আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১ ডিসেম্বর, ১৯৭১; বুধবার

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আজম এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন খুব শিগগিরই পাকিস্তানে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এসময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিটি আবারও উল্লেখ করেন। একই দিন লাহোর বার সমিতির সভায় গোলাম আজম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করেন। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’-এর ধারণা একটি ‘ভাওতাবাজি’ এবং কমিউনিস্টরা এই ‘ভাওতা’য় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার সিলেট রণাঙ্গন সফরে আসেন লেঃ জেনারেল নিয়াজী। এ উপলক্ষে সিলেটের স্বাধীনতাবিরোধীরা এক সম্বর্ধনার আয়োজন করে। সভায় যোগদানকারীরা যে কোন মূল্যে পূর্ব পাকিস্তান রক্ষার জন্য পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ নেয়। নিয়াজী তার ভাষণে মুক্তিকামী বাঙালীদের ‘বিভ্রান্ত’ বলে অভিহীত করে বলেন, ‘এখনো ফিরে আসার সময় আছে, কিন্তু এরপর আর ক্ষমা করা হবে না। তখন খতম করা হবে।

’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজমল চৌধুরী সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেন, ‘আমরা সিলেটবাসীরা ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। ’ সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল হক এদিন চট্টগ্রামে শান্তি কমিটির সদস্য, এমএনএ, এমপিএ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। সভায় ভারতীয় হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। জনগনের মধ্যে আস্থা ফেরাতে রাজাকার ও প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত লোকদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন করতেই এই বৈঠক আয়োজিত হয়েছিল। কাউন্সিল মুসলিম লিগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দিনের বাসায় ছয়দলীয় নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।

এই বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন কাইয়ুম লিগের আবদুস সবুর খান, পিডিপির শফিকুর রহমান, কনভেনশন লিগের আখতারউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী নেতা শফিকুল্লাহ ও নেজামে ইসলামী নেতা আশরাফ আলী। পরে বৈঠকটি সবুর খানের বাসায় স্থানান্তর করা হয়। এতে উপনির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভারতীয় হামলার প্রতিবাদে খুলনায় হরতাল পালন করেন শান্তি কমিটির সদস্যরা। মৌলিক গণতন্ত্র মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক এদিন রাজশাহী জেলা মিলনায়তনে শান্তি কমিটির সদস্য ও সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের এক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

এরপর পাবনায় শান্তি কমিটির এক সমাবেশেও ভাষণ দেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের এক সভায় এএসএম সোলায়মান তার বক্তৃতায় বলেছেন নিজেদের দূর্বলতা ঢাকার জন্যই ভারত পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। কুমিল্লায় এক বদর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এদিন। সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী মুজিবুর রহমান আলবদরদের জেহাদী মনোভাব নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। লেঃ জেনারেল নিয়াজী এক বিবৃতিতে সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপালসহ ২২জন পুলিশ অফিসারকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য ৭ ডিসেম্বর ঢাকার ৬ নং সামরিক আইন প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

তথ্যসূত্র : দৈনিক পাকিস্তান, পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদ ১, ২, ৩ ও ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।