আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দি গ্রেট মিউজিয়াম রবারি

*

খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার ০৪ দি গ্রেট মিউজিয়াম রবারি বাংলাদেশের অনেক পরিবারেই এমন কিছু না কিছু জিনিস থাকে যা সে পরিবারের স্মৃতি ধরে রাখে। হতে পারে সেটা চিনামাটির ক্রোকারিজ কিংবা লম্বা দেয়াল ঘড়ি অথবা অ্যালবামে রাখা পুরনো দিনের ছবি। যতো দিন যায় পরিবারের স্মৃতির ঘরে এসব জিনিসের গুরুত্ব বাড়তেই থাকে। কোনো কারণে ছবি নষ্ট হলে বা প্লেটের কোণা ভেঙে গেলেও মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ এর সঙ্গে মা বা দাদির স্মৃতি হয়তো জড়িয়ে আছে।

টাকা দিয়ে এসব জিনিসের কোনো মূল্যায়ন করা যায় না। একটি পরিবারের মতো একটি জাতির জীবনেও এমন কিছু জিনিস থাকে যা তার ঐতিহ্যকে লালন ও ধারণ করে। এর যেমন আবেগের দিক আছে, তেমনি আছে আন্তর্জাতিক গুরুত্বের দিক। প্রতœতাত্ত্বিক সম্পদ একটি দেশ বা জাতির সে ধরনের প্রতীক হিসেবেই কাজ করে। যে কোনো প্রতœসম্পদ হারানোর অর্থ নিজের ইতিহাসকেই হারিয়ে ফেলা।

সম্প্রতি ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছেÑ মাস্টারপিসেস অফ গেঞ্জেস ডেল্টা, কালেকশন ফ্রম দি বাংলাদেশ মিউজিয়ামস নামে কয়েক মাসব্যাপী এক প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনী উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর, রাজশাহীর বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম, ময়নামতি মিউজিয়াম এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরে রাখা ১৮৯টি নিদর্শন বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪২টি পুরাকীর্তি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, বাকি নিদর্শনগুলো পাঠানো হতে পারে ৭ অথবা ৮ ডিসেম্বর ২০০৭। যেসব প্রতœসামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে তার অধিকাংশেরই কোনো কপি আমাদের নেই। এর মধ্যে কিছু প্রতœসামগ্রী সারা পৃথিবীর মধ্যে দুর্লভ।

যেসব প্রতœসম্পদ দেশ ছেড়েছে বা ছাড়ছে তার মধ্যে আছে পাল যুগের পাচশ পৃষ্ঠারও বেশি ঐতিহ্যবাহী পুথি প্রজ্ঞা পারমিতা। যার তুলনা বা উদাহরণ আর কোথাও নেই। বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে রাখা একমাত্র স্বর্ণ প্রলেপযুক্ত বুদ্ধমূর্তি মঞ্জুশ্রী, যাকে ১৯১০ সালে মহাস্থানগড়ের কাছে সরলপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। দশম শতকের বজ্রসত্ত্ব, সূর্যমূর্তি, দুর্গা মহিষমর্দিনী, কষ্টিপাথরের অধ-নারীশ্বর, লোকনাথ, নটরাজসহ অমূল্য সব প্রতœসামগ্রী যেসবের টাকা দিয়ে দাম নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান প্রতœসামগ্রী বিদেশে পাঠিয়ে প্রদর্শনী করার এমন নজির পৃথিবীর আর কোনো জায়গায় নেই।

ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি বাংলাদেশ করেছে তা অস্বচ্ছ এবং এতে করে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ চুরি, ডুপ্লিকেট কিংবা নষ্ট হওয়ার সর্বোচ্চ আশঙ্কা রয়েছে। কেননা পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করা হয়নি। জাদুঘর থেকে যে কোনো সামগ্রী সরাতে হলে জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি লাগে। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডকে অকার্যকর করে রাখা অবস্থায় চুক্তি ও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলেছে। মিউজিয়াম থেকে প্রতœসম্পদ পাঠানোর এ প্রক্রিয়াকে পাচার হিসেবে অভিহিত করে শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ দেখা দেয়।

