আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি: ধর্মীয় জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও বিশ্ব জ্বালানী বেনিয়াদের অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা হিংস্রতার পুনপৌনিকতা

munirshamim@gmail.com

ক. লেখক, গবেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়ার ঘটনাটি সংবাদপত্র শিল্পের চলমান মাপকাঠিতে গুরুত্বহীন হয়ে উঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেও। তবে সংবাদপত্রের চলমান ব্যকরণে ঘটনাটি পুরনো হিসেবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেও এ ধরনের হুমকির সম্ভাব্য নেতিবাচক ফলাফলের আশংকাটি প্রগতিশীল মহলসহ শুভ শক্তি ও শুভবুদ্ধির মানুষের কাছে অদ্যবদি তরতাজা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের নিকট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কারণে এ আশংকা গভীরতর হচ্ছে। আর এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

কারণ ইতোপূর্বে ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। আমরা গুরুত্ব দেইনি। তার ভয়াবহ ফলাফল আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গোটা বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষা হারিয়েছে হুমায়ুন আজাদকে। প্রয়াত কবি শামসুর রহমানের ওপর হামলা হয়েছিল।

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ড. আবুল বারাকাত, ড. আরেফীন সিদ্দীকী-এঁদেরকেও চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে জোট সরকারের আমলে একই প্রক্রিয়ায় খুন করেছে। এখন যার বিচার কার্যক্রম চলছে আদালতে। সুতরাং এ হুমকিগুলো সাদা-কালো চোখের বিশ্লেষণ উত্তর উড়ো সংবাদ বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ কম। তাতে সম্ভাব্য ফলাফলটি বয়ে বেড়াবার, এবং তা থেকে উত্তরণের পথটিই আমরা হারিয়ে ফেলব।

যেমনটি হয়েছে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, এর পরাজিত শক্তির রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ধারাবাহিকতায় তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক মতদর্শিক গর্ভে জন্ম নেয়া জেএমরি ক্ষেত্রে। বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমান গংদের ক্ষেত্রে। আমরা এখনও জানি না আনু মুহাম্মদকে দেয়া চিঠির উৎস কি। কারা তাঁকে চিঠি দিয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ নাগরিক, যাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তথ্যে ও তথ্যের উৎসে কোন কার্যকর প্রবেশাধিকার নেই এবং যে দেশে তথ্য গোপন রাখা এখনও রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির অংশ, সে দেশে আমাদের পক্ষে এ তথ্যের উৎস জানা সম্ভবও নয়।

যদি না রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে এ তথ্য উৎঘাটন করে এবং তা জনগণকে অবহিত করে। তবে আমরা মনে করি, এটি খুঁজে বের করা এবং তা জনগনকে জানানো রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু আনু মুহাম্মদ নয়, যে কোন নাগরিক এ ধরনের হুমকির মুখোমুখি হলে, তার পাশে দাঁড়ানো, হুমকির উৎসগুলো খুজে বের করা, এবং জনগণকে অবহিত করে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করার মতো বিষয়গুলো একটি সভ্য ও জবাদিহীমূলক রাষ্ট্রের কাছে একজন সাধারণ নাগরিকের খুবই সাদামাটা এবং প্রাথমিক প্রত্যাশা মাত্র। আগেই বলেছি, আমরা এখনও জানি না, কারা আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে অতীতে, বিশেষ করে বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহের নিরব পর্যবেক্ষক হিসেবে কিছু মতামত প্রদান, কিছু অনুসিদ্ধান্ত টানা যেতেই পারে।

পদ্ধতিগত প্রশ্নে সীমাবদ্ধতার বিতর্ক মাথায় নিয়ে হলেও। খ. আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি সম্পর্কিত সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই একটি পক্ষ তাদের বিভিন্ন আলাপচারিতায় পুরনো রাজনৈতিক 'প্রপাগান্ডা' বলে ঘটনাটিকে গুরুত্বহীন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যারা এ ঘটনাটিকে গুরুত্বহীন বলেছেন, পুরনো রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা বলছেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়, মুখ ও মুখোশ সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। এর আগে জেএমবি সম্পর্কে, বাংলা ভাই সম্পর্কে, ধর্মীয় জঙ্গীবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রিকায় যখন সংবাদ আসতে শুরু করেছিল তখনও এ পক্ষটি ঠিক একই কায়দায় বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে জাতির সহজ-সরল চোখে 'ধুলি' মাখাবার চেষ্টা করেছে। অথচ সারা দেশে যখন সিরিজ বোমা আর লাশের পর লাশ পড়লো, আদালত পাড়া রক্তাক্ত হলো, তখন এরাই আবার কৌশলে দায়িত্বটা চাপিয়েছে পাঁচ বছরের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে পরীক্ষিত রাজনৈতিক ও আদর্শিক মিত্র শক্তি বিএনপির ওপর।

ভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ব্যানারে বোমা হামলাগুলো সংঘটিত হওয়ার সুবাদে এবং সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজেদের আড়ালে রাখার চেষ্টাটা করতে পেরেছে খুব সহজে। সে সময় সারা দেশে যে আতংক আর বিভৎতা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারি নি। আর প্রপাগান্ডার অভিযোগ? আনু মুহাম্মদের মতো একজন মানুষের প্রপাগান্ডার আদৌ কি প্রয়োজন আছে? যিনি দীর্ঘ দিন ধরে সমহিমায় উদ্ভাসিত। জনপ্রিয় শিক্ষক। শুধু শিক্ষক নন, সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি নির্ভর শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনও বিদ্যমান দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক কাঠামো থেকে বের হয়ে যে কয়জন শিক্ষক সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে পেরেছেন আনু মুহম্মদ তাদের অন্যতম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেই এ সত্যতা টের পাওয়া যায়। সুতরাং প্রপাগান্ডার অভিযোগটিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সে উদ্দেশ্যের কেন্দ্র বিন্দুতে মুক্তিযুদ্ধের বিরুধিতাকারী চক্রের উপস্থিতির কথা না বলেলেও চলে। গ. আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি সম্পর্কিত ঘটনার পর্যবেক্ষণ নির্ভর কার্যকরণ অনুসন্ধানের প্রয়াস হিসেবে তার কাজকর্ম, মতদর্শিক অবস্থান, ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত হওয়া জরুরি। আমরা সবাই জানি, আনু মুহাম্মদ পেশায় একজন শিক্ষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ান।

তার বাইরে তার প্রধান জনপ্রিয়তা একজন লেখক-গবেষক হিসেবে। তাঁর লেখার প্রধান বিষয় রাজনৈতিক অর্থনীতি। শিক্ষকতা ও লেখালেখির বাইরে তিনি কতগুলো সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। শুধু যুক্ত আছেন তা নয়, এ সব আন্দোনের যৌক্তিক পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণপূর্বক জনগণকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপকভিত্তিক গণআন্দোলন সংঘটিত করার ক্ষেত্রে কয়েকটি সফল উদাহরণও ইতোমধ্যে তৈরি করতে পেরেছেন তিনি এবং তার সহযোদ্ধারা। এ ছাড়া' টিভি টকশো'গুলোতে এবং সভা-সেমিনারেও নিয়মিত সরব রয়েছেন।

তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গা থেকে অত্যন্ত খোলামেলা অথচ যুক্তিনির্ভর আলোচনা-বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নিয়মিত লেখালেখি আর সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রবাহমান অন্তর্নিহিত প্রধান মতাদর্শগত যে সূর তাতে আমরা দু'টো বিষয় সমান্তরালভাবে চলতে দেখি। এর একটি হচ্ছে, তিনি সব সময় তার কথা ও লেখালেখিতে, কর্মতৎপরতায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ এবং ৭১ এর পরাজিত শক্তি জামাত-শিবির এবং তাদের অপরাপর সহযোগীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। ৭১ থেকে শুরু করে যে অপশক্তিটি এখন পর্যন্ত আমাদের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা, হত্যার হুমকি এবং তাদের ওপর আক্রমণের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধারবাহিকভাবে নিয়োজিত রয়েছেন। ড. হুমায়ুন আজাদ, কবি শামসুর রাহমান, ড. আরেফীন সিদ্দীকী, ড. আবুল বারাকাত, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার হুমকির ঘটনা এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদই তার প্রমাণ।

