আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ চিঠির পরিসমাপ্তি.......

যেখানেই থাকো......ভালো থেকো!!!!!

শিরোনামহীন “ভালবাসার সমুদ্রে হারাতে চায় যে তার কাছে সামান্য আঘাত পাওয়াই মাঝে মাঝে অনেক বড় বলে মনে হয়। যে দুঃখ দিয়েছে তার কাছে এটা সামান্য বা মনে রাখার মতো কিছু নয়। কিন্তু যে পেয়েছে তার কাছে এটা বড় ধরণের ক্ষত বা দাগ সৃষ্টি করে। অনেক চেষ্টাতেও সে দাগ মোছা যায় না বরং থেকে যায়...। ” কথাটি আমার উদ্দেশ্যে লিখা কোন এক চিঠিতে তুমি উল্লেখ করেছিলে।

বিগত কয়েকদিনে এরকম সামান্য অনেকগুলি আঘাতই আমি সহ্য করেছি, যা তোমার কাছে হয়তো তুচ্ছ মনে হতে পারে। আর তোমার বর্তমান অবস্থান থেকে এ আঘাত গুলিকে তুমি তুচ্ছ মনে করতে পারোই। আমায় প্রথম আঘাতটা তুমি হেনেছিলে নভেম্বর মাসে। নভেম্বরের ১০ তারিখ তুমি আমার কাছে ফোন করার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ফোন করতে পারবেনা বলে তুমি ০৬ নভেম্বর ফোন করেছিলে এবং জানিয়েছিলে ২৭ নভেম্বরের আগে ফোন করতে পারবেনা।

কিন্তু আমি তোমাকে অনুরোধ করেছিলাম ১০ তারিখ যদি সম্ভব হয় একবার ফোন করতে। কিন্তু তুমি সেদিন ফোন করতে পারনি। কিন্তু ২০ তারিখ আমি তোমার একটা ফোন আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ফোন করবে। কিন্তু ২০/২১ তারিখ যখন ফোন পেলাম না তখন রাজীবের নিকট থেকে তোমার খবর নিয়েছিলাম এবং জেনেছিলাম তুমি তোমার ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু করেছো।

ফলে পরবর্তীতে আমার আশা আরও বেড়ে গিয়েছিলো যে, ২৭ তারিখের আগে অন্তত তুমি আমার কাছে ফোন করবে, যেভাবেই হোক!! কিন্তু আমার সে আশায় গুড়ে বালি। তুমি নিজে থেকে কোন উপায় খুঁজে বের করতে পারনি এবং ফোন করনি। যখন আমি তোমাকে বললাম যে ইচ্ছে করলে তুমি ফোন করতে পারতে আন্টির বাসায় গিয়ে, তখন তুমি আমাকে শুনিয়ে দিলে তোমার অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা। কিন্তু সে দৈন্যতার কথা শুনে আমার কাছে মনে হয়েছিলো খোড়াযুক্তি। কেননা, তুমি ইচ্ছে করলেই আম্মাকে ম্যানেজ করতে পারতে এই বলে যে তোমার ফিল্ড ওয়ার্ক এর কাজ ছিল সে দিকে।

আসলে এ ব্যাপারটি তোমার মাথায়ই আসেনি যে, “২৭ তারিখের আগে ওকে ফোন করা দরকার এবং সে আমাকে Miss করছে। ” আসলে তুমি নিজে Miss করছিলেনাতো, আমি তোমাকে Miss করলে তোমার কিইবা এসে যায়। এবং এও জানিযে, ভবিষ্যতেও তোমাকে এভাবে Miss করতে থাকবো। আবার এও আশঙ্কা হয় যে, আমৃত্যূই না জানি তোমাকে Miss করতে হয়। আর যদি ওই সময়টাতে তুমি নিজে আমাকে Miss করে থাকতে তাহলে আমি তোমাকে বলা লাগতো না, তুমি নিজেই একটা উপায় বের করে আমাকে ফোন করতে।

