আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন হাবা ছিলাম -শেষ

"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার

আমার বয়স যখন ৬ তখন ছোটখালার আকদ হয়েছিল ঢাকায়, আমরা ২বোন বড় মামা মামীর সাথে ২দিন আগেই ঢাকায় গিয়েছিলাম। আম্মু আব্বুরা গিয়েছিল বিয়ের দিন। বিয়ের দিন অনুষ্ঠান শেষ হবার আগেই ঘুমিয়ে পড়ি। আম্মুরা আমাকে নিয়ে হোটেলে উঠেছিল। হোটেলের একটা রুমে আমি আর চানাচুর আম্মুদের সাথে আরেকটা রুমে ছিল মেজখালা খালুর সাথে বুবু।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুর সাথে মেজখালাদের রুমে বুবুর সাথে দেখা করতে গেলাম। আম্মু কিছুক্ষণ পরে চলে আসলো, আমি থেকে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমি ওই রুম থেকে আমাদের রুমে যাবার জন্য বের হলাম। তারপর ঠিক সামনের রুমটার দরজা খুলতে যেয়ে বেকুব সাজলাম খোলে না। তারপর একই রকম অনেকগুলো দরজা দেখে আমি পুরা কনফিউজড হয়ে হাবার মত ভাবছি এখন আমার কি কান্নাকাটি করা উচিত কিনা।

তারপর কাদতে শুরুও করলাম। এমন সময় একটা হোটেলবয় এসে বলল, কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি আমার আম্মু আব্বুকে হারিয়ে ফেলেছি। লোকটা বলল, কালকে বিয়া খাইতে গেছিলা? আমি বললাম, হ্যা। তারপর ওই লোক আম্মুদের রুমে নিয়ে গেল যখন আমরা কাজিনরা খেলতাম ভাইয়ারা সবসময় আমাকে দলে নিতো, তাদের যুক্তি ছিল আমি ছোট তাই আমাকে দলে নিচ্ছে। আমরা মোট ৫ বোন ছিলাম আর ২ ভাই।

ওদের ৪জনকে একদলে দিতো, আর ওরা হারতো। আমি আনন্দে আভিভূত হয়ে ভাবতাম, ভাইয়ারা কত ভাল আমাকে ভাল টিমে নিচ্ছে কিন্তু বাস্তব ছিল বড়ই কঠিন। আমরা সাধারণত ৭চারা বা ডিমের কুসুম খেলতাম যেখানে হাতের নিরিখটা খুব জরুরী ছিল। আপুরা এইটা ভাল পারতো না, আর ভাইয়ারা ভাল পারলেও আমি অনেক ভাল পারতাম তাই ওরা চালবাজি করে আমাকে দলে রাখতো যখন নাইন টেনে পড়ি তখন আমার এক কাজিনের ছেলে আমাদের বাসায় তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসলো আম্মুকে দেখাতে। কিন্তু সে আম্মুকে ভয় পাচ্ছিল তাই বলে নি ওটা ওর গার্লফ্রেন্ড, বলেছিল ওইটা ওর বন্ধুর বোন।

আমরা ২বোন মেয়েটার সাথে অনেক গল্প করলাম কিন্তু একবারও ধরতে পারি নাই ব্যাপারটা। এরপর আমার আরেক কাজিন(জাহিদ) বলল, আরে জানো ওইটা ওর গার্লফ্রেন্ড!! আমি আর বুবু তো তার কথা বিশ্বাসই করলাম না বরং আরো ওই ভাইয়াকে ভুল বুঝলাম। বললাম, জাহিদ ভাইয়ার মেন্টালিটি খুবই খারাপ!! ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ককে কিভাবেই না কলঙ্কিত করছে এ ঘটনার এক সপ্তাহ ঘুরতে পারে নাই ওই মেয়ে এসে তার শ্বশুর চানাচুরকে সালাম করল। আমি কলেজে থাকতে একবার এক মেয়ে আমাদের পটিয়ে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে গেল। ওখানে তার এক পাতানো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।

আমরা প্রথমে বুঝি নাই পরে সে তার সেই ভাইকে অনেকদিন ড্রিঙ্ক করে না, তাই সেদিন করার জন্য রিকোয়েস্ট করতে লাগলো। আমরা ২জন ওর কথা শুনে তখনও অতটা হতবাক হই নি হলাম তখন যখন তাকে ওই ছেলে একটা বাজে গালি দিল, সে সেই গালি শোনার পর বলে কেন ভাইয়া তাও দাত কেলিয়ে। এরপর সেই ছেলে আমাদের স্কুল কোনটা শুনে বলল, আরে আমি ওই স্কুলেরই ছাত্র, ৯৫ ব্যাচ। এবার আমাদের বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করল কারণ উনি আগে আমাদের এদিকেই থাকতেন। আমি হাবার মত পুরা বাসার ঠিকানা বলতে শুরু করেছি, আমার সই আমাকে দিল পা দিয়ে একটা পায়ে জোরে পাড়া আমি বুঝলাম ও আমাকে থামতে বলেছে।

