আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১; শনিবার

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার সাফল্যে এদিন চট্টগ্রামে উল্লাস প্রকাশ করে মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ। মিছিলে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা জামাতে ইসলামী আমির শামসুদ্দিন, সেক্রেটারি আসিউল আলম, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপ্রার্থী মীর মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ। মিছিল শেষে জিন্নাহ পার্কে আয়োজিত সমাবেশে ব্ক্তারা সেনাবাহিনীর পাশে থেকে এরকমভাবে আক্রমণ চালিয়ে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার শপথ নেন। ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান প্রধান ও আল-বদর বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও আল-বদর হাইকমান্ড সদস্য মীর কাশেম আলী হানাদার হিন্দুস্তানী বাহিনীর হামলার দাতভাঙা জবাব দেবার জন্য সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। তারা বলেন ছাত্র সমাজ ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি লড়ে যাবে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আজ ঘোষণা দেন আর ধৈর্য ধরার সময় নেই। এখন সময় দাতভাঙা জবাব দেবার। স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্বস্ত করে ইয়াহিয়া বলেন আমাদের বীর সেনানিরা অত্যন্ত দৃঢ়তা নিয়ে শত্রুর হামলা প্রতিহত করে চলেছে। এবার তারা পাল্টা আঘাত হানবে। জনগণকে শান্ত থেকে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে নিজ নিজ কর্তব্য করে যাবার নির্দেশ দেন তিনি।

আরো বলেন আল্লাহু আকবর বলে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ার সময় এসেছে। জামাতে ইসলামীর আমির মওলানা আবুল আলা মওদূদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন প্রতিটি দেশ প্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের পেছনে আছে। ইয়াহিয়ার উদ্দীপনামূলক ভাষণের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান মওদুদী। শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খান এদিন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে বেতার ভাষণে বলেন 'পাকিস্তান, ইসলাম ও মানবতার দুশমন সাম্রাজ্যবাদী হিন্দুস্তান তার সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা মেটানোর জন্য অস্ত্র সজ্জিত হয়ে চারদিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান তথা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। ' বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ রহিম বিমানবাহিনী সদস্যদের শত্রুদের চরম শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দেন যাতে তারা ১০০ বছরেও ভুলতে না পারে।

একজন সরকারী মুখপাত্র জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ করে শত্রু নিধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা অমৃতসর, পাঠানকোট, অবন্তীপুর, শ্রীনগর ছাড়াও রাজস্থানের উত্তরালি, হরিয়ানার আম্বালা ও উত্তর প্রদেশের আগ্রায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এক সরকারী নির্দেশে সকাল সন্ধ্যা কারফিউ এবং ব্ল্যাক আউট মেনে চলতে বলা হয়। সেইসঙ্গে বিমান হামলাকালে সবাইকে বেসামরিক প্রতিরক্ষাবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। আজ সবুর খান এক বিবৃতিতে সকল দেশ প্রেমিককে ঐক্যবদ্ধভাবে সেনাবাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন মুসলমানরা কখনো পরাজিত হয়নি, এবারও হবে না। বিধর্মীদের যুদ্ধের খায়েশ চিরদিনের জন্য মিটিয়ে দেয়া হবে। তথ্যসূত্র : দৈনিক পাকিস্তান, ইত্তেফাক, পূর্বদেশ, ৫, ৬, ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।