আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রাক এবঙ মটর সাইকেলের সখ্যতা ও ছেলেটি...ফাইনাল পর্ব



ছেলেটি জ্ঞান ফেরার পর দেখলো- বিশাল একটা রুমে শুয়ে আছে। ছাদটা অনেক উপরে । খুব ধীরে একটা ফ্যান ঘুরছে। তার বিছানার পাশে ছোট দুই ভাই আর ছোট বোনটা দাঁড়িয়ে...। উঠতে গিয়ে টের পেল, তার ডান হাত আর ডান পা ভারী, নাড়াতে পারছে না।

ঝট করে সব মনে পড়লো তার....দাউদকান্দি ব্রিজ....ট্রাকের সাথে ধাক্কা...ডান হাত আর ডান পা থেকে রক্ত পড়া....মটর সাইকেল নিয়ে কোনো মতে টোল প্লাজায় পোঁছানো...। ছোট ভাইটাকে ডেকে জানতে চাইলো- তার মটর সাইকেলের কী অবস্থা ? ওটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, আশ্বস্ত করলো ছোট ভাই। ইতোমধ্যে লোক পাঠানো হয়েছে মটর সাইকেল আনার জন্য। পায়ের অবস্থা খুব খারাপ- ধরেই নিয়েছে ছেলেটি। ভয়ে কাউকে পায়ের অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলছে না...।

পুরো ডান হাতে প্লাস্টার। হাত গলায় ঝুলানো। খুব ঘুম পাচ্ছে তার । ছোট বোনটি পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে...কখন জানি ঘুমিয়েও পড়লো... আবার যখোন ঘুম ভেঙ্গেছে, তখোন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সারা রুমে অনেক মানুষ ! ছেলেটির অফিসের ৩/৪ জন, ছোট বোন এবং তার হাফ ডজন বান্ধবী, ছেলেটির কিছু বন্ধু বান্ধব.... ছেলেটির চোখ খুঁজছে আরো কাউকে.... ছোট বোন ফিসফিস করে বললো- "মেজো, তোমার বউ কে আনার জন্যে লোক পাঠানো হয়েছে, পোঁছে যাবে ঘন্টা খানেকের মধ্যে..."।

দাউদকান্দি ব্রিজের টোল প্লাজায় এসে জ্ঞান হারানোর পরের ঘটনা জানা গেলো ছোট ভাইয়ের কাছে... ছেলেটির মানিব্যাগ থেকে আইডি কার্ড দেখে তারা ছেলেটিকে কুমিল্লার বাস তিষা এক্সপ্রেসে পাঠিয়ে দিলো। বাস কাউন্টারে পোঁছার পর ওরা ফোন করলো ছেলেটির অফিসে। অফিস থেকে লোক জন এসে তাকে নিয়ে গেলো সদর হাসপাতালে। হাতের একটা আঙ্গুলের তেমন কিছু হয়নি। অন্যটাকে মেরামত করতে গিয়ে এদিক সেদিক থেকে মাংশ আর চামড়া টেনে সেলাই দিতে হয়েছে মাত্র ১৮ টা।

পায়ের দুটো আঙ্গুলের হাড় ভেঙ্গেছে। পুরো ডান পা প্লাস্টার করা । ১৫ দিন বাদে খুলে দেবে। এ ১৫ দিন নো নড়ন চড়ন... সন্ধ্যার মধ্যে ছেলেটির বউ এল। সারা রাস্তায় যে কেঁদেছে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে তার চোখ দুটি।

যাকগে, ৩ দিন পর ছেলেটিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। ক্র্যাচ কেনা হলো তার জন্যে। সারাটা সময় বিছানা শুয়ে বই পড়া আর টিভি দেখা ছাড়া কোন কাজ নেই ছেলেটির... এভাবেই একদিন ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠে। আস্তে আস্তে অফিসে যাওয়া শুরু করে। প্রায় মাস তিনেক তাকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে...এখনও দাইদকান্দি ব্রিজের উপর দিয়ে কোথাও যাবার সময় সেদিনের স্মৃতিটা চোখের সামনে ভেসে উঠে।

পাশে কেউ থাকলে বলে. " জানো, এই ব্রিজের মধ্যে আমার রক্ত আছে..." ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।