আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহোয়ার ইন ব্লগ - অ্যানজেলিয়া ( ২৪)



নেমী ভাবল আর দেরী করা ঠিক হবে না । এক্ষুনি ও শুভর বাসায় যাবে , অন্তত ও শেষ চেষ্টাটা করবে । পোশাখ চেন্জ না করেই নেমী ড্রয়ার থেকে ক'টা টাকা নিয়ে নেমে এল । নীচে এসে দেখল আরেক বিপদ , হল থেকে কাউকে বেরোতে দিচ্ছ না । নিষেধ করতে করতে ও বেরিয়ে গেল , মেয়ে হওয়ার সুবিধায় গেটের দারোয়ান ওকে টেনে ধরল না ।

কিন্ত একি , একটা রিক্সাও নেই । ওরাও কি বারুদের গন্ধ বুঝে ফেলেছে তাহলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দেরী নেই । সামনে লোক নেই তাই নেমী দ্রুত পা চালাল । রোকেয়া হলের সামনে যেতেই টি এস সির দিক থেকে একটা ট্যাক্সি দেখতেই নেমী হাত উচু করল। ট্যাক্সি এলে ও দ্রুত উঠেই ড্রাইভারকে বলল- গুলশান ।

চারুকলা পার হতেই গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল। শাহাবাগ যেতে যেতে নেমীর ড্রাইভারকে তিনবার তাড়া দেওয়া হয়ে গেল। রাস্তার ডান দিকে তাকিয়ে রইল এই ভেবে যে যদি শুভকে দেখা যায়। ও জানে শুভ আজ গাড়ী নিয়ে আসবে না তাই প্রত্যেকটা ট্যাক্সি , বেবী ও খেয়াল করতে লাগল । নেমীর ওভাবে ঝুকে পড়া দেখে আসে পাসের গাড়ী রাস্তা থেকে কিছু কিছু বিচ্ছিরি শব্দ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ওর কানে আসার আগেই ।

নেমী শুধু ইশ্বরকে ডাকল - হা ইশ্বর ও যেন বাসে না আসে । পরক্ষনেই মনকে সান্তনা দিল - গতকালইনা শাহেদ ওকে বলেছিল - জানিস নেমী আমাদের শুভ হেটে যাবে তবু টাউন সার্ভিসে উঠবে না। ওর জীবনে ও নাকি উঠেইনি। এই যে হরতালের দিনে সার্ক ক্রিকেট হোল না - ও স্কেটিং করে খেলা দেখতে গিয়েছিল। নেমী নিশ্বা:স ছেড়ে বলেছিল - পাগল বন্ধু ।

কথা শেষ করতে না করতেই শাহেদ ওর হাত ধরে বলল- নেমী আমার একটা কথা রাখ । তুই দেখনা একবার চেষ্টা করে ওকে ভাল করতে পারিস কিনা । ক্যাডাররা নরম হলে কত সরল হয় শাহেদকে দেখে ও সেদিন বুঝল । কিছুক্ষন ও শাহেদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । শাহেদ চোখ নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে বলল- নেমী প্রচন্ড কষ্টে বেচে আছিরে।

বাঁচতে ইচ্ছে করে না । জুতা দিয়ে একটা ইটের কনাকে মাটির সাথে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলল- শুভর মত মানুষ হয়না রে , শুধু ওর জন্য বেচে আছি। আমি থাকতে ওর গায়ে কেউ আচড় দিবে এটা হবে না রে । নেমী একটু কপালটা কুন্চিত করে বলল- তাই বলে তোমার জীবনটা নষ্ট করে দেবে । শাহেদ মাথাটা উচু করে একটু জোর করে হেসে বলল- ওর কোন দোষ নেই ।

ও আমাকে প্রায়ই বলে- এসব ছেড়ে দে । গরিবের ছেলে পড়তে এসেছিস লেখাপড়া কর। মাস্তনী তোদের সাজে না । একটু থেমে ও নিশ্বাস ছাড়ল - সত্যি রে নেমী , এতে শান্তি নেই। মেয়েরা কথা বলে ভয়ে আন্তরিকতা নেই।

ভালবাসে ভয়ে, বুকেও আসে কিন্ত সুখ পাইনে। নেমী বলল- তাহলে ছাড়ছ না কেন । উত্তর না দিয়ে শাহেদ ইটটা আবার পা দিয়ে তুলতে তুলতে ঘাসের উপর বসে পড়ল। নেমীও বসল। দেখল শাহেদের চোখ দিয়ে জল পড়ছে।

হাত দিয়ে ও চোখ মুছতে মুছতে বলল- বাপ মার ভীষন কষ্ট। দেড় বছর ধরে শুভ প্রতিমাসে বাড়িতে আমার নাম করে দু হাজার টাকা পাঠায়। পনের তারিখে ছোট বোনটার বিয়ে, শুভ বিশ হাজার টাকা দিয়েছে, বলেছে পাঠিয়ে দিতে। ও আমাকে কালই চলে যেতে বলেছে। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নেমী বলল- তুমি যাবে না ? নেমী দেখল শাহেদের চোখ আনন্দে চক চক করে উঠছে যেন নতুন কিছু পেয়েছে।

কান্না আর হাসি মিলিয়ে যা হয় এরকম একটা ভাষায় ও বলল- শুভ আমাদের বাড়ী যেতে রাজি হয়েছে । ও বলেছে পনের তারিখ দুপুরের মধ্যেই আমাদের বাড়িতে পৌছাবে। শাহেদ খপ করে নেমীর একটা হাত ধরে বলল- তুই ওর সাথে চল না নেমী। গাড়ীতে করে যাবি আর গাড়ীতে করে আসবি। নেমী মনে মনে বলল- তোমার বন্ধু আমায় নিলে তো ।

সে কথা ও প্রকাশ না করে শাহেদকে বলল- তুমি তাহলে কালই যাচ্ছ। তাকিয়ে দেখলো শাহেদের মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে গেল। মাটির দিকে তাকিয়ে ও বলল- আমার বোধ হয় যাওয়া হবে না রে। নেমী যেন শক্ত হয়ে গেল- কেন? : লিডাররা ছাড়ছে না। সারাবছর খাইয়েছে , এখন নাকি দরকার।

--চলবে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।