আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয় মা কাত্যায়নি অথবা যুদ্ধজয়ের পুজোৎসবে...(শেষপর্ব)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

কাত্যায়নি পুজা দর্শনে যাওনের আগে আমার কোন অভিসন্ধি ছিলো না...নিয়তঃ খাই-পরি পুঁজিবাদের নাগপাশেই...বিজ্ঞাপনি সংস্থায় চাকরীর সুবাদে আমার নিজেরও রুটি-রুজি জুটে পুঁজিবাদী নোংরা কৌশলের বিস্তারে সহযোগিতা কইরা...পুঁজিবাদ কেমনে মানুষের আচরন পাল্টাইয়া পণ্য বিপণনে নামে তা এক্কেরেই ভেতর থেইকা দেখতে পারি। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার উপস্থিতিরে কেমনে পুজিতন্ত্রে ব্যবহার করা হয় তা বুঝতে হইলে আসলেই গ্রাম-বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্ভর বোঝাপরা লাগবো...মাগুরার কাত্যায়নি উৎসব আমারে সেই ধারণা দ্যায়...দেশের তাবৎ মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় বিক্রীবাট্টা নির্ভর উন্নয়ন তন্ত্রে...তার নির্ভরতায় দেশের বাস্তবতা বুঝনটা এতো সহজ না। তয় আমি এই বিজ্ঞাপনি শিল্পে নিজেরে একজন শ্রমিক'ই মনে করি। শ্রম বেচি ঠিক একজন কারখানার শ্রমিকের মতোনই...ঘন্টামাফিক। সামন্তীয় মানসিকতায় দাঁড়াইয়া থাকা কৃতজ্ঞতা বোধের ঝান্ডা উড়াই না।

আর সেই কারনেই শিঁরদাড়া উচা কইরা কোনকিছু কইতেও ভয়খাওনের কোন মর্তবা দেখি না। আমার এই বচন নিজের অবস্থানরে জায়েজ করনের লেইগা না...বরং নিজেরে বুঝ দেওনের মতোন শুনাই, নিজেরে অভ্যস্ত রাখি...নিজেরে প্রস্তুত রাখি সেইসব সংগ্রামি মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা বলবৎ রাখতে, যারা সমাজ পাল্টানের স্বপ্ন দেখেন। আমি খুব ভেতর থেইকা দেখি বইলাই জানি একটা মোবাইল কোম্পানী কিম্বা তামাক কোম্পানী ক্যান সমাজ উন্নয়নমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মোবাইল কোম্পানীর বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী জুইড়াই অস্থিরতা আছে...ঠিক যেমনটা আছে তেল উত্তোলনকারী কোম্পানীর, তামাক শিল্পের ধ্বজাধারী কোম্পানীর...এখন আমরা অনেক কিছুই কইতে পারি, তীব্র প্রতিবাদে ফুইসা উঠতে পারি...কিন্তু তারে একটা কোম্পানী বিজ্ঞাপন হিসাবেই দেখে বলা যায় বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করনের সুবিধাপ্রাপ্তি হিসাবেই দেখে...কারন সমাজে পণ্য নির্ভরতা, পণ্যকেন্দ্রীক মানসিকতা টিকাইয়া রাখতে তারা সক্ষম, এই ধারণা নিয়া তারা দাঁড়াইয়া আছে। কাত্যায়নি পুজাও তেমনি তাগো উৎসাহ জোগায়...আমরা মাগুরা শহরের পাশে শত্রুজিতপুরে তপতীর নানাবাড়ি যাওনের পথে দেখি গ্রামীন ফোনের পথে পথে উৎসব।

মেলায় উপস্থিত অভ্যাগতরা গ্রামীন ফোনের কনসার্টে মাতছে...এই জনগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতারে প্রশ্রয় দ্যায় না...তারা তাগো জীবনের সকল বঞ্চনা-বৈষম্য-অপ্রাপ্তি'র কথা ভুইলা থাকতে চায় গীটারের স্ট্রিঙের মাদকতাময় টানে...সকালে আমার মোবাইল ফোন হারাইছি সেই দুঃখ নিয়াই আমি তাগো সিম কিননের উৎসব দেখি...আমার অফিসের দেওয়া মটোরেজর হয়তো কারো নেশার উপকরন জোগাইতেই কাজে লাগছে...আবার হয়তো কারো প্রতিযোগিতার বাজারে টিকা থাকনের সম্ভ্রম বাড়াইছে। পণ্য এমনে কইরাই আমাগো ব্যক্তিজীবনের স্ট্যাটাস নির্ভরতা তৈরী করে...আমরা মানুষের এই মানসিকতা আর অভ্যস্ততা কাজে লাগাইয়া বিপণন করি... দেশের খবরে রাকেশ যখন ভাইঙ্গা পরে তখন আমাগো কিছু করনের থাকেনা...বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ক'ন ৩/৪ দিনের মধ্যেই সব ঠিক হইবো...কিন্তু রাকেশের তপন দাদা'র কথামতো আমরা আগেই জানি এই দুর্যোগ একমাসেও ঠিক করা কষ্টকর...কিন্তু পুঁজিতন্ত্রের মিডিয়া প্রচারে যায়, সাধারন মানুষরে তারা বিশ্বাস করাইয়া ফেলতে পারে নিজেদের তৈরী করা রিয়ালিটিরে...আমাগো দেশের স্বচ্ছল মানুষরা আসলে দেশরে খুব চিনে না সেইটা আমরা উপলব্ধ করি। তারা শরনখোলায় ভাগ্যাহত মানুষ কেমন থাকতে পারে সেইটা বুঝনের বাস্তবতা রাখে না...কাউখালীতে ক্যান গফুর মিয়া নিজের ঘর ছাইড়া ঘূর্ণিঝড় শেল্টারে যাইতে রাজী না সেইটাও বুঝনের সামর্থ্য তাগো নাই। রুটি-রুজির টানে আমার আর মৌসুমের কাত্যায়নি পুজার সমাপ্তি না টাইনাই শহরমুখী হইতে হয়। আমরা ঢাকায় ফিরতে ফিরতে জানতে পারি ঢাকার জনজীবন এখন আবার পূর্বাবস্থায় ফেরত আসছে।

টিভিতে আর পত্রিকায় এখন আমরা দেশের একটা বড় অংশের দূর্গতগো হেলিকপ্টার মারফত সাহায্য পাঠাইতে পারতেছি...এসএমএস আর একাউন্ট মারফত কর্তৃপক্ষ টাকা পাইতেছেন...আমরা আশা রাখি সেই টাকা দিয়া কোন প্রভাবশালী কর্মকর্তার বাড়ির টিনের সাশ্রয় হইবো না...বিদেশী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের বেতনের সংস্থান হইবো না। যেহেতু কোন ধর্মেই বিশ্বাস নাই তাই যুদ্ধ উপলক্ষে দেওয়া পুজারে অর্থহীন মনে হয়...কিন্তু তার প্রেরনা আমারে একটুও কি নাড়া দ্যায় না!? ঢাকায় ফিরা যখন শুনতে পাই সঞ্জীবদা মারা গেছেন...তখন মনে পড়ে,"আমাদের যাকে যাকে প্রয়োজন...তারাই পালায়...দূরের সমুদ্রে চলে যায়"।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।