অপরটি হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে পুঁজিবাদী শোষণ-নিপীড়ন, বিশেষ করে বিনিয়োগের নাম করে বহুজাতিক জ্বালানী বেনিয়া কর্তৃক তেল-গ্যাস সম্পদ লুন্ঠেনের যে প্রচেষ্টাটি দীর্ঘদিন সক্রিয় রয়েছে তার বিরুদ্ধে আনু মুহাম্মদ খুব জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। লেখালেখি করছেন। একই সাথে নিয়মিতভাবে জনগণকে সচেতন করে তেল-গ্যাস-কয়লা রক্ষায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একটি সচেতন-সংগঠিত জনগোষ্ঠী প্রস্তুত রাখার কাজে যুক্ত আছেন তিনি। যে কারণে এশিয়ান এনার্জি ফুলবাড়িয়ায় অসম চুক্তির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করে হাজার হাজার স্থানীয় অধিবাসীদের পূর্বসূরীদের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ এবং আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠনের ষড়যন্ত্রটা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

সুতরাং তেল-গ্যাস লুন্ঠনে নিয়োজিত বহুজাতিক কোম্পানীগুলো এবং তাদের স্থানীয় এজেন্টরা আনু মুহাম্মদের বন্ধ-শুভাকাংখি হবেন, এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। বরং আনু মুহাম্মদের মতো লোকে অনুপুস্থিতিই তাদের কামনা-বাসনার অংশ হবে। আনু মুহাম্মদ তার লেখালেখিতে শুধু তেল-গ্যাস কোম্পানীগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন নি। একই সাথে স্থানীয় দালাল, ঠিকাদার অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যাবসায়ীদের মুখোশটাও খুলে দিয়েছেন তার তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে। পুঁজিবাদ ও জ্বালানী বেনিয়াদের সারা পৃথিবী ব্যাপী কর্মকান্ডই প্রমাণ করে যে, তারা তাদের বিকাশ ও মুনাফার স্বার্থে যে কোন কিছু করতে পারে।

নাইজেরিয়াতে হাজার হাজার 'ওগনি' আদীবাসিদের হত্য করেছে, ভিটে মাটি উচ্ছেদ করেছে সে সমগোত্রীয় বেনিয়ারাই। পুঁজিবাদ ততক্ষণ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক যতক্ষন পর্যন্ত গণতন্ত্র তার বিকাশ ও মুনাফাকে নিশ্চিত করবে। তা না হলে সে সামরিকতন্ত্র (পাকিস্তানে পারভেজ মোশারফ পুঁজিবাদের মোড়ল আমেরিকার সমর্থন পেয়েছে), মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ সব কিছুইকে্ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। এরা মুনাফার স্বার্থেই যুদ্ধ বাধায়। যুদ্ধ বাধলে অস্ত্রের ব্যবাসা করে।

মানুষ খুন করে। আবার একই সাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখায়। এ সব বেনিয়াদের পক্ষে পেশাদার খুনি ভাড়া করাও অস্বাভাবিক কিছু না। তাছাড়া পুঁজিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের সহবস্থান, পারস্পরিক সাময়িক সহযোগিতার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে পুনপৌনিকভাবে সংঘটিত হচ্ছে বহুদিন ধরে।

সুতরাং জ্বালানী বেনিয়ারা যদি ধর্মীয় জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদকে কাজে লাগিয়ে আনু মুহাম্মদের মতো সক্রিয় মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়, তাতে খুব বেশি অবাক হওয়ার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং এ সম্পর্কিত ঘটনাসমূহের কার্যকারণ অনুসন্ধানে দু'টো সূত্রকেই বিবেচনায় আনা জরুরি। পুনশ্চ: আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি ব্যক্তি আনু মুহাম্মদের বিরুদ্ধে নয়। এটি একটি চলমান লড়াই-সংগ্রামের বিরুদ্ধে। একটি শোষনহীন আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার বিরুদ্ধে।

সুতরাং এ ধরনের হত্যার হুমকি সম্পর্কিত চিঠির সঠিক উৎস খুজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া খুব জরুরি। আনু মুহাম্মদ আমাদের সকলের। তাকে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে হবে। তার প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোকে. উদ্যোগগুলোকে দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য।

প্রিয় আনু মুহাম্মদ, আপনি দীর্ঘজীবী হোন..........................!!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।