আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলো ফিরে আসি,প্রিয়দের কাছে।

ঈশ্বরের সাথে বোঝা-পড়ার দিন গুনছি।

একগাদা বেলুন নিয়ে দাড়িয়ে আমার ছোট ভাইটা তার এক মাত্র ভাগনের জন্য। কোথা থেকে যেনো একটা চড়ুই ধরেছে গতকাল। কত কিছু দিয়ে মন ভোলানোর চেষ্টা! আনন্দ লাগে। মনে পরে, ছোটবেলার কথা।

খুব ছোটবেলায়, বোতলের দুধ শেষ হওয়াতে একবার রাত দুপুরে গরুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দুধ দোহায়ে জ্বাল করে দিয়েছিলো নানা। খালার সাথে ঘুরে বেড়াতাম এদিক সেদিক- বেদিক। ছোট মামার কাধে উঠে শত শতবার নানু বাড়ি চলে এসেছি বৃহস্পতিবার স্কুল শেষ করেই। শুক্রবার সারাদিন থেকে কাধে চড়ে বাড়ি আসা। বর্ষার সময় নৌকায় চড়ে শাপলা তুলতে তুলতে।

আমার দাদু, আশে পাশের যার কাছে যা দেখতো , জনাতে চাইতো কোথা থেকে কিনেছে, কত দাম। আমার জন্য একটা আনিয়ে নিত। দাদুর হাতে ভাত খেয়েছি অনেক দিন পর্যন্ত। কেউ কিছু বলতে পারতোনা আমাকে। কেউ একজন বলেছিলো "একেবারে গরুর মত চোখ মেয়েটার" তার ভাগ্য খারাপ ছিলো সেদিন।

দাদু তাকে ঝেড়ে বকা দিয়েছিলো। মনে পরে, সে চাচি টা আমাকে দেখলেই ভেংচি দিত। কোনো কারনে আম্মা বকলে, সেদিন দাদু না খেয়ে থাকতো। আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চাইতোনা। মাঝে আমার আনন্দের সীমা থাকতোনা যখন স্কুল বন্ধ করে বেড়াতে যেতাম দাদুর সাথে।

আম্মা মুখ গোমড়া করে বিদায় দিত আর আমার সেকি আনন্দ। দাদা, দাদি, নানা, নানু, ফুপুরা, খালা, মামাদের কি যে আনন্দ আমাকে নিয়ে। তাদের সবকিছু ছিলো যেনো আমাকে ঘিড়ে। নিজেকে খুব দামি মনে হত। আত্নবিশ্বাসটা খুব জোরালো ছিলো সেই ছোটবেলা থেকে।

কত মানুষ ভালো বাসার। কত ভালোবাসা চারদিকে। কি আনন্দ! কষ্ট লাগছে, আমার ৩বছরের ছেলেটা আমাদের বাড়ি আর দীপনদের বাড়ি, দু-বাড়িরই বড় সন্তান। সে কারো কোলে যায়না। নানু বা দাদু কে দেখলে লাফিয়ে ঝাপিয়ে পরেনা।

মামার সাথে দৌড় বাজি খেলেনা। চাচা, ফুফু, খালাদের দিকে তাকায় যেনো ভূত দেখছে। চিৎকার করে কাদতে ইচ্চে করছে আমার, আমার ছেলেটা আনন্দময় শৈশবটা পাচ্ছেনা। অপার সেই আনন্দ থেকে বন্চিত হচ্ছে রূঢ় ভাবে। এয়ারপোর্ট থেকে নামার পর থেকেই শুরু।

ভালোবাসায় ভরা হাত গুলো বাড়িয়ে যেই ওকে ছুঁতে যায় , ও চিৎকার করে উঠে ভয়ে বা বিরক্তিতে। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। নিজেদের খুব অপরাধী লাগছে। তোমাকে খুব অপরাধী লাগছে। কিংবা কিইবা করার ছিলো? কিছুই ছিলোনা? জানিনা।

আছে কিছু? আছে। এত ভালোবাসার ছড়াছড়ি রেখে আমি ওকে নিয়ে একা বিদেশ বিভুঁয়ে থাকতে চাইনা। ওর অধিকার, ওর দাদু, নানুর অধিকার ইগনোর করতে পারবোনা। আর এভাবে থাকতে চাইনা। সোনালী সময়গুলো থেকে ওকে আমি আর বন্চিত করতে চাইনা।

দীপন, আমরা না হয় বাংলাদেশে চলে আসি। একেবারে। তুমি ভাবছো আবার ওখানে ফিরে গেলে আমি রিয়েলিটি বুঝতে পারবো। নিজেই বুঝবো এখানে থাকাটাই ভালো। না, বিশ্বাস করো।

নিবিঢ় যখন আমার শরীরে যায়গা নিয়েছে, তখন থেকেই বুঝেছি, এই বাংলাদেশের মানুষগুলো ওর কি প্রয়োজন। এই নানু-বাড়ি আর দাদু-বাড়ি দুটো ওর অনেক প্রয়োজন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।