আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্য-১

১। ঘরটা যথেষ্ট অন্ধকার তখনো। ভোর বেলায় বেশ শীত শীত ভাব। ঘুমের আলস্য দেহ জুড়ে। চোখ পিট পিট করে পরিস্থিতি আঁচ করে নিল টিপু।

বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। বিল্ডিং এ থেকে শব্দ তেমন বোঝা যায় না। শ্রাবন শুরু হয়েছে কদিন হল। অনেকদিন ধরে বরষাকালীন ঝুম বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ মনে হয় টিপুর প্রতীক্ষার অবসান হবে।

হালকা ঘুম ঘুম ভাবের মাঝে উত্তেজনা দানা বাঁধতে থাকে শরিরে। ঘুম চটে গিয়ে বিছানায় উঠে বসল ও। পরদাবিহীন জানালার কাচের শার্সি গলে বাইরে দৃষ্টি চলে গেল। আহা, আলো আঁধারির বরষা ছেয়ে আছে আদিগন্ত। অঝোর বিরামহীন বারিধারা।

পাশের বিছানায় সামু ভাই ঘুমাচ্ছে। টিপুর বড় চাচার ছেলে। শ্রাবন ধারায় ধরনির অবগাহন সে টের পেয়েছে বলে মনে হল না। টিপু তার ঘুম ভাংগাতে গেল না। বিছানায় ঝিম মেরে বসে বাইরে তাকিয়ে রইল।

সদ্য ঘুম ভাংগার ঘোর শ্রাবনের অঝোর ধারায় স্নাত মৃত্তিকায় শীতল আবহ আছন্ন করে রাখল টিপুকে অনেক সময়। একটু পরে বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে পড়ার টেবিলে এসে বসল। এখান থেকেও জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখা যায়। <!--break--> ওরা ৯টায় স্কুলে রওনা দেয়। টিপু আর সামু ভাই।

টিপু ক্লাশ সেভেনে আর সামু এইটে। সে গতবারও এইটে ছিল। পড়ালেখার প্রতি নিদারুন বিতৃষ্না সামুর। সে কোন বছর নিজে থেকে প্রমোশন পেয়ে পরের ক্লাশে উঠেছে এমন জানা নেই টিপুর। গত কবছর ধরে বিষয়টা লক্ষ্য করছে।

প্রতি বছরই ৩-৪টি বিষয়ে ফেল করে। বিশেষ বিবেচনার কোটায় তাকে উত্তীর্ণ হতে হয়। বিশেষ করে টিপুর বাবা গিয়ে হেড মাষ্টারকে অনুরোধ করেন। স্কুলে না যাওয়ার একটা ইচ্ছে ধীরে গজিয়ে উঠছে ভেতরে টের পাচ্ছে ও। ঝুম বৃষ্টিতে স্কুলে যাবেইবা কিভাবে।

এর আগেও বৃষ্টিতে খুব কমই স্কুলে গিয়েছে। বৃষ্টির বেগ আরো বাড়ুক, মনে মনে প্রার্থনা জানাল টিপু। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সামু ঘুমিয়েই চলেছে। --সামু ভাই, আর কত ঘুমাবে? গলার স্বর বেশ চড়িয়েই জানতে চাইল ও। সামু এই ডাকের অপেক্ষাই ছিল কিনা কে জানে, সাথে সাথেই ধর মর করে উঠে বসল।

ঘরের আঁধারে ওর মনে সন্দেহের উদ্রেক করে থাকবে হয়ত জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে চেয়েই লাফিয়ে উঠল। --বৃষ্টি বৃষ্টি, এই তুই আমাকে এতক্ষণ জাগাসনি কেন? টিপুকে চোখ রাংগিয়ে জানতে চাইল। --তোমাকে জাগাল কে? স্মিত হাসির জবাব টিপুর। --এই চল, তাড়াতাড়ি চল। -- কোথায় চলব? -- কথা কম বল তো, বলটা কই-নে চল জলদি মাঠে।

সামুর তাড়াহুড়ো ভাব ভংগিতে টিপুর হাসি পেয়ে গেল। তবে অস্থিরতার নাচন শুরু হয়ে গেছে তার রক্তেও। --মুখ ধোও নাস্তা খাও, তারপর যাই চল। স্থিরতার চেষ্টা ধরে রেখে টিপু বলল। --নাস্তা পরে খাব।

চলতো দেখি এখন! সামুর অধৈরযের মাত্রা কমলনা। উঠে গিয়ে ড্রয়িং রুমের দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে এল টিপু। এখনো ৮টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি। মা বাবা ঘুমাচ্ছেন। কাজের মেয়েটা রান্না ঘরে খুটখাট শব্দ করে কি যেন করছে।

