আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে



আজ কবি গুরুর জন্মদিন। ২৫ শে বৈশাখ,১৪১৫ সাল। ১৪৭ তম জন্মদিন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কাল থেকেই ভাবছিলাম কিছু লিখি। ব্লগে লেখার কারনে একটা তাগিদ কাজ করে।

মাঝে অনেক সময় গেছে, শুধু ভাবনাতেই শব্দ সাজানো খেলা খেলে। বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনে একটা বন্ধু সভায় যাই। গান গাই। কবিতা পড়ি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ওখানে বাংলায় গানে করে ,কবিতা করে।

আজ সেখানে কবি গুরুর জন্মজয়ন্তী হলো....কাল ও অনুষ্ঠান হবে। গান ও কবিতায় দারুন জন্মদিন রবীঠাকুরের। ছেলেবেলা থেকে বড়বোনের গাইতে শোনা,"ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু,পথে যদি পিছিয়ে,পিছিয়ে পড়ি কভু। "কানের মধ্যে ,বুকের মধ্যে বাসা বাঁধলো.......আমি নাকি তখন ভালো করে কথা বলতে শিখি নাই। অথচ গাইতাম সেই গান।

ছোটবেলায় যখন গান গাওয়া শুরু হলো। লালমনিরহাট এর চাঁদের হাঁটের গোকুলদা বলেছিলেন ,"কখনো রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া কিছু গাইবিনা। "কেনো যেনো অন্য গান আর গাওয়ার চেষ্টাও করিনি। আব্বা মাঝে মাঝে বলতেন মা ওই গানটা শোনাও তো,"আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়। "আমি বলতাম আব্বা আমি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া কিছু গাইনা।

আব্বা তখন বলতেন ঠিক আছে তাই গাও। শোনাতাম। "এই উদাসী হাওয়া পঠে পথে মুকুল গুলি ঝরে। " সেইসব সময়ে আমি আমাদের উপর তলায় থাকা লতা আপা , কখনো আমার আপুর সাথে বসে বসে গীতবিতানের গান গাইতাম....। সুর না জানা গান গুলো নিজেদের সুরে গাইতাম।

যার কারনে গীত বিতানের কোন পাতায় কোন গান মুখস্ত ছিলো। ভাইজান ঢাকা থেকে বাড়ী আসবার সময় ক্যাসেট করিয়ে আনতো। সুবিনয় রায়,অর্ঘ্য সেন,চিন্ময়,দেবব্রত,সাগর সেন থেকে শুরু করে কত শিল্পীর যে গান। আমাদের ছেলেবেলা মানে অজস্র বই আর গান। অবসর মানেই গান আর গান।

নিজের লেখাপড়ার কারনে যখন ঢাকাতে ,গান শেখার সুযোগও এলো ছায়ানটে....অথচ পড়ালেখার চাপে হলোনা। তবে মাঝে মাঝে রাত জেগে বসে গানের পর গান.......দীনা,লুলু,শেলী,শান্তু.......সব একসাথে। আহারে স্মৃতিময় সেইসব দিন। আমার কালো রং এর হারমোনিয়ামটা কে জানে কোথায় ধুলোমাখা পড়ে আছে। আজ বিকালে ব্লগে এসে যখন দেখলাম ,"এক বৃষ্টি ভেজা দিন" কবিতার মন্তব্যে এসে ব্লগের দারুন এক লেখক বিহংগ লিখে গেছে......"বৃষ্টির জলরাশির ভাবগম্ভীর নিনাদে,কিংবা বাংগালী মানুষের মননের শংখনাদে, প্রকৃতি,প্রেম ,আর জীবনবোধের যার লেখনি আমাদের প্রাণদ্যোতনায় চির ভাস্বর ,সেই কবিগুরুর আজ জন্মদিন।

কবির জন্মদিনে ব্লগের পাতায় আপনার নতুন কবিতা প্রত্যাশা করছি, "কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধান্জলি" এরকম কিছু। " খুব বিস্মিত লাগলো। আমার ভিতরের অদ্ভুত সেই দ্যোতনা.......কবি গুরুর প্রতি প্রগাঢ় টান। যার গানে আমি হারিয়ে যাই... লেখার তাড়না আমার ও হচ্ছিল। কিন্তু এই তাগিদ টুকু খুব অনুপ্রাণিত করলো।

যেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে ছোটবেলা থেকে মায়ের বলা কবিতা,"দুই বিঘা জমি" থেকে চিনেছি। বোনের গান থেকে জেনেছি। সেই রবীন্দ্র নাথকে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি অনায়াসে। যেবার শেষের কবিতা পড়েছিলাম.........ক'দিন ঘুমাতে পারিনি। অবাক লাগতো।

এত আধুনিকতা! আজ যখন কেউ বলে ,"দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর ভালোবাসিবারে দে মোরে অবসর। "কেমন অবাক যে লাগে। এটাতো আমাদের রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। লিখেছেন........."কালের যাত্রা ধ্বনি শুনিতে কি পাও"। অমিত আর লাবন্যের প্রেম দূর্ণিবার।

অথচ কেমন শান্ত। এক সময় সমাপ্তি নাটকের মৃন্ময়ী ও খুব ভাবাতো। এভাবেই সেই কবিগুরু জীবনের নানান সময়ে প্রভাবিতে করেছেন...। জোড়াসাঁকোতে ১৪৭ বছর আগে জন্ম নেয়া সেই অদ্ভুত মানুষটা এভাবেই আমাদের অনেকের জীবনে জড়িয়ে আছেন.....আলো হয়ে। তাঁর লেখা পুজা,প্রেম,ঋতু,বিচিত্র,প্রকৃতি পর্বের গান শুনলে অবাক হতে হয়......এমন কিছু নেই যা তাঁর দৃষ্টি থেকে দুরে থেকেছে।

অনুভব থেকে দুরে থেকেছে। তিনি সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর......যাকে ভালোবেসে দাঁড়িওয়ালা বুড়ো বলা হয়। (বিহংগ আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা ..এই লেখাটুকু নাও হতে পারতো। যদি একটু হলে ও ভালো লেগে থাকে। আপনার লেখাটুকুও তার জন্য শুভেচ্ছার দাবীদার।

) কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধান্জলী কবি আজ ১৪৭ তম জন্মদিন আপনার। আজ ২৫ শে বৈশাখ'১৪১৫ সাল। আজকের সকালটা খুব রৌদ্রময় ছিলো। টিউলিপ ফোঁটা সকাল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুর।

গাছগুলো নতুন পাতায় ভরছে প্রতিদিন। ভাবছিলাম... আপনাকে ভাবছিলাম....... আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি....র কবি। ১৪৭ বছরের আগের সেই সকালটা কেমন ছিলো? এমনই রোদেলা। উন্মনা বাতাসের এক সকাল? ট্রোজান রাস্তাটা ধরে সামনে যাই। সেন্ট লুইস -ম্যারি দ্য মন্টফোর্ট চার্চের সিড়িতে বসি।

আশে পাশের বাতাস গুলো আমার জন্য কি অপেক্ষায় ছিলো? গাছের নতুন সবুজ পাতাগুলো দুলছিলো। আমি এক পরবাসী মেয়ে একলা বসে রবীন্দ্রনাথকে ভাবলাম। গলা ছেড়ে গাইলাম,"আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি তুমি এই অপরুপ রুপে হাজির হলে জননী। ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে। " আমার একলা সকালে এভাবেই পালিত হলো আপনার জন্মদিন....... আপনাকে দিলাম ১৪৭ টা ম্যাপল পাতাময় পাখা।

বাতাস ঘুরে ঘুরে সেখানে পৌছে যাবে... যেখানে আপনি আছেন। কবি আপনি সবখানেই আছেন...... যেখানে বাংগালী আছে। যেখানে বাংলা আছে। যেখানে প্রেম আছে। যেখানে বিরহ আছে।

যেখানে গান আছে,সুর আছে। যেখানে জীবনের জয়গান আছে। আপনি সবখানেই আছেন কবি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।