তবে আইনগতভাবে একে চ্যালেঞ্জ করার প্রথম উদ্যোগ নেন ব্যুত্থান মার্শাল আর্টের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম এ কামাল ইউরী। প্রতœসম্পদ রক্ষার আইন এ দেশে তেমন জোরালো নয়। ১৮৭৮ সালের আইনকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। সে আইনেই যে মামলা করা হয়েছিল তার ভিত্তিতে প্রতœসামগ্রী পাঠানোর ওপর আদালত স্টে অর্ডার দেয় এবং দেশ জুড়ে প্রতিবাদের মুখে সরকার একটি অনুসন্ধান ও পরামর্শক কমিটি গঠন করে। পরামর্শক কমিটির সদস্যরা লক্ষ্য করেন, যেসব প্রতœসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে তা কোনো প্রামাণিক প্রতিস্বাক্ষর রাখা হয়নি।

প্রতিটি সামগ্রীর তিন দিক থেকে স্টিল ছবি বা ভিডিও করা হয়নি। অর্থাৎ ন্যূনতম যে বিষয়গুলো মানা উচিত তার কোনো কিছুই করা হয়নি। এমনকি কমিটির সদস্যদের অনেক বক্সের ভেতর কি আছে তা-ও দেখতে দেয়া হয়নি। রাজশাহীতে যখন প্রতœসামগ্রী বক্সবন্দি হচ্ছিল তখন এর পরিচালক বলেন, কাঠের বক্সের ভেতর ফোম দিয়ে যেভাবে প্যাকিং হচ্ছে তাতে মনে হয় না কোনো ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তারপরও জাদুঘরের এক কর্মকর্তা সব সময় এর সঙ্গে থাকবেন।

বিষয়টি যেন এমন, একদল যাত্রীর সঙ্গে একজন ডাক্তার যাচ্ছেন। কেউ অসুস্থ হলে তিনি চিকিৎসা করবেন। কিন্তু এসব সামগ্রীর একটার গায়ে যদি সামান্য আচড়ও লাগে সেটাও বড় ক্ষতি। এছাড়া ভ্রমণ পথে যদি তা ধ্বংস বা নষ্ট হয় সেটার জন্য হাজার ক্ষতিপূরণ দিলেও তা শোধ হবে না। এমন একটি পরিস্থিতিতে পরামর্শক কমিটির কোনো মতামত না নিয়ে, আদালতের স্টে অর্ডার বা স্থগিতাদেশকে পরোয়া না করে ৩০ নভেম্বর ২০০৭ শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে দিনের বেলা হোমবাউন্ড কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানে করে জাতীয় জাদুঘর থেকে তুলে নেয়া হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোকে।

এসব কাভার্ড ভ্যানের গায়ে লেখা ছিল, জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম। ঘূর্ণিঝড় সিডর-২০০৭। সহায়তায় ইউএসএইড। বাস্তবায়নে : সেভ দি চিলড্রেন ইউএসএ। জাদুঘর থেকে প্রথম চালান পাঠানোর সময় পথে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন অ্যাক্টিভিস্টরা।

কিন্তু পুলিশি কড়া নিরাপত্তা, গ্রেফতার ও লাঠিচার্জে চোখের পানি ফেলে তাদের অসহায়ভাবে দেখতে হয় কাভার্ড ভ্যানের চলে যাওয়ার ঘটনাটি। বাংলাদেশ থেকে প্রতœসম্পদ নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নতুন নয়। এর আগে ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে ইওরোপে বেশ কিছু প্রতœসামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, রোস্টোরেশন করা হবে। অর্থাৎ ঠিক করা হবে।

