আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Our Future lies in Islam - রজার গারাউডি

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মার্কসবাদী ফিলোসোফার, লেখক এবং রাজনীতিবিদ রজার গারাউডি ১৯১৩সালে ফ্রান্সের মারসেইলে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪৫সাল থেকে ১৯৭০সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রেন্চ কম্যুনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে তাকে বহিস্কার করা হয়। কারন ছিল রিভিশনিষ্ট টেনডেনসি। তিনি কম্যুনিজমের সাথে চার্চের সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

১৯৬২সালে ফিদেল ক্যাষ্ট্রোর আমন্ত্রনে কিউবায় যান। ১৯৬৬ সালে তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে যান লেকচার প্রদানের জন্য তখন আমেরিকান লিজিয়ন নামক একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে এই প্রচারনা চালায় যে আমেরিকাতে তার উপস্থিতি ইশ্বরের জন্য, আমেরিকার পতাকার জন্য এবং ভিয়েতনামে যুদ্ধে লিপ্ত আমেরিকান সৈন্যদের জন্য অপমানজনক। কম্যুনিষ্ট পার্টি ইজরায়েলের ব্যাপারে যে নীতিটি অফিসিয়ালী ধারন করে থাকে তা হল এই যে আধুনিক ইজরায়েলের জন্ম সাম্রাজ্যবাদী নিউ কলোনিয়ালিজমের প্রতিফলন। তাই প্রথম দিক থেকেই গারাউডির অবস্থান ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছিল। ১৯৮২ সালে লে মনডে পত্রিকার একটি ফুল পেজ আর্টিকেলে তাই তিনি লেবাননের হত্যাযজ্ঞকে ইজরায়েলিদের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে উল্লেখ করেন।

এরপর থেকে তিনি বেশ কয়টি হত্যার হুমকি পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আলজেরিয়াতে কারাবন্দি অবস্থায় তিনি এবং তার সংগীরা মরতে মরতে বেচে যান। তাদেরকে হত্যার জন্য এক ইবাদি মুসলিমকে আদেশ করলে সে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে তার ধর্ম কখনো নিরস্রকে হত্যার অনুমুতি দেয়না। উর্ধতন ফ্রেন্চ কর্তৃপক্ষের আদেশকে উপেক্ষা করে মহান একটি সত্তার প্রতি এই সৈনিকের নি:শর্ত আনুগত্য তাকে বিস্মিত করে। মনে করা হয় ছোট্ট এই ঘটনাটি ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে প্রথম থেকেই তার মধ্য একটি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

গারাউডি মনে করেন আধুনিক বিশ্বের সমস্যার মুলটি প্রোথিত আছে পশ্চিমাদের মানবদর্শনে এবং তদ্বীয় চিন্তাধারায় যার শুরু ১৬ শতাব্দি কিংবা আরো অনেক আগে থেকে। প্লেটোর আত্মা এবং দেহের, প্রজ্ঞা এবং অনুভবের দ্বৈতবাদের থেকে এর শুরু। এরপর গ্যালিলিও যখন সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বিশ্বের মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগি হন তখন অনুভুতি আর প্রজ্ঞার সম্মিলন ঘটে একটি মিস্ট্রির সৃষ্টি হয়। এরপর আগমন ঘটে ডেকার্তের। আই থিন্ক দেয়ারফোর আই এম, দেকার্তের এই সুত্রটি চরম ব্যাক্তিবাদের সুচনা ঘটায়।

আধুনিক পশ্চিমাদের চিন্তাভাবনায় চরম ব্যাক্তিবাদটি এখন সবচাইতে সক্রিয় মানবদর্শনে পরিনত হয়ছে। গারাউডি মনে করেন গ্লোবাল ক্রাইসিসের মুলে রয়েছে ইনডিভিজ্যুয়ালিজম আর পজিটিভিজম। এর সাথে যোগ করেছেন ইউরোসেন্ট্রিলিজমকে। ডেকার্তের সমালোচনায় তিনি বলেছিলেন চরম ব্যাক্তিবাদ (আই থিংক এন্ড আই এম) মানুষকে ব্যাক্তি স্বাধীনতা দিয়ে ব্যাক্তি মানুষকে সর্বোচ্চ মুল্যায়নের কথা বললেও পক্ষান্তরে মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে এবং বিচ্ছিন্ন করে তোলে সামগ্রিক সামাজিক জীবন যাপন থেকে। নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে মুল্যবোধগুলোকে জলান্জলি দেয়।

অন্যদিকে পজিভিটিজম পাল্লায় পড়ে মানুষ সবকিছু বিচার করতে বসে চুলচেড়া বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে অনুভব আর অভিজ্ঞতার বিষয়টি গৌন হয়ে পরে। বিজ্ঞান আমাদেরকে শেষকিছু একটার সন্ধান দিতে পারেনা নিজের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। বিজ্ঞান এবং টেকনোজির পেছনে ছোটা মানুষ নিজেই একটা মেশিনে ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়। মানুষ হয়ে পরে আরেকটা প্রয়োজন। মানুষ আর মানুষের মাঝের যোগাযোগ, সমাজ আর মানুষের মাঝের যোগাযোগটি হয়ে পড়ে যন্ত্র্র নির্ভর।

ভালবাসা, আবেগ, অনুভুতির ব্যাপারটি গৌন হতে হতে মানুষ সমাজ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। সমাজে পরিবারে ভাংগনের সৃষ্টি হয়। তাই গারাউডি ইউরোপীয় চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে প্রাচ্যের অভিজ্ঞতকে কাজে লাগানোর কথা বলেন বিশ্বের সমস্যা সমাধানের উপায় খুজতে। নাস্তিক্যবাদে নিরাশ হয়ে তিনি প্রথমত খ্রীষ্ট ধর্মে আশ্রয় খুজেন, পরে তাও তাকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে, তাকান ইসলামের দিকে। ফলশ্রুতিতে ১৯৮২ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।

তার নতুন নাম হয় রাঘা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।