আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলো বৈশাখ এলো রে...

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

শুধুই অবাক হতে হয়- কোথা থেকে যে এত লোক আসে !!! বইমেলা, একুশে ফেব্রুয়ারী আর পহেলা বৈশাখ -এই প্রজন্ম নাকি বাঙালী সংস্কৃতির চেয়ে ভিন দেশী প্রভাবে প্রভাবিত বেশী; প্রতি বছর এই যে জনসমাগম, পিল পিল করে টি.এস.সি. , গিজ গিজ করে চারুকলা, রমনার বটমূল; এমনকি ধানমন্ডি লেক এলাকার দিকও গুঞ্জরিত হয় কোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির নান্দনিক পরিবেশনায়, মুখরিত হয় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার পদচারণায়- শত্রুর মুখে ছাই , এমন প্রাণের মিলন মেলা , আর কোথা পাই ! শুধুই অবাক হতে হয়; আমি সামান্য, ক্ষুদ্র, সীমিত জ্ঞান আমার, এই যে এত প্রাণের উচ্ছ্বাস, প্রকাশের ভাষা একদমই জানা নাই ! আজ বাসা থেকে বের হয়ে কোন স্কুটার, নীল কিনবা হলুদ ক্যাব শাহবাগ এমনকি নিউ মার্কেট এলাকার দিকে যেতেই চাইলনা। আমি জানতে চাইলাম, "যেখানেই যাবেন এই দুই পয়েন্টই তো ক্রস করতে হবে, সারাদিন তো আর বসে থাকবেন না... এই দুই জায়গায় না গেলে কই যাবেন আর !" ক্যাবওয়ালা সুন্দর করে উত্তর দেয়, "ফ্যান্টাসি কিংডম যাবো ..."। আমরা পরিবহন ব্যবস্থার কাছে চরমভাবে জিম্মি । বিশেষ দিনগুলো এলে অযথা হয়রানি আমাদের তা অনেক ক্লান্তিকরভাবে অনুভব করায়, কিন্তু আমরা জানি, "উপায় নেই, গোলাম হোসেন"; তাই মেনে নেই। কারণ, বলেই বা কি হবে ! আর বলবেনই বা কোথায়! সারাবছর রাজনীতিবিদদের পেঁচাল, আর এখন রাজনীতির জঞ্জাল সরানোর চেষ্টাতেই দিন,মাস, বছর কেটে যায়।

সেখানে আমাদের কথা ? মানে জনগনের চাওয়া , স্বপ্ন অথবা প্রয়োজন কিনবা দাবী ? কে শুনবে ! শুধুই অরণ্যে রোদন, পন্ড শ্রম। যে সব মিলনমেলা গুলোতে মানুষের ঢল নামে সেখানে একটু বসার মত সুন্দর, মনোরম, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কোন জায়গা নেই; পাবলিক টয়লেট আছে কিনা জানি না, এমনিতেও ঢাকা শহরে খুব কম পাবলিক টয়লেট চোখে পরে, যেগুলো আছে সেগুলো কতটা পরিচ্ছন্ন তা জানিনা তবে চোখ বুঁজে হাল-হকিকত আন্দাজ করে ফেলা যায় । এখন যদি আমি মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেট দাবী করি তাহলে হয়ত আমাকেই পাগল ঠাউরাবে সবাই। অথবা যদি ধরেই নেই আমার এই দাবী অনতিবিলম্বে বাস্তবায়িত হলো, তাহলেও তার মান এবং যথোপোযুক্ত ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যপারে খোঁজ নিতে গেলে জানা যাবে, খুব ঠেকায় পড়লেও কেউ হয়ত ব্যবহারে উৎসাহী হবেনা। উৎসবের এইসব কেন্দ্রগুলোতে যেতে যেমন ধকল পোহাতে হয়, ফেরার সময়ও একই দশা।

গরমকাল বলে রোদে ও তাপে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় একটু পরপরই, সেই সাথে ধুলাবালি। তবুও অন্ততঃ হাঁটা যায়, যদি ঝড়-বৃষ্টি এসে পরে তাহলে এই এত্তো এত্তো লোক কোথায় যাবে পলকে ! কোন ব্যবস্থা নেই !!! বোশেখের ঐতিহ্যবাহী খাবার বলতে পান্তাভাত আর ইলিশ । গতকাল এক দোকানে লেখা দেখলাম- ১১০ টাকায় দু'টো ইলিশ! ইলিশ মাছ কেনা হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফোন দিলাম। বাসা থেকে জানালো ইলিশ আগেই কেনা হয়েছে। এবার একটু হিসেবে নামি আমি ।

আজকাল এই "জাতীয় মাছ" পাতে পাওয়া মানে পূর্ব জন্মের কোন পূণ্যের ফল। সেখানে এই দুর্মূল্যের বাজারে ১১০ টাকায় এক জোড়া মানে দু'দুটো ইলিশ !!! "জাটকা" নয়তো !!! কর্তৃপক্ষ কিনবা সরকার, যেই নামেই ডাকি - তেনারা উদ্দ্যোগহীন বরাবর কিনবা উদ্দ্যোগী হয়ে করার মত কিছু আছে বলে মনেই করেন না হয়ত। কারণ চালের দাম বেড়েছে, ইলিশ ধরা ছোঁয়ার বাইরে তারপরও চাল কিনবা ইলিশের বিক্রি কি বন্ধ হয়ে গেছে ? পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি কি বিলুপ্ত হয়ে গেছে ? এসি-নন এসি বিপণীবিতানগুলোতে চৈত্রের শেষক্ষণটি পর্যন্ত চলেছে বিকিকিনি, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম ছিল দোকানীরা । অথচ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে বর উঠে গেছে। সবই তো ঠিক আছে ; জনগণ খাচ্ছে-দাচ্ছে, উৎসব পালন করছে ।

সরকারের আসলে কিছুই করার নেই । মাঝে মাঝে বাজারদর পরিদর্শন এবং শুভেচ্ছা বানী দেয়া ছাড়া । আর তাই হয়ত আমাদের এইসব ঐতিহ্যবাহী দিবসগুলো পালনে সরকারী সরাসরি ভুমিকা পরিলক্ষিত হয়না । তেনারা বোধহয় ভাবেন যেমন চলছে চলুক না, লোকজন তো ঘরে বসে নেই! বোমা হামলা হলো- তাও তো লোক ভয় পায়নি ! RAB দিয়ে এক সময় কত চেকিং হলো, পাবলিক লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলো রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে- তবুও তাদের উৎসাহ কমে না ! প্রতি বছর লোক বাড়ছে, ভিড় বাড়ছে ! আবারও ফিরে আসি একই কথায় ব্যবহার করি কিছু আশ্চর্যবোধক চিহ্ন আমি প্রতি বছর হারিয়ে যাই ভিড়ের মাঝে- লাল, সাদায় গানে, ছন্দে, তারুণ্যের উদ্দামতায় তরুণীর চিবুক কিনবা বাহুর আলপনায় বাঁধ ভাঙা জোয়াড়ে, শেকড় খুঁজে পাই এতো আবেগ, অসীম বৈরীতার মাঝেও, যেন সব অনুযোগ আজ গৌণ যেন বঙ্গ জন্ম ধন্য আজ বড় বেশী বাঙালী হয়ে উঠি প্রভাত সুর্য্যের রক্তিমতায় শুভ হোক আগামী শুভ নববর্ষ ১৪১৫ পহেলা বৈশাখে আজ এই কামনায় ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।