আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের দেশ, আমাদের অহংকার । আমাদের ভাস্কর্য, আমাদের ইতিহাস।

মনে ভেতর দ্বিধা, পা বাড়াতে বাঁধা, শেকল পড়া পায়, কদিন বাঁচা যায় । বেঁচে থাকা যে দায়। দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুল, মনের আগল খোল, রক্ত আবির অঙ্গে মেখে " সূর্যস্নানে চল " ১৯৭১। পৃথিবীর বুকে নতুন আরেকটি দেশ। বাংলাদেশ।

এই দেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দেয়। এই দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেয়। এই দেশের মানুষ সম্প্রীতির জন্য যুদ্ধ করে। এই দেশের মানুষ ৭১ এর পরেও দেশ থেকে শাত্রুদের নির্মূলে এক থালায় ভাত খেয়ে সংগ্রাম করেছে। এই দেশের মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো সংগ্রাম করে।

আশা রাখি এখনো এই দেশের মানুষ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করবে। সাথে থাকবে। যারা ভাস্কর্যের বিরোধীতা করছে তাদের বিতাড়িত করবে। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করছে তাদের বিতাড়িত করবে। যারা আমাদের ইতিহাস লালন করতে দিচ্ছে না তাদের বিতাড়িত করবে।

ভাস্কর্য কীসের জন্য ঃ আমরা এই প্রজন্ম ৭১ এর সংগ্রাম দেখিনি। আমরা ৭১ সম্পর্কে জেনেছি বই থেকে, দাদার কাছে গল্প শুনে। বই পড়ে, গল্প শুনে আমার মনে একটা আবছা ছবি তৈরি হয়েছে স্বাধীনতা নিয়ে। আর আমি যখন স্বাধীনতার ভাস্কর্য দেখি তখন আমার চোখের সামনে ধরা দেয় মুক্তিযুদ্ধ। " জয় বাংলা " স্লোগান দিচ্ছে একটা পা হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধা।

"অপরাজেয় বাংলা " দেখে জেনেছি নারীরা কীভাবে যুদ্ধ করেছে। চোখের সামনে ভাসে উঠেছে তাদের ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার দৃশ্য। তারা অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। আর এইসব ভাস্কর্য না থাকলে আমরা চোখের সামনে এইসব দৃশ্য দেখতাম না। মনের মধ্যে আবছা থেকেই যেত।

জাতির পিতা " বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের " ভাস্কর্য, ছবি না থাকলে আমরা কল্পনায় তাদের আঁকতে পারতাম না। রবীন্দ্রনাথের সাদা দাঁড়ি ছিল কি ছিল না, নজরুলের চুল কতটা লম্বা ছিল বুঝতাম না। উনাদের গান কবিতা ঠিকই পড়তাম কিন্তু উনাদের চেহারা আমরা ভুলে যেতাম। ভুলে যেতাম শেখ মুজিব কেমন ছিলেন। ভাস্কর্য, ছবি, এসবের জন্যই এখনো বিকৃত হয়নি আমাদের ইতিহাস।

কিন্তু অনেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করছে এই দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করার। তারা চায়না আগামী প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানুক। প্রত্যেকটা চৌরাস্তায় যদি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য থাকতো তবে ২১শে বইমেলায় যাওয়া দর্শনার্থীদের কাছ থেকে আমরা শুনতাম না " তারা ২১শে ফেব্রুয়ারি কি সেটা জানে না। স্বাধীনতা দিবস কবে সেটা জানে না। " এজন্যই প্রয়োজন ভাস্কর্যের।

যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে মুক্তিযুদ্ধ। আমি জানিনা আমার দাদার দাদা কেমন ছিলেন। শুনেছি অনেক সুদর্শন ছিলেন। এই কথা শুনে মনে আরো আক্ষেপ থেকে গেছে উনার চেহারা না দেখার। এখন আমার, আমার বাবার, আমার দাদার ছবি আছে।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শুধু গল্প শুনেই তাদের মনে রাখবে না। তাদের চেহারা গেঁথে থাকবে অন্তরে। আমাকে তারা ভুলবে না। নজরুলের কথা ছিল " আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমাকে দেবো না ভুলিতে " নজরুল যদি সেই সময় উনার একটা ছবি না রেখে যেতেন তবে হয়তো আমরা তাকে ভুলে যেতাম। নজরুলের গান গাইতাম কিন্তু উনার চেহারা মনে করতে পারতাম না।

আর এ জন্যই ভাস্কর্য প্রয়োজন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে ভুলে না যায় আমাদের ইতিহাস। যেন মুখে মুখে বিকৃতি না হয় এই ইতিহাসের। এবার আসি শাবিপ্রবির ভাস্কর্যের প্রসঙ্গে ঃ শাবিতে যদি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য হয় " একটা কামান পাকিস্তানের দিকে আরেকটা কামান দিল্লির দিকে " তবে একদিন একটা প্রজন্ম ভাবতে শুরু করবে আমাদের স্বাধীনতার শত্রু মনে হয় ভারত এবং পাকিস্তান। এরা মিলিত হয়ে আমাদের দেশকে আক্রমণ করেছে।

তাই এই নকশাটা কখনোই আমাদের স্বাধীনতার ভাস্কর্য হতে পারে না। হলে আগামীতে ইতিহাস বিকৃতি হবে। আর যদি বর্তমান প্রস্তাবিত ভাস্কর্য নির্মিত হয় তবে প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে বুঝবে যে এই ভাবেই দেশ স্বাধীনের ব্রত পালনে মায়েরা নিজ সন্তানকে উৎসর্গ করেছেন। আমরা চাই স্বচ্ছ ইতিহাস। আবছা ইতিহাস না।