আমি থেমে গেলাম। তারপর আমরা বাসায় আসার কথা বললাম, তারা তো ছাড়বেই না, কেন থাকবা না এ নিয়ে ঢং শুরু করল ২ জন। আমরা তো বিরাট ফ্যাসাদে কি করবো!! পরে বললাম, বাসায় স্যার আসবে তাই যেতেই হবে, বলে কোন রকম আল্লাহ হাফেজ বলে ওই মেয়েকে বাই জানালাম। এরপর কলেজে ও এই দরজা দিয়ে ঢুকলে আমরা অন্য দরজা দিয়ে ঢুকতাম এবার যে হাবামীর গল্পটা করতে যাচ্ছি এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ হাবামী বলে আমার ধারণা। এইচএসসিতে আমি জীবনের সবচেয়ে বেশি ফাকি দিয়েছি।

প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলোও কখনোই করি নি, আমাদের (আমি ও আমার সই) একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন যিনি তৎকালীন বিআইটি যা বর্তমানে কুয়েট এ পড়তেন। উনি ছিলেন এর উষ্কানীদাতা। ফাইন্যাল পরীক্ষার পরেও যখন আমার প্রাকটিক্যাল দেখাচ্ছিল কলেজে উনি তখনও যেতে নিষেধ করলেন। বললেন, আরে ধুর!! ওসব কি শেখার কিছু আছে!! আমি তোমাদের বই দেখে ছবি একে বুঝাচ্ছি তোমরা সেভাবে করলেই পারবে। আমরা খুশিতে আভিভূত আমরা ভাবলাম তাহলে আর কষ্ট করে কেন কলেজ যাওয়া।

এরপর ফিজিক্স প্রাকটিক্যালে উনি ফার্স্ট পেপারের জন্য ৪টা এক্সপেরিমেন্ট আর সেকেন্ড পেপারের জন্য একটা এক্সপেরিমেন্ট (প্রিজম) শেখালো। প্রিজম সবচেয়ে কঠিন এক্সপেরিমেন্ট তাই ওই বছর স্যাররা ওই বছর শেখায়ই নাই। এরপর স্যাররা বললেন, কোনটা চাই? আমরা বললাম , প্রিজমের টা। স্যাররা বললেন, ওটাতো শেখাই নি এবার। তোমরা কেমনে পারলা? আমরা বললাম, আমাদের স্যার শিখিয়েছেন।

এরপর বিস্তারিত শুনে উনারা দিলেন কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত প্রিজম মেলাতে ব্যর্থ হলাম তারপর স্যাররা বিশাল টেনশনে পড়ে গেলেন কিভাবে আমাদের পার করবেন? পরে ফার্স্ট পেপারেরটা দেখে বললেন, ঠিকাছে সমস্যা নাই কিন্তু সেকেন্ড পেপারে শুধু মূলতত্ত্ব লেখার জন্য মার্কস পাবা। আমরা এতেই খুশি কিন্তু ২ জন ঠিক করলাম বাসায় বলা যাবে না। এরপর আসলো কম্পিউটার শিক্ষা প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা। এখানেও আমরা ফাকিবাজি করতে যেয়ে ধরা খেয়েছিলাম যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম উনি আগের থেকেই জানতেন উনি আমাদের এক্সটার্নাল থাকবেন তাই প্রাকটিক্যাল খাতাটা আমরা আর ঠিকমত তৈরি করি নি। উনি বললেন, পরীক্ষার দিন আমি না আসা পর্যন্ত তোমরা হলে ঢুকবে না।

এরপর পরীক্ষার দিন স্যারের আর খোজ নাই (আম্মাআআ) আমরা ২জন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না এমন সময় আমার সইয়ের পিতাজী কলেজে আসলেন কলেজের এক স্যার উনার বন্ধু তার সাথে দেখা করতে আমরা কেন পরীক্ষার হলে ঢুকি নাই একথা জিজ্ঞেস করলেন। আমরা কি বলবো খুজে পাচ্ছিলাম না, ভাগ্য ভাল স্যার সেই সময় আসলেন আর আমরা পরীক্ষা দিতে চলে গেলাম। কিন্তু আংকেল খোজ নিয়ে সব বের করে ফেললেন ফিজক্সের কাহিনী আমরা অসহায় ২ বেচারি মুখ বুজে আবার এক ঝাটকা কথা শুনলাম এরপর লজ্জায় সাইন্স ছেড়ে দিয়েছি এখনও যে খুব চালাক তা না কিন্তু আগের থেকে তুলনামূলক কম হাবা বলেই নিজেকে মনে হয় এক ধরনের মানসিক শান্ত্বণা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।