আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাক্ষাৎকার:উমবার্তো একো

বিস্মৃতি ও বিষাদটিলা

[উমবার্তো একো একাধারে অধ্যাপক, ঔপন্যাসিক এবং ভাষাবিজ্ঞানী। অন লিটারেচার, ফুকো-স পেন্ডুলাম, দ্য নেম অফ দ্য রোজ তার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থগুলোর অন্যতম। স¤প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের ম্যাগাজিনে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন। তার এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডেবোরাহ সলোমন। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৭ এ এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

] যদিও আপনার সবচেয়ে বড় পরিচিতি “দ্য নেম অফ দ্য রোজ” উপন্যাসের জন্য তারপরও আমরা জানি, আপনার করা রাজনীতি বিষয়ক মন্তব্যগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাজনীতি বিষয়ক লেখাগুলো নিয়ে আপনার বই “টার্নিং ব্যাক দ্য ক্লক” এ আপনি পাঠকদের ‘মিডিয়া পপুলিজম’ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। আপনি আমাদের বলবেন, এই ‘মিডিয়া পপুলিজম’ জিনিসটা কী? মিডিয়া পপুলিজম হলো শুধু মিডিয়ার কল্যানে কোন একজন মানুষের অস্বাভাবিক দ্রুততায় জনমানুষের কাছে পৌছে যাওয়া। একজন রাজনীতিবিদ, যিনি মিডিয়াকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন তিনি অতি সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে যেতে পারেন। এমনকি, তিনি পার্লামেন্টকে এড়িয়ে গিয়ে বা অগ্রাহ্য করে অর্থাৎ মানুষের জন্য কোন কাজ না করে ও সরাসরি জনমানুষের কাছে পৌছে যেতে পারেন।

আপনি ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির প্রচণ্ড সমালোচনা করে থাকেন, যিনি মিডিয়াকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে ব্যবহার করতেন। ১৯৯৪ থেকে ৯৫ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বারলুসকোনি ছিলেন ইতালির সবচেয়ে বড় ধনী। সেসময় তার হাতে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তিনটি টিভি চ্যানেল থাকার পরও তার নিজের মালিকানায় ছিল আরো তিনটি টিভি চ্যানেল। এক্ষেত্রে তিনি মূলত একজন উদাহরন-যোগ্য ব্যক্তি এবং এই জাতের মানুষ পুথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা অসম্ভব নয়। কিন্তু দেখা যায় এরা মিডিয়াকে কুক্ষিগত করতে প্রায় একই ধরনের কৌশল নিয়ে থাকে।

কিন্তু এফ.সি.সি-র মতো প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন ফেডারেল প্রতিষ্ঠান আছে মিডিয়ায় মনোপলি আটকানোর জন্য, এরা কী করছে। এরা করছে, কিন্তু এখানে মিডিয়া ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটা বিশাল ভারসাম্যহীনতা আছে, অন্তত নীতিগত বিষয়ে। তাহলে ইতালির পাশাপাশি অন্যান্য কোনো দেশের কপালেও কি “মিডিয়া-টেকওভারের” ভয় আছে? ইতালিকে বলতে পারেন পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনার একটি ল্যাবরেটরি। ফিউচারিস্ট আন্দোলন এখান থেকে শুরু হয়। ১৯০৯ সালে আমরা ফিউচারিস্টদের ম্যানিফেস্টো হাতে পাই।

নাৎসিবাদ শুরু হয় ইতালি থেকেই, তারপর তা ছড়িয়ে যায় স্পেন, বলকান এবং জার্মানিতে। মানে আপনি বলছেন যে, জার্মানরা নাৎসিবাদের ধারনা ইতালি থেকে পেয়েছিল? অবশ্যই, ইতিহাস তো আমাদের সেটাই বলে, তাই না? সম্ভবত, এটা শুধু ইতালিয়ান ঐতিহাসিকেরাই বলেন। আপনি চাইলে এটাকে না ও মানতে পারেন। কিন্তু আমার এতে কিছুুই যায় আসে না। আপনি প্রায়ই বলে থাকেন যে, ইতালি শিল্প, ফ্যাশন এবং নাৎসীবাদের পথপ্রদর্শক ! অবশ্যই, আমি যা বলি তা ভেবেচিন্তেই বলি।

বারলুসকোনি যাকে আপনি খুব সমালোচনা করতেন, তার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিশেবে রোমানো প্রোদি-কে কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন? প্রোদি আমার বন্ধু, তার জন্য আমার শুভকামনা। কিন্তু আমার মনে হয়, তার সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখতেই তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বারলুসকোনির ব্যক্তিত্বে একটা নায়কোচিত ব্যাপারস্যাপার ছিল। প্রোদির মধ্যে তা নেই, কিন্তু সেটা তার দোষ হতে পারে না। তবে সেটা তার দূর্বলতা।

বারলুসকোনির মতো প্রোদি তো ব্যবসায়ী ও নন, তিনি একজন বুদ্ধিজীবি। হ্যা, তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক। ১৯৯০ সালের দিকে প্রোদি আমার অধীনে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি রাজনীতিতে যোগ দিলেন। আপনি কি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলছেন, যেখানে এখন আপনি শিক্ষকতা করেন? হ্যা।

অবশ্য আমি এই মাসে অবসরে যাবো। আমার বয়স এখন ৭৫। আপনি কি কখনো রাজনীতিতে যোগ দেবার কথা ভেবেছেন? না, কখোনোই ভাবিনি। আমার বিশ্বাস, যার যেটা কাজ, সেটাই তার করা উচিত। আপনি তো অনেক দিকেই নিজের কর্মপরিধির বিস্তার ঘটিয়েছেন, নিজেকে কি আপনি প্রধানত ঔপন্যাসিকই মনে করেন? না, আমি মনে করি আমি একজন পণ্ডিত এবং উপন্যাস লেখার কাজটা আমি আর দশটা কাজের মতোই করে থাকি।

আপনি কি ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ উপন্যাসটি পড়েছেন? সমালোচকরা বলেন, এটা আপনার উপন্যাস ‘দ্য নেম অব দ্য রোজ’ এর বাজারি সংস্করণ? আসলে বন্ধুদের কথার মুখে আমি এটা পড়তে বাধ্য হয়েছি, আপনি যেটা বললেন সেটা সবাই বলছিলো। এ বিষয়ে আমার উত্তর হলো যে, ডন ব্রাউন আমার উপন্যাস “ফুকো-স পেন্ডুলাম” -এ তৈরী একটা চরিত্র, যে আধিভৌতিক বিষয়ে বিশ্বাস করে। কিন্তু আপনি ও তো মনে হয় এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, যা আপনার উপন্যাসে পাওয়া যায়? না, না। ‘ফুকো-স পেন্ডুলাম’-এ আমি এ জাতীয় মানুষ নিয়ে কৌতুক করেছিলাম। এ কারণেই তো বললাম, ডন ব্রাউন আমারই তৈরী একটা চরিত্র।

শেষ প্রশ্ন, কী মনে হয় আপনার, একশ বছর পরে আপনার লেখা কেউ পড়বে? এ নিয়ে কি আপনি আদৌ ভেবেছেন? যে লেখক লিখে যান, অথচ ভাবেন না যে, একশ বছর পর তার লেখাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটবে, তিনি কোন লেখক হতে পারেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।