আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুষ কিংবা ঘাসের গল্প



অদ্য হঠাৎ করিয়াই আমার মস্তিষ্কে এক অদ্ভুত চিন্তা খেলিয়া গেল এবং আমি ঘুষ ও ঘাসের মধ্যে সাদৃশ্য - বৈসাদৃশ্য খুজিতে নিয়োজিত হইয়া পড়িলাম। ঘুষ আমাদিগের বঙ্গদেশে এক অতিব পরিচিত বিষয়। আমি বহুবার নিজ কর্ণে শুনিয়াছি যে বিবাহের সম্বন্ধ সম্পর্কিত কথাবার্তায় পাত্রের জরুরী গুণাবলীর মধ্যে একটি হইতেছে " পাত্রের ভাল উপরি রহিয়াছে। " ইহা আমার কাছে বোধগম্য নয় যে ঘুষকে কেন এহেন ক্ষেত্রে উপরি বলা হইয়া থাকে। ব্যাকরণের ভাষায় বলিতে গেলে যাহা উপর হইতে পাওয়া যায় তাহাই 'উপরি'; কিন্তু ঘুষ কোনভাবে উপর হইতে আগমণ করে ইহার কোন বাস্তব প্রমাণ নাই।

এমতাবস্থায় ইহাই অনুমান করা যাইতে পারে যে ঘুষ শব্দটিকে সামান্য শ্রুতি মধুর করিবার প্রত্যাশায় এই জাতীয় অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ শব্দাবলীর ব্যবহার করা হইয়া থাকিতে পারে। যাহা হউক, ইহা নিয়া আমার বেশি আলোচনা করিবার প্রত্যাশা নাই। এইবারে আসি ঘাসের প্রসংগে। প্রথমে ভাবিয়াছিলাম যে সকল চতুষ্পদী প্রানীকুল এই তৃণ ভোজনের মাধ্যমে জীবন ধারণ করিয়া থাকে উহাদের সাথে ঘুষ ভক্ষণকারী ব্যক্তিবর্গের তুলনা করিব। কিন্তু তাহা করিতে গিয়া দেখি চতুষ্পদী প্রানীকুল মনুষ্যজাতির উপকার বৈ অপকার তো কিছুই করেনা।

কিন্তু যে সকল দ্বিপদী জন্তু ঘুষ নামক খাদ্য অহরাত্রি ভক্ষণ করে উহারা মনুষ্যজাতির তরে এক বিরাট অভিশাপ স্বরূপ। তবে আমরা চতুষ্পদী প্রানীকুলের সাথে এই মনুষ্য রূপী দ্বিপদী জন্তুর কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের তুলনা অবশ্যই করিতে পারি। সেই মিলগুলা আমি নিম্নে তুলিয়া ধরিতেছি: ১. চতুষ্পদী প্রানীকুলের মতই দ্বিপদী ঘুষখেকো জন্তুদের কোনই জ্ঞান বুদ্ধি বা বোধ নাই। উহারা শুধুই নিজেদের লইয়া থাকে, এবং নিজের জৈবিক-সামাজিক তাড়না মেটাইবাই জন্যে যে কোন কিছু করিতে পারে। ২. ছাগল নামক প্রানীটি যেমন যেখানে যাহা পায় কোন বাছবিচার ছাড়া তাহাই ভক্ষন করে তেমন দ্বিপদী ঘুষখোর জন্তুগণও যেখানেই সুযোগ পায় বাছবিচার ছাড়ার ঘুষ খাইতে প্রবৃত্ত হয়।

তাহারা বিবেচনা করেনা কাহার কাছথেকে ঘুষ খাইতেছে বা কত পরিমানে খাইতেছে। ৩. গরু নামক প্রানীটি আমাদের সবাই কাছেই পরিচিত। উহার স্বভাব লক্ষ্য করিলে দেখিব গরুকে যখনই কিছু খাইতে দেয়া হয় তাহার না করেনা । ক্ষুধা লাগিলেও খায়, ক্ষুধা নিবৃত হইয়া গেলেও খায়। অতিরিক্ত গ্রহণকৃত খাদ্য পরে সুযোগ মত জাবর কাটিয়া কাটিয়া হজম করে।

দ্বিপদী ঘুষখোর গণও তেমনি প্রয়োজন থাকিলেও ঘুষ খায়, প্রয়োজন মিটিয়া গেলেও ঘুষ খায় - ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষন করিয়া রাখে হয়তো। সুযোগ হইলে গরুর মত জাবর কাটিবার প্রত্যাশায় হয়তো এমনটি করে। যাহা হউক। আমি আবারও চতুষ্পদী প্রানীকুলের উপকারের কথা স্বীকার করিতেছি এবং শুধুমাত্র ঘুষখোরদের সহিত কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল তুলিয়া ধরিলাম মাত্র। ইহাতে যদি চতুষ্পদী প্রানীকুল কষ্ট পাইয়া থাকেন তবে আমি ক্ষমা প্রার্থী।

তবে চতুষ্পদীদের এই উপদেশ দিতে চাই যে আপনারা যদি এমত বিড়ম্বনার হাত হইতে নিস্তার চান তাহা হইলে আপনাদের কিছু স্বভাব বদলাইতে হইবে। কেননা দ্বিপদী ঘুষখোর প্রজাতির জন্তুকুলের স্বভাব বদলের কোনই আশা নাই। তাই আপনাদের বদলাইতে হইবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।