কিন্তু আর কোনো দিনই সে প্রতœসামগ্রী বাংলাদেশে ফিরে আসেনি। প্রতœসম্পদ পাচারের যে অবৈধ বিজনেস বিশ্ব জুড়ে চলে তার শিকার বাংলাদেশ হয়েছে নিয়মিতভাবে। এটি বিলিয়ন ডলারের বিজনেস। ফলে এর কাছে কোনো বাধাই টিকতে পারে না। কেননা সমাজের প্রতিষ্ঠিত, প-িত, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ পাচারের কাজে জড়িত থাকেন।

এডুকেটেড মানুষের সর্বোচ্চ অপরাধ বা ইন্টেলেকচুয়াল ক্রাইমগুলোর একটি হলো প্রতœসম্পদ পাচার। এদের মানসিকতা হলো এমন, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অশিক্ষিত ও অমার্জিত। এসব দেশে এতো মূল্যবান প্রতœসামগ্রী রাখার কোনো অর্থ নেই। বিশ্বের সব প-িত ও পর্যটক যেহেতু ইওরোপ-আমেরিকাসহ ধনী দেশগুলোতে যায়, সেহেতু প্রতœসম্পদগুলো সেখানেই প্রদর্শিত হওয়া উচিত। প্রতœসম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে কোনো নীতির ধার ধারে না কেউ।

এমনকি সারা বিশ্ব জুড়ে শিক্ষার জন্য প্রশংসিত ইউনিভার্সিটিগুলোরও গরিব দেশের প্রতœসম্পদ প্রদর্শনীর নাম করে মেরে দেয়ার অনেক নজির আছে। বাংলাদেশের প্রতœসম্পদ পাচারে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত নামটি হলো ডেভিড নেলিন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে সামাজিকভাবে এ দেশে খুবই ভালো অবস্থানে ছিলেন। অভিযোগ আছে, তিনি একশরও বেশি মূল্যবান প্রতœসম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন বাংলাদেশ থেকে। এ ধরনের পাচার নিয়ে কিছু শ্বেতপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে প্রতœসম্পদ চুরি ও পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন মন্দির থেকে মূর্তি পাচার হচ্ছে অহরহ। অধিকাংশ এলাকার মানুষ গরিব হওয়ায় তারা যেমন সেসব সামগ্রীর নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তেমনি অভাবে পড়ে অল্প টাকার বিনিময়ে চুরি করে দিতেও দ্বিধা করছে না। গত কয়েক বছরে শুধু উপকূলীয় অঞ্চলের রাখাইনদের বিভিন্ন মন্দির থেকে একশর কাছাকাছি বুদ্ধমূর্তি চুরি হয়েছে। এসব চুরির পেছনে এমন সব মানুষ জড়িত থাকেন যাদের কাছে আইনের হাত পৌছায় না।

ফলে দেশ থেকে কি পরিমাণ এবং কতো মূল্যবান প্রতœসামগ্রী পাচার হচ্ছে তার সঠিক পরিমাণ কখনোই বের করা সম্ভব নয়। আর যা পাচার হচ্ছে তার খুব কমই ধরা পড়ছে এবং পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। কারণ আমাদের মিডিয়ার কাছে এর গুরুত্ব কম। গত ছয় মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রতœসম্পদ পাচারের কিছু চিত্র। নওগায় রানীনগর উপজেলার জলপাই গ্রাম থেকে ৮৪ কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের একটি নারায়ণ মূর্তি উদ্ধার।

আনুমানিক দাম তিন কোটি টাকা। দিনাজপুরে পরিত্যক্ত অবস্থায় কষ্টিপাথরের শিবমূর্তি উদ্ধার করে র‌্যাব। মাথাবিহীন এ মূর্তির ওজন আট কেজি, উচ্চতা ১৭ ইঞ্চি। পঞ্চগড়ে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গের অংশ উদ্ধার। ওজন সাড়ে ১৮ কেজি।

দাম ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগরে ছয় কোটি টাকার কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার। ইনডিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে এটি মাটিতে পুতে রাখা হয়। জয়পুরহাটে র‌্যাব আটক করে তিন কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের মূর্তি। মূল্য পাচ লাখ টাকা।