আর কতকাল আবছা ইতিহাসে ডুবে থাকবো ?? আমরা ডুবে ছিলাম আবছা ইতিহাসে কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আবছা ইতিহাস থেকে মুক্ত করতে হবে। পরিচয় করিয়ে দিতে হবে সঠিক স্পষ্ট ইতিহাসের সাথে। আমার বাবার হাত ধরে আমি দেখেছি অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য । বাবা বর্ণনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা আমার মনে সেইসব ভাস্কর্য দেখে খুব স্বচ্ছ ভাবে ফুটে উঠেছিল ইতিহাস। আমাদের সোনার বাংলা গড়ার সেই সব দিনগুলি।

বিশ্ববিদ্যালয় ঃ ধর্ম নিশ্চয়ই অন্য কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে বলেনি। শাহজালাল (রঃ ) এর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করণ করা হয়েছে বলে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে যাবে এমন তো কোন কথা নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য ধর্মের মানুষও পড়াশুনা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিজ্ঞানিক কিছু পোড়ানো হয় যা ধর্মের সাথে মিলে না তা হয়তো অনেকেই জানেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ থাকতে পারে মন্দিরও থাকতে পারে।

তাতে অপত্তি করার তো কিছু নেই। বাংলাদেশের মধ্যে এইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হবে না হবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি নির্ধারণ করবে এতে ধর্মীয় ইস্যু টেনে আসলে কার স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে বুঝলাম না। অশান্তি সৃষ্টি করা নিশ্চয়ই ধর্মে লিখা নেই। এর পূর্বেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চেতনা ৭১ নামের একটি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আছে ।

তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করেনি। কিন্তু এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কিছু মানুষ সৃষ্টি করছে অশান্তি। ভাস্কর্য সৃজনশীলতার প্রতীক। ধর্ম নিশ্চয়ই সৃজনশীলতাকে বাঁধা দেয় না। এরা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার হুমকি দেয় এরা কি ধার্মিক ??? তবে এরা কারা ??? কারা কারা ?? এক নজরে দেখে নেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ঃ ১।

জাগ্রত চৌরঙ্গী ঃ ১৯৭৩ সালে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ভাস্কর্যটি স্থাপিত। ২। অপরাজেয় বাংলা ঃ ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়।

ভাস্কর সৈয়দ আব্দুলস্নাহ খালিদ ৩। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পশ্চিম পাশে ডাসের পেছনে অবস্থিত। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এর উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর শামীম সিকদার ৪। সংশপ্তক ঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত।

ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ৫। সাবাস বাংলাদেশ ঃ ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত । শিল্পী নিতুন কুণ্ডু । ৬।

বিজয় '৭১' ঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০০ সালের জুন মাসে তৈরি হয় এই ভাস্কর্য। ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরী । ৭। রাজু ভাস্কর্য ঃ ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপ। ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ।

৮। চেতনা ৭১ ঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর মোবারক হোসেন নৃপল ৯। বিজয় ৭১ ঃ যশোরের পাল বাড়ির মোড়ে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর খন্দকার বদরুল আলম নান্নু ।

১০। আদম্য বাংলা ঃ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ভাস্কর্য আদম্য বাংলা নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল । ১১। মোদের গরব ঃ বাংলা একাডেমীর সামনে এই ভাস্কর্যটি ২০০৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়।

১২ । ভাস্কর্যে বাংলাদেশ ঃ ভাস্কর গোপাল চন্দ্র পাল। যার তত্ত্বাবধানে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরে নির্মাণ হয় ৩৬০ টি ভাস্কর্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস। [img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/93025/small/?token_id=85652d0ca591154e7e35b790e9fd34f8 যেসব ভাস্কর্য মৌলবাদীদের আঘাতে ভাঙা হয়েছিল ঃ ১। বলাকা ভাস্কর্য ঃ ২।

অতলান্তিকে বসতি ঃ ৩। দুরন্ত বালক । ৪। বাউল ভাস্কর্য ঃ সহ আর কিছু ভাস্কর্য। আশা রাখি এসব ভাস্কর্য ভাঙায় কারা জড়িত ছিলেন সেটা সকলেই জানেন।

নতুন করে বলার কিছু নেই। এবার দেখি মুক্তিযুদ্ধ বিষয় ছাড়া কিছু ভাস্কর্য ঃ ১। চা কন্যা ঃ| ২। দোয়েল চত্বর ঃ ৩ । নজরুল ভাস্কর্য ঃ বাংলাদেশের প্রথম রাজাকার ঘৃণা ভাস্কর্য ঃ এসব ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক স্থানে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন অনেক অনেক ভাস্কর্য।

এবার দেখে নেই । মুসলিম প্রধান দেশের যতো ভাস্কর্য এবং কিছু কথা । এখানে ক্লিক করুন। এবং যে দেশ শরিয়া মোতাবেক আইনে পরিচালিত এবং যে দেশে কাবা শরীফ বিদ্যমান সেই দেশের কিছু ভাস্কর্য। এখানে ক্লিক করুন আবারো শাবিপ্রবি প্রসঙ্গে দুটি ছবি।

ফটো ক্রেডিট " ব্লগার তানভীর চৌধুরী পিয়েল " ১। ২, শাবিপ্রবিতে মুক্তিযুদ্ধের নতুন যে ভাস্কর্য নির্মিত হবে তার নকশা ঃ কেন জানি আমার বার বার মনে পড়ে যায় শ্রদ্ধেয় " শাহ্‌ আব্দুল করিমের " গান । " " আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম......... " *** *** প্রথম প্রকাশ করেছিলাম ঃ আমার ফেবুতে। দেখতে ক্লিক করুন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।