ফিরে এসে বলল—কটা বাজে জান, আটটাও না। ঠাকুর এখনো বাসায়। ঘুমাচ্ছেন। ছেচা দিবেন। এবার বিষয়টা আমলে নিল সামু।

--চাচা বাসায়! তার কন্ঠে হতাশা। --হ্যাঁ বাসায়। অফিসের সময় হয়েছে যে যাবেন? অগত্যা বাথরুমের দিকে এগোল সামু। ও বেরিয়ে এলে টিপু জিজ্ঞেস করল—স্কুলে যাবেনা? --আরে ধ্যাৎ, আজ আবার কিসের স্কুল! মুখ বেজার করে পড়ার টেবিলের সামনে বসল ও। চাচা কখন উঠে অফিসে যায় তার অপেক্ষায় থাকল।

উনি উঠলেন নটার পরে। তৈরি হয়ে নাস্তা খেতে খেতে বাজল পৌ্নে দশটা। বৃষ্টির কারনে সব কিছুতে ঢিলেঢালা ভাব। বেরোতে যাবেন, দেখা গেল ছাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সামুর ধৈরযের বাঁধ ভাংগার উপক্রম হল।

ছাতাটা গেল কোথায়? খোঁজ খোঁজ। সবাই মিলে আতিপাতি খোঁজা চলছে। যে জায়গায় রাখা হয় সেখান থেকে সরল কিভাবে? অনেকদিন বৃষ্টি না হওয়াতেই এ অবস্থা। শেষমেশ পাওয়া গেল। টিপুর বাবা বেরোতে বেরোতে সাড়ে দশটা।

এবার বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চঞ্চল হল সামু। জানালা গলে রুদ্ধশ্বাস তাকিয়ে রইল চাচা কখন দৃষ্টিসীমার বাইরে যায়। ঘরে টিপুর মা আছেন। ওনাকে নিয়ে ভয় কিছুটা আছে বটে তবে আতংকের কারন নেই। আতংকের ঠাকুর আড়াল হতেই দে ছুট।

খাটের নিচে থেকে ফুটবলটা আগেই বের করে নিয়েছে। মাঠে বেশির ভাগ জায়গায় গিরা সমান বা তার চেয়েও বেশি পানি জমেছে। বৃষ্টির বেগ কিছু কমলেও তখনো বেশ তীব্র। ওরা দৌঁড়ে মাঠে গিয়ে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল। বৃষ্টির ফোঁটা গুলি চোখে মুখে শরিরের উন্মূক্ত স্থানে ছোট তীরের মত বিঁধছিল।

ব্যাথা নয় একটা সুরসুরি ছড়াচ্ছিল যেন। সামু ফুটবলটি নিয়ে উর্ধমুখী এক কিক বসাল সজোরে। অনেকখানি উঠে গিয়ে শেষে মাঠের পানির উপর পড়ল ওটা। শুরু হল খেলা। প্লেয়ার আপাতত ওরা দুজনই।

ধুম ধাম কিক। মারছে যে যেভাবে পারছে। দেখা গেল ধীরে ধীরে খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ইবু এলো, সাজু এলো। মা বাবার একান্ত বাধ্য সুবোধ ছেলেরাও আসতে লাগল।

সবুজ, পলাশ, রিপন এলো। দু চারটা চড় থাপরের চেয়ে নগদ আনন্দটাকেই উত্তম মনে হল হয়ত। আরো অনেকে এল। দুদলে ভাগ হয়ে নিয়ে খেলা আরম্ভ হল। মজার ছড়াছড়ি।

খেলা আর কি! উলটা পালটা লাথা লাথি। মাঠতো সেরকম যুঁতসই না। ছোটখাট ইটের টুকরা পাথর কণাতো আছেই। পানির নিচে থাকায় দেখাও যাচ্ছিল না। সবাইরই পা টা কম বেশি কেটে ছড়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা।

বিরামহীন বৃষ্টির ধারা পড়ছেতো পড়ছেই। অনেকক্ষণ খেলার পর ওদের কিছুটা শীত বোধ হতে লাগল। খেলা ক্ষান্ত দিয়ে ছুটল এবার পুকুরের দিকে। কাছেই পুকুর। ঝাপিয়ে পড়ল একে একে।

পুকুরের পানি গরম। বরফ গলা বৃষ্টির পানির শীতার্ত কষ্ট প্রশমিত হল। অনেকক্ষণ দাপাদাপি করে দুপুর একটা হল যখন শ্রান্তি নেমে এল দেহে। মা বাবার ভয় আর মারের আতঙ্ক ঘিরে ধরে অসার করে তুলতে লাগল দেহ মনকে। বাসার দিকে হাঁটতে লাগল ওরা।

শীত জেঁকে ধরেছে শরির। মাংসপেশী গুলো কাঁপতে শুরু করেছে থর থর করে। -----চলবে---- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।