তোমার অবস্থানে থাকলে আমি তাই করতাম। তোমার কাছ থেকে আমি পরবর্তী আঘাতটা পেয়েছিলাম ডিসেম্বরের ২০ তারিখ সিলেট-এ তোমার সাথে দেখা করতে গিয়ে। সেখানে আমি নতুন করে অনেক কিছুই জানলাম এবং উপলব্ধি করতে শুরু করলাম-তুমি অনেক বদলে গেছ, তোমার চিন্তাভাবনা অনেক বদলে গেছে। যদিও তুমি আমাকে জানিয়েছিলে, আমার জন্য তোমার Feelings এর একটুও পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু Feelings তো অন্তরের ব্যাপার, তা ছোয়া যায়না, দেখা যায়না।

তা উপলব্ধি করতে হয়। আর উপলব্ধি করার যে উপায় আমার জানা তা হচ্ছে, তোমার চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণকে বিশ্লেষণ করা। তুমি আমাকে জানিয়েছিলে, তুমি কোন এক ছেলের সামনে উপস্থিত হয়েছিলে, পাত্রী হিসেবে। কিন্তু আমার সৌভাগ্য যে, সে ছেলে তোমাকে তার ভবিষ্যৎ সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেনি। তোমার ভাষ্যমতে তার কারন তোমার তখনকার আচরনের মাধ্যমে তুমি কিছু অস্বাভাবিকতা ফুটিয়ে তুলেছিলে।

যদিও এভাবে ঐ ছেলের সামনে তোমার উপস্থিত হওয়া আমাকে আঘাত করেছিলো তথাপিও আমি ব্যাপারটা পরবর্তীতে মেনে নিয়েছিলাম এই ভেবে যে, ঐ পরিস্থিতিতে সেটাই তোমার জন্য স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তুমি এসে যখন আমাকে জানালে শবে কদরের রাত্রিতে তোমার শপথের কথা, তখন আমি বেশ আশ্চার্যান্বিত হয়েছিলাম যে, এই কথাটি তুমি আমাকে সেদিন জানাচ্ছ বলে। তোমার উচিত ছিল, শবে কদরের পরবর্তীতে প্রথম যে দিন আমার সাথে তোমার ফোনে কথা হয়, সেদিনই আমাকে সে কথা জানানো। তুমি তোমার শপথে এতটাই অনড় ছিল যে, তুমি এসে আমার পাশে বসনি, এমনকি আমার চোখে যখন অশ্রু টলমল করছিল তুমি তখন আমার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য বাতাসে হাত নাড়াচ্ছিলে। তোমার সাহস হয়নি আমার হাতটি ধরার।

জানিনা তুমি কেন এমনটি করেছিলে সেদিন। তোমার সেই আচরন সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা তুমি পরবর্তীতে দিয়েছিলে, তা ছিল আমার কাছে নিতান্তই হাস্যকর। তোমার সেদিনের ঐ আচরন আমাকে কতটা আঘাত করেছে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা। এবার আসা যাক সিলেটে আমার দ্বিতীয় সফরের কথায়। যেদিন আমার সাথে তোমার দেখা করার কথা, তার আগের দিন রাতে রাজীবের সাথে কথা বলে আমার প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেলো।

সে রাতে আমি একফোটাও ঘুমাতে পারিনি। রাজীব আমাকে বলেছিলো সকাল ৮টা হতে ৮.৩০মিঃ এর মধ্যে চলে আসবেন। আমি সেখানে যাবার আগ মুহুর্ত পর্যন্তও জানতাম যে, আমি ৯.৩০মিঃ এর চেয়ে বেশী সময় পাচ্ছিনা। তাই আমি আমার নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে পৌঁছালাম ১০মিঃ পূর্বে। গিয়ে রাজীবের ঘুম ভাঙালাম।