সাতক্ষীরায় প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ লাখ টাকা দামের একটি কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার, তিনজন গ্রেফতার। বগুড়ায় ময়লার স্তূপ থেকে সোনার মূর্তি উদ্ধার। খুলনায় পাচ কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ আটক তিন। নওগার আত্রাইয়ে চার মণ ওজনের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার। ৩৭ ইঞ্চি উচ্চতা ও ২০ ইঞ্চি চওড়া।

যশোর মনিরামপুরে চারশ গ্রাম ওজনের মূর্তি উদ্ধার করা হয় পাট ক্ষেতের মধ্য থেকে। দিনাজপুরের কাহারোল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় শিবমূর্তি উদ্ধার। আনুমানিক দাম এক কোটি টাকা। বগুড়া, শেরপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার আটটি কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার। এর মধ্যে আছে বিষ্ণু, বুদ্ধমূর্তি, সরস্বতী, কালী ও নারায়ণ মূর্তি।

বগুড়ায় মূর্তি পাওয়া যায় মাছের খামারের মাটির নিচ থেকে। যশোরের কেশবপুরে ১৬ কেজি ওজনের শিবলিঙ্গ উদ্ধার। একজন গ্রেফতার। কুয়াকাটার হোটেল সমুদ্র বিলাস থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার। আটক চারজন।

মহেশখালী রাখাইন বৌদ্ধ মন্দিরের প্রাচীন মূর্তি গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার। বগুড়ায় শ্বেত পাথরের মূর্তি উদ্ধার। ওজন ৩৫ কেজি। দিনাজপুরে কাকর গ্রামের এক বাড়ি থেকে ৩৬ কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের একটি বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার। এসব ঘটনা শুধু পথে-ঘাটে ঘটছে এমন নয়।

প্রতœসম্পদ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের ভেতরেও ঘটছে অনেক ঘটনা। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের জালিয়াতির বড় উদাহরণ হয়ে আছে খাসারপান মূর্তি। বরিশালের বানারীপাড়ার গোলাম মোস্তফা দুলাল তার নিজ এলাকায় পুকুর কাটতে গিয়ে একটি প্রাচীন মূর্তি পান। এ কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বরিশালের চাখার জাদুঘরের জিম্মাদার সেটিকে দুর্লভ খাসারপান মূর্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং দুলালকে তা প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরে দিয়ে দিতে উৎসাহী করে তোলেন।

এরপর দীর্ঘদিন দুলাল মূর্তিটির অবস্থান জানতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ঢাকায় আসেন। মন্ত্রণালয় ও অন্যভাবে লেখালেখি এবং আবেদন করে তিনি বাধ্য করেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরে রাখা মূর্তিটির সামনে তাকে নিয়ে যেতে। দুলাল দেখেন, যে মূর্তিটি তিনি দিয়েছিলেন সেটি সেই মূর্তি নয়। প্রায় একই রকমের মাটি দিয়ে বানানো একটি মূর্তিকে রঙ করে রাখা হয়েছে। এ জালিয়াতির ঘটনা ২০০৫-এর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয়।

এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর কোনো উত্তর দিতে পারেনি সে বৈঠকে। অভিযোগ আছে, চাখার মিউজিয়ামের জিম্মাদার প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আসল মূর্তিটি বিক্রি করে দেন। আনুমানিক প্রায় ১৫ কোটি টাকা দামের এ মূর্তিটি সংগ্রহ করতে তাদের খরচ হয়েছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের সেই কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো কর্মরত আছেন। ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে যারা বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যাচ্ছেন তারা প্রতিদিন ৮০ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার ৬০০ টাকা করে পাবেন।

