আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইস! একটুর জন্য...

এ কথা চোখ বন্ধ করেও বলা যায়, আবার চোখ খোলা রেখেও বলা যায়_ পানির অপর নাম যদি জীবন হয়, তাহলে জীবনের অপর নাম আফসোস। একটুর জন্য নানান কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ার আফসোস। এই তো ক'দিন আগেই জিততে জিততে ড্র আর পরাজয়ে ফিরে এলো ফুটবল দল। শেষ মিনিটে গোল খাওয়া_ আহা কী আফসোসটাই না লাগল! এমন আফসোস লেগেই আছে। সেদিন বাসার জন্য সোফা কিনতে গিয়েছিলাম পান্থপথে।

ইচ্ছে ছিল বাসা থেকে ৩টার দিকে বের হব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বের হতে হলো ৫টার পর। যখন সোফার দোকানে গিয়ে পেঁৗছলাম তখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। তারপর এই দোকান সেই দোকান খুঁজতে খুঁজতে একটা পছন্দসই সোফা পেয়ে গেলাম। আরও খুশির ব্যাপার হলো সোফাটা একদম দরজার কাছে ছিল।

আর দরজার কাছে থাকা মানেই সোফাটা বের করে ভ্যানে তুলতে বাড়তি লোকের প্রয়োজন হবে না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, যদি দুই হাজার টাকা বেশিও দিতে হয়, সোফাটা আমি নেবই। আমি সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করলাম_এটার দাম কত? সেলসম্যান একটা বাণিজ্যিক হাসি দিয়ে বলল_সরি, এইটা বিক্রি হয়ে গেছে। এই তো পাঁচ মিনিট আগেই বিক্রি হলো। আমার তখন মনে হচ্ছিল সোফার হাতলে নিজের মাথাটাকে ঠাসঠুস বাড়ি মারি।

কিন্তু অন্যের সোফার হাতল ভাঙলে জরিমানা দিতে হবে, এই ভয়ে বাড়ি মারলাম না। তবে একটুর জন্যে ভালো একটা সোফা কিনতে না পারার যে আফসোস, এই আফসোস মনে নিয়েই আরেকটা সোফা কিনতে হলো। তবে এই সোফাটা মোটেই পছন্দ হয়নি। কিনতে হবে তাই কেনা। একটুর জন্য ভালো জিনিস মিস করার পর দায়সাড়া জিনিস কিনলে যে বিড়ম্বনাটা হয়, সেটা এখন পোহাচ্ছি।

সোফাটা পাবলিক বাসের তুলনায় কোনো অংশেই কম দোলে না। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা যেটাকে মনে করি সেটা হচ্ছে আমি আমার ছাত্রত্ব শেষ করতে পেরেছি। কারণ ছাত্রজীবনের পদে পদে আফসোস। সবচেয়ে বড় আফসোসের শিকার হতে হয় পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। অল্প কয়েক নম্বরের জন্যে ফেল মারার পর মুখে আফসোসসূচক চুকচুক আওয়াজ তুলে বলতে হয়_ইস, একটুর জন্য পাস করতে পারলাম না।

পরীক্ষার হলে দু-এক মিনিটের জন্য যখন প্রশ্নোত্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশটা লেখা যায় না তখনও একই আফসোস_একটুর জন্য পারলাম না দোস্ত। তবে এ প্রসঙ্গে একটা গল্প না বললেই নয়। ঘণ্টা পড়ে যাওয়ার পর শিক্ষক যখন এক ছাত্রের খাতা টেনে নিতে চেষ্টা করলেন, ছাত্র তখন অনুরোধ করে বলল, স্যার, আর পাঁচ সেকেন্ড সময় চাই। শিক্ষক বললেন, তুমি আর এক সেকেন্ড সময়ও পাবে না। ছাত্র অস্থির হয়ে বলল, স্যার, আপনি যদি আমাকে এইটুকু সময় না দেন, তাহলে মনে রাখবেন, একটুর জন্য ইতিহাস পাল্টে যাবে।

শিক্ষক অবাক হয়ে বললেন, মানে? ছাত্র বলল, স্যার, আমি খাতায় লিখেছি 'মীর জাফর নবাবের বিশ্বাসের মূল্য দেন। ' আপনিই বলেন স্যার, এটা লিখলে ইতিহাস বিকৃত হবে না? শিক্ষক জানতে চাইলেন, তাহলে তুমি কী করতে চাইছ? ছাত্র বলল, আমি তো আগেই বলেছি আমি পাঁচ সেকেন্ড সময় চাই। পাঁচ সেকেন্ড সময় পেলে ইতিহাসটা ঠিকঠাক মতো লিখতে পারব।

কীভাবে জানেন? বাক্যটার শেষে একটা 'নাই' যোগ করে দেবো। বাক্যটা হয়ে যাবে, 'মীর জাফর নবাবের বিশ্বাসের মূল্য দেন নাই।

' হ্যাঁ, একটুর জন্য অনেক কিছুই হতে পারে। তবে সব কিছুর উদাহরণ তো আর দেওয়া সম্ভব না। একটা উদাহরণ দিয়ে ইতি টানা যাক। আমার এক প্রতিবেশী আফসোস করছে, ইস, একটুর জন্য আমার ছেলের চাকরিটা হলো না। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, একটুর জন্য চাকরি হয়নি, তার মানে ভাইভায় নিশ্চয়ই এক আধ নম্বর কম পেয়েছে? প্রতিবেশী বলল_জি্ব না।

যে চাকরিটা দিচ্ছে, তার বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আমার সঙ্গে। ছোট একটা কারণে বিয়েটা হয়নি। যদি সেদিন বিয়েটা হতো, তাহলে আজ সে আমার শ্যালক হতো। শ্যালক মানেই আমার ছেলের মামা। চাকরিটা তো তখন মামার জোরেই হতো, তাই না? ইস! একটুর জন্য..

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।