আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর ও একজন ফিদেল ( ১ম পর্ব )

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

মার্কিন সাম্রজ্যবাদ যখন অধীর আগ্রহে একের পর এক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা কষছে বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রকে খুন করার। তখন দক্ষিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বারিনাসের ছোট্ট কৃষি নির্ভর গ্রামে সাবানিতায় পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠছিলো আরও এক ফিদেল কাস্ট্রো । ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী বৃটিশ সাম্রাজ্যর অধিপত্যকে খর্ব করে ধীরে ধীরে মার্কিন সাম্রজ্যবাদ পুরো পৃথিবীর জুড়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে । যদিও একই সাথে তাদের ক্ষমতার ভারসাম্য যুদ্ধে (স্নায়ুযুদ্ধ) সামিল ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন । পরবর্তীতে ১৯৮৫-১৯৯০ এ মিখাইল গর্ভাচেভের শাসনামলে তার পেরেস্ত্রয়কা ও গ্লাসনস্ত নীতির প্রনয়ণের ফলস্বরুপ যখন পুরো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

তখনএকই সাথে পৃথিবী জুড়ে সোভিয়েত ব্লকের অধীনে দেশ গুলো বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ,প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপদেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার দেশগুলোতে আমেরিকা পরিপূর্ণভাবে অধিপত্য বিস্তার করে। সৃষ্টি হয় ভারসাম্যহীন এক নতুন বিশ্বের । এর ফলস্বরুপ একে একে তৈরী হয় নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্রর,অসম বানিজ্য চুক্তি । দেশে দেশে সৃষ্টি হয় মার্কিন তাবেঁদার সরকার এবং একই সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিশ্বসংস্হা যেমন জাতিসংঘ,বিশ্বব্যাংক এবং আই এম এফ কে ব্যবহার করা হয় সাহায্যের আড়ালে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মার্কিন পরনির্ভরশীলতায় অভস্ত্য করে তোলা এবং দেনারদায়ে জর্জরিত করা। তাদের এই নীল নকশা প্রনয়নে অটল পাহাড়ের মত বাধাস্বরুপ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন কিউবার এক সামন্ত পরিবারে বেড়ে উঠা বিপ্লবী ফিদেল কাস্ট্রো ।

সমস্ত বিশ্ব মার্কিন পতাকার লাল সাদা ডোরাকাটা দাগ দেখে যখন ভীত নতজানু । তখন পরাক্রমশালী আমেরিকার খুব কাছের একটি ছোট্ট দ্বীপদেশ কিউবায় বিপ্লবী কাস্ট্রো রুখে দাড়াঁলেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে । সেই ১৯৫৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আহোরণের পর থেকে প্রায় এককভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে তার দেশকে শাসন করে আসছিলেন এই বিপ্লবী নেতা। আমরা আবার ফিরে যাই সেই দক্ষিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বারিনাসের ছোট্ট এক কৃষি নির্ভর গ্রামে সাবানিতায়। ১৯৫৪ সালে ২৮ শে জুলাই এই ছোট্ট শহরে এক দরিদ্র স্কুল শিক্ষক হুগো দে লস রেইসের পরিবারে জন্ম নেয় আজকের বলিভিয়ার অবিসাংবাদিত নেতা ভেনিজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ ।

ছোটবেলাটা শ্যভেজের কাটে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে । তার বা এবং মা উভয়েই ছিলেন স্কুল শিক্ষক । সেই শৈশবকালেই তাকে দাদীমার হাতে তৈরী মিস্টি , পাবলিক স্কোয়ারে বিক্রী করে স্কুলের বইখাতা আর জামাকাপড়ের খরচ চালাতে হত। সেসময়কার অন্যান্য বলিভিয়ানদের মত শ্যাভেজের পরিবারও ছিল দারিদ্রতার কষাঘাতে ভারাক্রান্ত । আর মুষ্টিমেয় কিছু ধনিক শ্রেনীর হাতে ছিল দেশের সর্বময় ক্ষমতা ।

শ্যাভেজ ছিল একজন পাকা বেইসবল খেলোয়াড় । স্কুল থাকতেই তার এই প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে । আর বেইসবল ছিল তখনকার সময়ে বলিভিয়ায় একটি অতন্ত্য জনপ্রিয় খেলা । আমেরিকার মত সেখানেও চালু ছিল বিভিন্ন লীগ যেখানে দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে খেলোয়াড়রা অংশগ্রহন করতে আসতো । শ্যাভেজের এই বেইসবল দক্ষতা তাকে কৈশোরে দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে রক্ষা করলো ।

