আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনারা যারা অসুখী

আসলে প্রকৃত সুখ যে কখন পাবো বা কখন পেয়েছি বা আদৌ পাবো কি না তা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আজকে ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পথে রিকশা নিলাম। রিকশায় উঠলে অধিকাংশ রিকশাচালক দের সাথে আমি কথা বলি। আজকের গল্পটা কিন্তু অন্যরকম, প্রথমে দৈনিক আয় নিয়ে কথা হচ্ছিল,প্রতিদিন কোথায় কোথায় রিকশা চালান উনি, কোন এলাকায় বেশি আয় হয় ইত্যাদি ইত্যাদি, তারপর উনার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি একটা বড় গল্প ফেঁদে বসলেন,ওখান থেকেই আমার মুগ্ধ হওয়ার শুরু। একজন স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়েই বর্তমান সংসার।

মেয়ে ছিল,বিয়ে হয়ে গেছে। কথা বলার সময় উনি বারবার পিছে তাকিয়ে উনার কথাগুলো বলছিলেন,উনার অভিব্যক্তি গুলো আমি স্পষ্ট ধরতে পারছিলাম, ছোট ছেলের কথা জ়িজ্ঞাসা করাতে উনার মুখটা একটু কালো হয়ে গেল। জানতে পারলাম,ছেলে সপ্তম শ্রেনির পাঠ শেষ করার পর পড়ালেখার সমাপ্তি টেনেছে নিজ ইচ্ছায়, ছেলেটির রিকশাচালক বাবা এটা নিয়ে দারুণ নাখোশ। তার ইচ্ছানুযায়ী ছেলেটিকে একটা কাজ করতে দেয়া হইছে। বড় ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করাতে তার মুখটা হয়তো অনেক উজ্জ্বল হয়উঠেছিল(সামনে তাকিয়ে ছিলেন তাই বুঝতে পারিনি।

গর্ব করে বলছিলেন হ্যা,ইন্টারমেডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে,*********** কলিজে(কলেজে) ভর্তি করছি, ১৩,০০০ ট্যাকা দিয়া। পোলা অনেক ভালো পড়ালেখা করে,ওরে নিয়া আমি স্বপ্ন দেখি,বড় হবে পোলাটা। আমার জানামতে ওইটা ঢাকা শহরের ভাল কলেজ গুলোর মধ্যে অন্যতম। তারপর বললেন উনি একটা রুম কিনছেন (কোথায় বলল বুঝিনি ) । আমাকে অকপটে বলে গেলেন তার জীবনের কালো অধ্যায়ের গল্পগুলো, মদ গাঁজা নারী কোনোকিছুই বাদ যাইনি তার জীবনে, এমনকি কক্সবাজারে লুকোনো মাদক খুজতে গিয়ে উপজাতিদের রেক্সিং (বক্সিং)ও দিয়েছেন।

এগুলো এখন অতীত যেগুলো উনি মুছে ফেলেছেন, পুরোনো ময়লা খাতায় রাখা হিসেবগুলো এখন আর মনে করতেও ইচ্ছা হয়না তার, উনি বললেন উনি এখন এসব ছেড়ে দিয়েছেন,এখন তার ছোট সংসারটাকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান তিনি। কয়েক বছর টাকা জমিয়ে উনি একটি ব্যাংকে ডি পি এস খুলেছেন। নাহ তার জীবনে আর চাওয়া পাওয়া নেই। তাকে জিজ্ঞাস করাতে তিনি বললেন, হ্যা আমি অনেক সুখি, কিন্তু একটা আফসোস আমার সারাজ়ীবন থাকবে,। উনার নামটা আমার আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি, আমার নিজের কথাই চিন্তা করলাম,বাবার.দেয়া মাগ্না ভাত খাই,একটু কিছু হইলে মন খারাপ করি, শুধু আমি নই,এর গার্ল্ফ্রেন্ড আছে দেখে মন খারাপ,এর নাই দেখে মন খারাপ, এ ঘুষ খাইছে দেখে বদলি এর ভয়ে সুখ নাই, এর ছেলে মেয়ে বিপথে গেছে দেখে এর ঘরে সুখ, কিন্তু একজন রিকশাচালক এর সুখ দেখে রীতিমতো আমার হিংসা হচ্ছে।

স্যালুট রিকশাওয়ালা চাচা। you make my day a beautiful one. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.