কিন্তু সেদিন তুমি পৌঁছালে নিদিষ্ট সময়ের শেষ সীমার ৫মিঃ পরে। অর্থাৎ রাজীবের বাসায় আমাকে মোট ৪৫মিঃ তোমার পথ চেয়ে বসে থাকতে হয়েছিলো। তোমাকে এই কথা যখন বলছিলাম তখন তুমি বেশ ঝাঁঝের সাথেই জানাচ্ছিলে, “আমিতো ইচ্ছে করলে নাও আসতে পারতাম। ” কথাটা আমাকে আঘাত করলেও আমি এই নিয়ে তোমাকে আর কিছু বলিনি। তুমি সেদিন এসে আমাকে কৃতার্থ করেছিলে।

সেদিন আসাটাকেই তুমি আমার প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছো। কিন্তু রাজীবের বাসায় এর আগের সাক্ষাৎগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিলো কিনা আমি মনে করতে পারছিলাম না। বরং আমি দু’একবার পরে এসে তোমাকে আমার জন্য অপেক্ষারত পেয়েছিলাম। আমার এ অভিযোগগুলো তোমার কাছে খুব ছেলে-মানুষী অভিযোগ মনে হতে পারে। কিন্তু ঐ যে, চিঠির শুরুতে উল্লেখ করা কথাটায় আবার আসতে হয়, “ভালবাসার সমুদ্রে হারাতে চায় যে তার কাছে সামান্য আঘাত পাওয়াই মাঝে মাঝে অনেক বড় বলে মনে হয়।

যে দুঃখ দিয়েছে তার কাছে এটা সামান্য বা মনে রাখার মতো কিছু নয়। কিন্তু যে পেয়েছে তার কাছে এটা বড় ধরণের ক্ষত বা দাগ সৃষ্টি করে। অনেক চেষ্টাতেও সে দাগ মোছা যায় না বরং থেকে যায়...। ” সেদিন আমি তোমার সাথে রাগটা ধরে রাখিনি এই কারনে যে, অনেক দিন পর আমাদের সাক্ষাৎ হলো, তার উপর আমি যখন রাগ করি তোমার মন খুব খারাপ হয়ে যায় যার ছাপ পড়ে তোমার চেহারায়। তোমার সে মলিন মুখ আমি সহ্য করতে পারিনা, খুব কষ্ট হয়।

তাই ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিতে হয়েছিলো। সেদিন আমি তোমার শপথ ভাঙতে চাইনি একথা জোর দিয়ে বলতে পারবোনা। তবে আমার ইচ্ছা ছিলো না ভাঙ্গার। তাই তুমি যখন পাশে বসতে আসলে আমি সরে গেলাম, তখন তুমি আমাকে বললে, “এতদিন তো জানতাম ছেলেরা মেয়ের পেছনে ঘুরে, এখনতো দেখছি উল্টো। আমি তোমার পেছনে ঘুরে মরছি।

” তাই তোমার পাশে বসেছিলাম এই জেনে যে, আমার পাশে বসতে তোমার আপত্তি নেই। আর পাশে বসে চেষ্টা করেছি নিজেকে সংযত রাখার। যতক্ষণ না তুমি আমাকে তোমার গালে আদর করতে বললে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আমি তোমাকে আদর করিনি, শুধু তোমার হাত ধরে বসেছিলাম। আর এর পরেই আমার সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। আর তুমি আমাকে শুনালে ছেলেরা এমনই।

কখনই নিজেকে সংযত রাখতে পারেনা। আমি হয়তো তোমাকে বারবার বলছিলাম আমি পারছিনা, কিন্তু আমি আগ্রাসী ছিলাম না কখনোই। মুখে কথাটি বারবার উচ্চারণ করাতে তুমি হয়তো গলে গিয়ে থাকবে। তাই তুমি আমাকে বললে, আমার গালে একটা আদর দাও। তুমি যদি সেদিন একথাটি উচ্চারন না করতে তাহলে শত কষ্ট হলেও আমি কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারতাম এবং সে অবস্থায় আমি ঢাকায় ফিরে আসলেও তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র রাগ হতোনা।