ছয় মাস পর যখন তারা ফিরবেন তখন তাদের প্রত্যেকের সংগ্রহে থাকবে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা। গিমে মিউজিয়াম সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কোথাও শোনা যায়নি; বরং জানা যায়, চায়নাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হওয়া অনেক প্রতœসম্পদ সেখানে শোভা পাচ্ছে। যারা উৎস নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তাদের কোনো সদুত্তর গিমে কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। সম্প্রতি গিমে মিউজিয়াম ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার ও সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট ড. শহীদুল আলম। অনলাইনে তিনি শহীদুল নিউজ-এ যে বর্ণনা দিয়েছেন তা পড়লে আতঙ্কিত হতে হয়।

তিনি জানিয়েছেন, গিমের সামনে ভবঘুরেরা ঘুরে বেড়ায় এবং এর ভেতরে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিক পরিচয় দিলে তার সঙ্গে গিমের ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশ শো-এর কিউরেটর কেউই আর কথা বলতে চাননি। বিষয়গুলো আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। গিমে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এ প্রতœসম্পদ প্রদর্শনীর ফলে বাংলাদেশের ইমেজ বিশ্বে বাড়বে। কথিত মার্চ ২০০৮ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এ প্রদর্শনীতে প্রবেশ ফি সাত ইওরো বা প্রায় সাতশ টাকা। বাংলাদেশ এ থেকে কোনো টাকা পাবে না।

এতো সব দুর্লভ সম্পদ প্রদর্শনীতে দিয়ে বাংলাদেশ পাবে প্রদর্শনীর ২০টি রঙিন ক্যাটালগ। গরু মেরে জুতা দান কথাটি বদলে এখন করা উচিত প্রতœসম্পদ মেরে ক্যাটালগ দান। প্রশ্ন ওঠে, ফ্রান্স কি কখনো লুভ মিউজিয়াম থেকে লিওনার্ডো ডা ভিঞ্চির আকা মোনা লিসা পেইটিংয়ের অরিজিনাল কপি নিয়ে এসে ঢাকায় বা রাজশাহীতে প্রদর্শনী করবে? মোনা লিসা যেমন অমূল্য, আমাদের মঞ্জুশ্রী কিংবা প্রজ্ঞা পারমিতা বা বাকি প্রতœসম্পদগুলোও তেমনি অমূল্য। অভিযোগ আছে, প্রতœসম্পদের রেপ্লিকা বা হুবহু নকল তৈরিতে ফ্রান্স খুবই বিখ্যাত। বাংলাদেশি প্রতœসামগ্রীর রেপ্লিকা করে যদি তারা ফেরত দেয়, আমাদের এমন কোনো এক্সপার্ট নেই যিনি তা ধরতে পারবেন।

এছাড়া যে কোনো দুর্ঘটনায় যদি প্রতœসম্পদের ক্ষতি হয় তার দায়-দায়িত্ব কে নেবেন? আর দায়িত্ব নিলেই কি আমরা তা ফিরে পাবো? পুরো ঘটনায় আদালত অবমাননা হয়েছে কি না তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি যে প্রতœসম্পদ এখনো পাঠানো হয়নি সেগুলো না পাঠানোর দাবিও উঠেছে। ইরাক যুদ্ধের পর আমেরিকা ও বৃটেন যখন ইরাক দখল নেয়, তখন হত্যা ও ধ্বংসের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সভ্যতার ইতিহাসের কলঙ্কময় ঘটনাটি ঘটে। ব্যবিলনিয়ান সভ্যতার কেন্দ্র ইরাকের মিউজিয়াম লুট হয়। ইরাকি মিউজিয়ামের অনেক প্রতœসম্পদ এখন পশ্চিমি দেশগুলোর মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে। বাংলাদেশে যুদ্ধ চলছে না।

তারপরও মিউজিয়াম থেকে পুলিশি প্রহরায় দিনে-দুপুরে যা ঘটলো তাকে কি বলা যায়? এর শিরোনাম হয়তো হবেÑ দি গ্রেট মিউজিয়াম রবারি, বা ভয়ঙ্কর জাদুঘর ডাকাতি। .................................................... নিয়মিত সাপ্তাহিক কলাম খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার -এ প্রকাশিত। ৬ ডিসেম্বর ২০০৭ , যায়যায়দিন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।