৪ উইকেট, ব্যাট হাতে ৮১ আর ৫৯ রানের দুটি ইনিংস সাকিবের ফিরে আসার ঘোষণাই দিল। সাকিব নিজে কতটা সন্তুষ্ট এই পারফরম্যান্সে? প্রশ্নটা সাকিব এড়িয়ে যেতে চাইলেও অজান্তেই বোধ হয় দিয়ে গেলেন উত্তরটা, ‘আমি কী বলব...আমি আর কীই-বা করেছি...। ’
কথাটা বলে সাকিবও যেন মনে করিয়ে দিলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় কিংবা দুটি ফিফটি আর কয়েকটি উইকেট পাওয়া আসলে আটপৌরে সাফল্যই।

এটা উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার উপলক্ষ নয়। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।