হাইস্কুলে থাকতেই শ্যাভেজ বেইসবলে ক্রীড়ানৈপুন্যর জন্য পেলেন স্কলারশীপ । এই স্কলারশীপের সুবাদে দরিদ্র স্কুল শিক্ষকের ছেলে হয়ে সুযোগ পেলেন তিনি তৎকালীন ভেনিজুয়েলার বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাডেমী অব মিলিটারী সায়েন্সে পড়াশোনা করার । পরবর্তীতে এই একাডেমী হতে তিনি মিলিটারী সায়েন্স এবং ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রি নেন । এবং ১৯৭৫ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন । এবং অসাধারন নৈপুন্য এবং ব্যক্তিগত যোগ্যতাবলে তিনি একসময় বলিভিয়ার রাজকীয় ছত্রীসেনা বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন।

সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্হায় তিনি দেখলেন কিভাবে বলিভিয়ার সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে সরকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্হ কর্মকর্তারা । এমনকি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন উচ্চপদস্হ সেনাকর্মকর্তাদের দূর্নীতি ছিল অবাধে । বলিভিয়ার রাজধানী কারাকাসের এই সরকারী উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা আর ধনিক শ্রেনীর হাতে মূলত ছিল সর্বময় ক্ষমতা । দূর্নীতি তে ছেয়ে গিয়েছিল সারা দেশ । আর এর সব মূলে ছিল তৎকালীন দূর্নীতিপরায়ণ প্রেসিডেন্ট কার্লোস এন্ড্রিজ পেরেজের সহযোগিতা এবং সমর্থন ।

শ্যাভেজের কাছে একটি বিষয় তখন পরিস্কার হয়ে গেল পুঁজিবাদী নয় বরং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্হা পারে দেশকে দিতে অর্থনৈতিক এবং সর্বপ্রকার দূর্নীতির কবলে থেকে মুক্ত করতে। তিনি সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য নিয়ে ১৯৯২ সালে তৈরী করলেন একটি গোপন দূর্নীতিবিরোধী সংগঠনের নাম দিলেন বলিভিয়ান রেভুলেশনারী মুভমেন্ট। এবং একই সালে ৪ঠা ফেব্রুয়ারীতে তিনি প্রায় বার হাজার সৈন্যর বাহিনী নিয়ে প্রেসিডেন্টকে একটি রক্তাক্ত ব্যর্থ অভ্যূথানের মাধ্যমে চেষ্টা করেন ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে । কিন্ত তার প্রচেষ্টা বিফল হয় এবং তিনি কারাগারে দুই বছরের জন্য নিক্ষিপ্ত হন । যদিও অভ্যূথান ব্যর্থ হয় কিন্ত এই ঘটনা তাকে জাতীয় বীরে পরিনত করে ।

পরবর্তীতে দুই বছর জেলে সময় কাটান এই ভেনিজুয়েলান বীর । তিনি যখন জেল থেকে ফিরে আসেন সাজা খেটে তখনও সমাজে চলছিলো একই অবস্হা এবং পরিস্হিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করছিলো । একদিকে দ্রব্যমুল্যর উর্ধগতি আরেকদিকে ছিল দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তেলক্ষেত্রগুলো বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে সস্তাদরে বিকিয়ে দেয়া। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ বাস করছিলো দারিদ্রসীমার নীচে । এমতবস্হায় শ্যাভেজ অভ্যূথানের পথ পরিহার করে রাজনৈতিকভাবে এই শাসকশ্রেনীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য প্রায় ১৪টি ছোট রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন একটি দেশপ্রেমী মোর্চা বা সংঘ গঠন করলেন।

তিনি তার নতুন দলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জ্বালাময়ী বক্তৃতায় জনগনের সামনে তুলে ধরলেন কিভাবে এই শাসক এবং ধনিক শ্রেনী নতজানু নীতি গ্রহন করে একদিকে দেশের সম্পদ বিক্রী করে দিচ্ছে বিদেশি কোম্পানীগুলোর কাছে। অন্যদিকে নিজেরা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে দেশ এবং দেশের মানুষ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে । সেদিনকার র‌্যালী তে স্বতস্ফুর্তভাবে দেশের হাজার হাজার জনগন অংশ নিয়েছিল। অবশেষে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে বহু প্রতিক্ষীত নির্বাচনে হুগো শ্যাভেজ শতকরা ৫৬ ভাগ ভোট পেয়ে ভেনিজুয়েলার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন । শুরু হয় এক নতুন পথচলা আরেক নতুন অধ্যায়ের ।

চলবে..।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।