আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এত কষ্টের মাঝে একটু সুখবর: পিথাগোরাসের উপপাদ্যের নতুন সূত্র আবিষ্কার করলেন এ কিউ চৌধুরী

আওরঙ্গজেব

ঘূর্নিঝড় সিডরের আঘাতে যখন আমার দেশের হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, লাখ লাখ মানুষ কষ্টে নিপতিত, ... এতসব কষ্টের মাঝে আমাদের এক তখন পূলিশ এএসপি এ কিউ চৌধুরী আড়াই হাজারেরও বেশি বছর আগের পিথাগোরাসের উপপাদ্যের নতুন সূত্র আবিষ্কার করলেন। প্রতিনিয়ত ক্ষুধা, দারিদ্র, ও রাজনৈতিক হাঙ্গামার মাঝে এ এক অন্য রকম অনুভুতি। সবার সাথে শেয়ার করার জন্য পুরো লেখাটি নিচে দিলাম। ১৭.১১.২০০৭ ২ হাজার ৬০০ বছর আগে গ্রিক পণ্ডিত পিথাগোরাস সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর ওপর আঁকা বর্গক্ষেত্রের সম্পর্কের সূত্র আবিষ্কার এবং তা প্রমাণ করেছিলেন। এটিই পিথাগোরাসের উপপাদ্য নামে পরিচিত।

এটা শুধু বর্গক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু একই ত্রিভুজের বাহুগুলোর ওপর আঁকা ঘনকের মধ্যে সর্ম্পক কী? বিশ্বের গবেষকরা আড়াই হাজার বছরেরও অধিক সময় গবেষণা করেও তা বের করতে পারেননি। সেই অসাধ্য সাধন করলেন বাংলাদেশের কৃতী সন্তান আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী। গণিত নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা না করেও এ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন গবেষণার পর এই সূত্রটি আবিষ্কার করেছেন। তিন মাস আগে এটি আবিষ্কৃত হলেও বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সম্প্রতি তিনি এই সূত্র আবিষ্কারের তথ্যটি জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন।

গত ১১ নভেম্বর সর্বপ্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে 'পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রয়োগ' শীর্ষক সেমিনারে এটি উপস্খাপন করেন। আবদুল কুদ্দুস বলেন, পিথাগোরাস দেখান যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল অপর দু'বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান। কিন্তু ঘনকের ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক কেমন হবে সেটি তার উপপাদ্যে নেই। এ ক্ষেত্রে একিউ চৌধুরী প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত ঘনকের আয়তন অপর দু'বাহুর ওপর অঙ্কিত ঘনকের সাথে সংশ্লিষ্ট বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণের কোসেকান্টের গুণফলের সমষ্টির সমান। ওই সম্পর্কটি চতুর্ঘাত, পঞ্চঘাত অথবা যেকোনো উচ্চতর বা নিম্নতর ঘাতের জন্য সাধারণীকৃত করা যায়।

এ সূত্রটি ব্যবহার করে সমকোণী ত্রিভুজের কিউবিক সম্পর্ক নির্ণয়; ত্রি-মাত্রিক বলবিদ্যায় এর প্রয়োগ; সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর ওপর কোনো সিলিন্ডার বা গোলক অঙ্কন করে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এ ছাড়া ফলিত বিজ্ঞানের যেসব ক্ষেত্রে পিথাগোরাসের উপপাদ্যটি ব্যবহার করা যায় নতুন আবিষ্কৃত সূত্রটি সেসব ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে। কুদ্দুস চৌধুরী এ সূত্রটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও ভেক্টর পদ্ধতি, ইন্ট্রিগেশন, কোঅর্ডিনেট জিওমেট্রি পদ্ধতির সাহায্যেও ওই সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলেও তিনি মতপ্রকাশ করেন। বীজগাণিতিকভাবে ত্রিভুজের বাহুর ওপর আঁকা ঘনবস্তুর সম্পর্ক প্রমাণ করা সহজ হলেও জ্যামিতিক পদ্ধতিতে তা প্রমাণের বিষয়টি এটিই প্রথম বলে তিনি দাবি করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর এম আবদুলাহ আনসারীর এই সূত্র আবিষ্কারের চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মতে, এটি কোনো সূত্র নয়, বরং পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সম্প্রসারিত রূপ। তবে এতে ত্রিভুজের বাহুতে কিউবিক সম্পর্ক নির্ণয় ছাড়াও বিষয়টিকে সাধারণীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক ও গণিতবিদ প্রফেসর সুব্রত মজুমদারও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটিতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সব ক্ষেত্রেই এ সূত্রের প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এদিকে গবেষক তার আবিষ্কৃত সূত্রের স্বপক্ষে ইতোমধ্যে পাঁচটি প্রমাণ বের করতে সক্ষম হয়েছেন। আরো বেশ কয়েকটি প্রমাণ বের করার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান। গত বৃহস্পতিবার সকালে একান্ত আলাপচারিতায় পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী তার এই আবিষ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেন। ১৯৯১ সালের কোনো একদিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় 'ঘনবস্তুর ক্ষেত্রে ত্রিভুজের বাহুগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক কী?' এরূপ একটি খবর পড়ে তিনি এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

ওই সময় যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংগঠন এর জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকেই এ বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে চলে তার চিন্তাভাবনা। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস-র মাধ্যমে পুলিশের এএসপি হিসেবে যোগদান করার পর মাঝেমধ্যেই তিনি এ নিয়ে কিছু একটা করার চিন্তা করতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি কঙ্গোতে জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে যাওয়ার পর তিনি এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। অবশেষে ২০০৬ সালে দেশে ফিরে অধিকতর গবেষণা করে এর একটা ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন।

পিথাগোরাসের সূত্রটির ওপর প্রফেসর এলিছা স্কট লুমিস কর্তৃক পিথাগোরিয়ান প্রপোজিশান গ্রন্থে দেয়া ৩৬৭টি প্রমাণ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, আগামী ২৯-৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি এই সূত্রের আরো অনেক তথ্য তুলে ধরবেন বলে জানান। বাংলাদেশের এই কৃতী সন্তান ফেনীর পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামের মরহুম রুহুল আমীন চৌধুরী ও ফিরোজা বেগমের পুত্র। তিনি ১৯৮৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রাইভেট শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে বিকম পাস করেন।

এরপর তিনি একটি স্কুলে তিন বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস’র মাধ্যমে পুলিশের এএসপি হিসেবে যোগদান করেন। কর্মক্ষেত্রেও তিনি কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সূত্র: এখানে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।