আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হত শিল্পের দৈন্যরূপ!

ইমরোজ

কোলকাতার লোকেরা যখন তাদের রাজ্যে গণতন্ত্রহীনতার কথা বলে তখন আপণ মনেই হেসে উঠি। কারণ গণতন্ত্রহীনতার কিছুই তারা দেখেননি। গণতন্ত্র এই উপমহাদেশে একমাত্র ভারতেই আছে। এবং অত্যন্ত স্বচ্ছ গণতন্ত্র সেখানে। কিন্তু কোলকাতায় এখন গণতন্ত্রহীনতার প্রশ্ন আসতেই পারে।

কারণ তাসলিমা নাসরিনকে বের করে দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে। আমাদের দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আমরা করতে পারি নি। আর পারবোও না। যে পনের বছর গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে সেটা আসলে গরাদের আড়ালে থেকে কবিতা লেখার মত। কোলকাতায় প্রথমে মুসলিমদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন তাসলিমা নাসরিন।

এরপরে তাকে দেশ ছাড়তে বলল হিন্দু মৌলবাদিরা। একটা গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের অধিকার থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই দলের রোষানলে পরে তাসলিমাকে রাজ্য ছাড়তে হলো। এখন কোলকাতায় গণতান্ত্র নিয়ে গণমানুষের ভেতর প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিন্তু কোলকাতার এই অবস্থা আমাদের আরও তের বছর আগে হয়ে গেছে।

আমরা তের বছর আগে বিদায় করেছি আমাদের দেশের তথাকথিত বাকস্বাধীনতাকে যেটা নাকি সংবিধানে উল্লেখ করা আছে। খুবই উপহাসের বিষয় একটা জাতির জন্য। তাসলিমা নাসরিন কী লিখল না লিখল, সেটা শিল্পোন্নত না অবনত সেগুলা আমাদের দেখার বিষয় না। তিনি যদি খারাপ কিছু লিখেই থাকেন তাহলে অবশ্যই সেটার সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা কী ধরণের গণতান্ত্রিক কাজ হলো? ভারতের রাজধানী দিল্লী।

সেখানকার মসজিদের ইমাম বলেছেন, এই ব্যাক্তিত্বকে তারা এখানে থাকতে দিতে চায় না। আবারও সেই মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলার মতই হয়ে গেল। কেউ তার লেখার গঠনমূলক সমালোচনা করে না। অনেকে তো না পড়েই চিল্লাচ্ছেন। কোন সভ্য দেশে এরকম ঘটনা ঘটে না।

আমার যদি লেখা নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে আমি পড়বো না। সেটাও পাঠকের ব্যাক্তিগত বিষয়। তাই বলে লেখককে দেশ ছাড়া করতে হবে কেন? ধর্মীয় গোড়ামি পুষ্ট লোকেদের কাছে থার্ড ওয়ার্ল্ডে শিল্প এভাবেই বিপন্ন হয়। এখানে ধর্মীয় গোড়ামির জয় হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। আর শিল্প সাহিত্যের উন্মুক্ত চর্চাকে আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছি।

অনেকে বলবেন উন্মুক্ত শিল্প সাহিত্যের দরকারটা কী? যদি সেটার দরকার না হত, তাহলে এরিস্টটলের মতবাদকে কলাগাছ দেখিয়ে এরিস্টার্কাস বলতে পারতেন না যে পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে। যদিও কথাটা বলার জন্য তাকে মরতে হয়েছিলো, তথাপি মানুষ জানতে পেরেছে সত্যটা কী। আরও অনেক উদাহরণ টানতে পারতাম। কিন্তু এখানেই ইতি টানতে হচ্ছে। আমাদের দৈন্যতা আমরা দেখেও দেখিনা।

বুঝিও না। এর খেসারত পরে দিতে হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।