কেননা, সেদিন আমরা পাশে বসেছিলাম এবং আমি তোমার হাতটা নিজের হাতে ধরে রেখেছিলাম। জানিনা, তুমি আমাকে বুঝ কিনা, কিন্তু তোমার ইদানিংকার আচরনে আমি তোমাকে একটুও বুঝতে পারিনা। মনে হয় তুমি আমার অচেনা, ভিনগ্রহের কোন মানবী, যে জানে শুধু নিজেকে গুটিয়ে রাখতেই। সে হয়তো কোন এক সময় কোন এক পরিস্থিতিতে আমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলো, এখন ভুল বুঝতে পেরে ফিরে গিয়েছে নিজের পূর্বের জগতে। শেষবার (ফেব্রুয়ারী ০১, ২০০৫) তোমার সাথে ফোনে কথা বলেও আমার ধারনাগুলো বেশ জোরালো ভিত্তি পেয়েছে।

সেদিন তুমি কি কি বলেছো তোমার নিশ্চয়ই বেশ মনে আছে, সেগুলি আর তোমাকে ব্যাখ্যা করে জানাতে চাইনা। তুমি হয়তো ভাবতে পার আমি এখনই এই মুহুর্তে তোমাকে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে আছি। যদি এ ধরনের ভেবে থাক তবে জেনে রাখ তোমার ধারনা ভুল। আমি বেশ ভালভাবেই আমার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে। আমার এ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তোমার পরিবারের কাছে প্রস্তাবের পাঠানোর পূর্বে তোমার কাছে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম সেগুলি নিশ্চয়ই তুমি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওনি।

আমার শুধু ক্ষোভ তুমি এখন এসব চিন্তা করছো এবং শঙ্কা প্রকাশ করছো নতুন নতুন আরো অনেক বিষয়ে। অথচ প্রস্তাব পাঠানোর পূর্বে তোমার সুর অন্যরকম ছিলো। এটাই আমার ক্ষোভের একমাত্র কারন। তাই আমার উপলব্ধি, You have changed enough. ডিসেম্বরে আমি যখন সিলেট এসেছিলাম, সেদিন দেখা করতে গিয়ে আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে, আমাদের শেষ কবে দেখা হয়েছে তোমার মনে আছে কিনা, তুমি উত্তরে দিনটার কথা স্মরণ করতে পারনি। সেদিনটা মনে রাখা তোমার জন্য স্বাভাবিক ছিল, কেননা সেদিন ছিল স্বাতীর জন্মদিন এবং এ কথাটি তুমিই আমাকে জানিয়েছিলে।

তাই আমি আশা করেছিলাম দিনটা তোমার মনে থাকবে। আর যদি তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করে থাকতে, তাহলে তোমার জন্য দিনটা ভুলে যাওয়া ছিল অসম্ভব। তুমি যখন দিনটির কথা মনে করতে পারলেনা, তখন আমি বেশ হতাশ হয়েছিলাম, মনে মনে কষ্টও পেয়েছিলাম। নিতান্তই তুচ্ছ অভিযোগ তাইনা। আমার কষ্ট পাওয়া উচিত হয়নি।

আমার জানা উচিত ছিল তোমার স্মরণ শক্তি ভালনা। তুমি কিছু মনে রাখতে পারনা। তোমার কিছু মনে থাকেনা। তোমার এই গুনটি যখন আমি আবিষ্কার করলাম, তখন বুঝতে পারলাম জীবনে তুমি সুখী হতে পারবে। যার জীবনে অতীত কোন বাধা হয়ে দাড়াবেনা।

কেননা, অতীতকে তো তুমি স্মরণই করতে পারবেনা। তাই আমি বেশ খুশী যে, আমি অন্ততপক্ষে তোমার কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াবোনা। আমাকে তুমি সহজেই ভুলে যেতে পারবে। কেননা, তোমার স্মরণ শক্তি যে অতি দুর্বল!! তাই তোমাকে বলছি আমাকে ভুলে যাও এবং সুখী, সুন্দর, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে নাও। সুখে থেকো........, ও আমার নন্দিনী........., হয়ে কারও ঘরণী, জেনে রাখো.........., প্রাসাদেরও বন্দিনী........, প্রেম কভু মরেনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।