আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনজু পাহাড় আর পোহাং বীচে তিন দিন-পর্ব ১

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না

গত বছর অক্টোবরে সিউলের বাইরে থেগু শহরে কোরিয়ান কেমিকাল সোসোইটির দ্বিবার্ষিক সেমিনার ছিলো। ল্যাব থেকে বছরে দুবার আমরা এটায় অংশগ্রহন করি। থেগু ঘোরার পাশাপাশি বস আমাদেরকে আরো দুই জায়গায় নিয়ে গেলেন, পাহাড়ের শহর অনজু এবং সমুদ্র সৈকত পোহাং এ। আমি ছাড়াও আরও দুই ভারতীয় পিএইচডি স্টুডেন্টের বৌদেরকেও আমন্ত্রন জানালেন বস। অনেকটাই বাৎসরিক আউটিং।

তখনও শীত খুব বেশি পড়েনি তবুও একেবারে কমও না, মাঝে মাঝে খুচরো বৃষ্টি আরও ঠান্ডা বাড়িয়ে দেয়। ম্যাপে থেগু, পোহাং আর অনজুর অবস্হান দেখানো হয়েছে ক্যাম্পাস থেকে আমরা বাসে করে রওনা দিলাম সকাল ১০টার দিকে, প্ল্যান হলো অনজু তে পৌঁছে পাহাড়ের মাথায় উঠে সবাই মিলে লানচ করা। এর মাত্র কয়দিন আগে রোযা শেষ করেছি, পাহাড়ে ওঠার কথা শুনে একটু বিরক্ত, কারন এর আগে একবার ল্যাব থেকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলো। অনেক কষ্ট হয়েছিলো, সেই প্রথম, আড়াই ঘন্টা ধরে ওঠা, ওরা ওদের মতো শুকোরের মাংস এটা সেটা খেয়ে পেট ভরে, আমি খেতে পেরেছিলাম সামান্য কিছু ফল, সালাদ আর পানি। নীচে নামার পর ট্রাডিশানাল হোটেলে ওরা ইচ্ছা মতো খেলো, সেখানেও ধরা।

যদিও আমার কাছে চিপস বিস্কুট ছিলো কিন্তু ঐ সময় ওটা কিছুইনা। যদিও পাহাড়ের চুড়ায় ওঠার পর একটা অন্যরকম আনন্দ হয় যেটা বলে বোঝানো কঠিন। এবার পাহাড়ে ওঠার কথা শুনেই ল্যাবমেট মেয়েটাকে বল্লাম আচ্ছা সবাইকেই কি উঠতে হবে? জানতে চেয়েই আরো বিপদ ডেকে আনলাম সে আমাকে না উঠার নেগেটিভ দিক বুঝাতে লাগলো আর বসকে তেল দিতে লাগলো। আমিও মনে মনে ঠিক করলাম, যেভাবেই হোক এবার আমি উঠবোনা, পারলে ঠেকাস। অনজু যাওয়ার পথে পাহাড় আর আকাশের লুকোচুরি বাসে করে আমরা পাহাড়ের পাদদেশে খুব সুন্দর বাংলো বাড়িতে পৌঁছালাম।

ব্যাগপত্র রেখে আমরা গেলাম কাছের রেস্টুরেন্টে, পাহাড়ে ওঠা পূর্ববর্তী হালকা নাস্তা সেরে নেয়ার জন্য। একগাদা নুডুল সাথে হাফ সিদ্ধ ডিম, আর আটা, সীমবিচি দিয়ে একরকম পিঠা। তাও আবার নুডুল গুলো কাটা না। খাওয়ার সময় কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে খেতে হয়। এখনও বসকে বলতে পারছিনা যে পাহাড়ে উঠবোনা।

ভারতীয় ল্যাবমেট টাকে বল্লাম একটু বলে দেয়ার জন্য। সে একবার বলতেই কাজ হয়ে গেলো, আমি যাচ্ছিনা দেখে তো মেয়ে ল্যাবমেটটার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার যোগাড়। আমার মনে তখন বিজয়ের আনন্দ, বেচারা ভাবতেই পারেনি আমি এ যাত্রা বসের কাছ থেকে না যাওয়ার অনুমতি পাবো। এই পথ ধরে যেয়ে পৌঁছালাম বাংলো বাড়িতে দুই তলা বাংলো, উপরে মালিক একপাশে থাকে আর একপাশে একটা বড় রুম, সাথে কিচেন। খুব পরিপাটি রুমটা, ওখানে ই বৌকে নিয়ে বসে টিভি দেখতে লাগলাম।

রুমের সামনেই বিশাল খোলা বারান্দা, চারপাশে পাহাড় ঘেরা আবার দূরের পাহাড়ের রেখাটাও খুব সুন্দর দেখা যায়। ওদের ফিরতে মিনিমাম ৪/৫ ঘন্টা। আধাঘন্টা পরেই শুরু হলো বৃষ্টি, বুঝলাম ওদের পাহাড়ে ওঠার বারোটা বাজবে। আসলেই তাই, পিছলা পাহাড়ে ওঠা বাদ দিয়ে ঘন্টাখানেকের ভিতর ব্যাক করলো ওরা। অবশ্য ততক্ষনে ফাজিল বৃষ্টিও বন্ধ হয়ে গেছে।

পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলা ছোট্ট ঝর্না ধারা এবার নীচে বারবিকিউ করার তোড়জোড় শুরু হলো, চিকেন আর পোর্ক। চিকেন ফ্রাই ও আছে শুধু আমাদের জন্য। প্রচুর আঙুর, সালাদ আর ড্রিংকস। আঙুর মাচার নীচে বসেই বিকালের দিকে শুরু হলো আমাদের খাওয়া পর্ব। মাঝে মাঝেই চলসে বসদের ভিতর মজার কাজকর্ম।

এক বস তো হাই ভলিউমে গান গাওয়া শুরু করলেন, সেকি দারুন গলা, ইংরেজী গান ও গাইলেন তিনি। পরে শুনলাম জোয়ানকালে নিয়মিত রেডিওতে এবং বিয়ের প্রোগ্রামে গাইতেন তিনি। বেশ কয়েকটা গান শুনলাম তার কাছ থেকে। এরকম মজা করতে করতে রাত ৯ টা বেজে গেলো, নীচ তলায় দুই রুমে সব বস আর মেয়েদের থাকার ব্যবস্হা আর উপরের রুমটায় আমরা সব ছেলেরা। বস আবার দুস্টামি করে বলছে চিন্তা করোনা আগামীকাল রাতে তোমরা কাপলরা একসাথে থাকতে পারবে।

হোটেলে রুম বুক করা আছে তোমাদের জন্য, একেবার সমুদ্রের গায়ে। ..... (ছবিগুলো অন্যের ক্যামেরায় তোলা, তখন আমার ক্যামেরা ছিলোনা, আর হার্ডডিস্ক ক্র্যাস করায় কিছু ছবি হারিয়েছি, যেগুলো আবার উদ্ধার করতে পেরেছি তার থেকে কিছু দিলাম)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।