আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠরে ওএমএস'র চাল দিচ্ছে তাড়াতাড়ি ছুটোর.ে..

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠরে... ছড়া কেটে সুনামগঞ্জের অভাবী পরিবারের বাবা-মায়েরা ঘুম থেকে তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য না জাগিয়ে ওএমএসের চাল কেনার জন্য জাগাচ্ছেন। তাই সকাল হলেই প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলপড়–য়া শিশু-কিশোরদের শহরের দিকে আসতে দেখা যায়। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বড়দের সঙ্গে এসব শিশুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি অনেকটা কমে গেছে। সুনামগঞ্জ পুরনো কোর্ট পয়েন্টে বিডিআর ওএমএসের চাল বিক্রি করছে ২৫ টাকা কেজি দরে।

আর তা কিনতেই জড়ো হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ আর শিশুরা। শুধু অভাবী পরিবারের শিশুরাই আসছে না, মধ্যবিত্তরা নিজেরা না এসে তাদের সন্তানদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। রবিবার সকাল থেকে বিডিআরের ওএমএসের চালের দোকানে দীর্ঘ লাইনে দেখা গেছে অর্ধেকই শিশু-কিশোর। সদর উপজেলার সোনাপুর বেদে পল্লীর জালাল চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তাকে ভোরে তার মা স্কুলে না পাঠিয়ে ওএমএসের চাল নেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।

সে জানায়, তারা আট ভাই এক বোন। বাবা জেলে থাকায় তার মাকেই চরম কষ্ট করতে হচ্ছে। কিন্তু তার মা কাজ করে যা আয় করছেন তা দিয়ে খাবার জুটছে না। ফলে তাদের নয় সদস্যের পরিবারকে প্রায়ই উপোস থাকতে হয়। ইবরাহিমপুরের রথীন্দ্র তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

সেও ভোরে এসে লাইনে দাড়িয়েছে। প্রায় ১১টা পর্যন্ত লাইনে দাড়িয়ে চাল না পেয়ে ক্ষিধের তাড়নায় শেষে লাইন ছেড়ে গাছের নিচে এসে হাপাচ্ছে। সে জানায়, ভোরে তার মা ঘুম থেকে জাগিয়ে চাল কেনার জন্য শহরে পাঠিয়েছেন। কাইয়ারগাও গ্রামের কাদির মিয়া (৭)। সেও স্কুলে পড়ে।

তার মা ভোরে ঘুম থেকে তুলে তাকে চাল নেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। সে জানায়, তার বাবা রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে এখন আর সংসার চলছে না। জরজরিয়া গ্রামের নূর বাহার সাত মাসের সন্তান কোলে নিয়ে লাইনে দাড়িয়েছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে থাকার পর তিনি পাচ কেজি চাল পেয়েছেন। স্বামী না থাকায় পরিবারের পাচ সন্তানের মুখে তাকেই আহার তুলে দিতে হচ্ছে।

কিন্তু এখন আর তিনবেলা তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না তিনি। একই গ্রামের খোশনেহার বেগম (৪৫) লাইনে দড়িয়ে বলেন, ‘জান ধইরা খাই’ কিন্তু এখন আর বাচতে পারবো না। জমি নাই জিরাত নাই কিভাবে বাচি। তিনি জানান, তার পরিবারে লোকসংখ্যা আটজন। প্রতিদিন চাল লাগে প্রায় চার কেজি।

অক্ষম স্বামী তার। আয়-রোজগার নেই। তাই তাকেই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু এখন আর তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। লাইনে দাড়ানো একজন মধ্যবিত্তের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়।

কাচার ষোলঘরের আক্কল আলী (৫০) নামের ওই কৃষকের প্রায় ৫ একর জমি আছে। কিন্তু সার ও বীজের অভাবে তিনি জমি চাষ করতে পারছেন না। তাই জমিগুলো তিনি বন্ধক দিয়েছেন। তা থেকে যা পান তা দিয়ে এখন আর ঘরের ভাত খেতে পারেন না। তাই তিনিও এ বয়সে লজ্জা ভুলে চালের জন্য লাইনে এসে দাড়িয়েছেন।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শহরতলির বিভিন্ন গ্রামের স্কুলে এখন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কমে গেছে। অভাবী পরিবারের শিশুরা স্কুলে না গিয়ে বাচার তাগিদে চলে আসছে ওএমএসের দোকানে। কৃষ্ণনগর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আপন রায় জানান, তার স্কুলের কিছু ছাত্র প্রতিদিনই চালের জন্য শহরে আসছে। অভাবী পরিবারের এসব শিশুকে তাদের বাবা-মায়েরাই পাঠাচ্ছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।