আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যদি চাই, তবে ভাবতে হবে...

যদি চাই, তবে ভাবতে হবে...

সবাই স্বপ্ন দেখে, কেউ কম- কেউ বেশী। কিন্তু পরস্পরের স্বপ্নের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ যদি কম বা না থাকে, তবে সামগ্রিকভাবে কোনো ভালো উদ্যোগ বা কাজ কি সফল হয় ? সবসময় বিভিন্ন আড্ডা-আলোচনায় যে আলাপ একটু আধটু জায়গা পায়, কিন্তু পরিণত হয় না তা হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। কেন হয় না ? এটা কি ভাবনার অতিরিক্ত বিভাজন, একেকজনের দাম্ভিক মূর্তি নাকি চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলো মিলতে চায় না! যদি খোলামনে তাকাই, দেশ অনেকদিক থেকেই এগিয়েছে, তরুণ বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতাদের সাম্প্রতিক চোখ ঝলসানো কাজ, টেলিভিশনের জন্য খোলা আকাশ, বাজারে ভিনদেশী চলচ্চিত্রের সুলভ পাইরেটেড ডিভিডি সংস্করণের ভীড়। কিন্তু এই দেশের চলচ্চিত্র ? যদি বলি, যারা এখানে খুব ভালোমানের চলচ্চিত্র নির্মানের স্বপ্ন দেখেন তারা দিন দিন একাকী অসহায় হয়ে পড়ছেন। খুব কি ভুল বলা হয় ? তাহলে কি এই দেশে ভালো চলচ্চিত্রের দর্শক, প্রদর্শক, প্রযোজক, শুভাকাংখীর অস্তিত্ব ক্রমশ শূণ্য হয়ে যাচ্ছে ? সবদেশেই নানাধরণের চলচ্চিত্র উদ্যোক্তা থাকে।

কেউ চায় বাণিজ্যিক চিন্তাকে মুখ্য রেখে সফল হতে, কেউ নিরীক্ষা করে, কেউ চায় একটা দর্শন বা ভাবনাকে উসকে দিয়ে নতুন করে ভাবনার জগৎ খুলতে, আবার কেউ শুধু সরলভাবে জীবনের গল্প বলতে পারলেই খুশী। যে যেভাবেই ভাবুকনা কেনো - সমাজের, দেশের বা মানুষের কোন সর্বনাশ না করলে আসলে কেউতো অপরাধী নয়। তো যেরকম ছবিই নির্মান হোক না কেন অর্থ প্রয়োজন অর্থ বিনিয়োগ, যার অংক খুব ছোট নয়। যিনি বিনিয়োগ করবেন, খুব স্বাভাবিক তিনি চাইবেন মুনাফা সহ বা অন্তত মূল অংকটাকে তুলে আনতে। তখন যে চলচ্চিত্রনির্মাতাগন পুরোপুরি বাণিজ্য নির্ভর ফর্মূলার ছবি না নির্মান করে একটু অন্যভাবে ভাবতে চান তাদের পাশে কে দাঁড়াবে ? তারা যদিওবা কখনো ধারদেনা করে প্রথম ছবিটা বানিয়ে ফেলেন, তারপর কি হয় ? হয়তো পরিবেশক, সিনেমা হল মালিকেরা আর্টফিল্ম বলে দূরে ঠেলে দিলেন।

কিন্তু দুএকজন সাহস করে উদ্যোগ নিলে প্রিয় দর্শক আপনারা একটু আপন ভেবে এগিয়ে না গেলে ঐসব চলচ্চিত্র নির্মাতার বোকাচোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়াতো আর উপায় নেই । কারো না কারো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি ভালো কেনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব ? অনেক দেশেই সরকার প্রধানতম সহায়ক শক্তি। কারণ তারা চলচ্চিত্রের মতো শক্তিশালী মাধ্যমটিকে দেশের মানুষের মেধা মননের জন্য একটি উদ্বুদ্ধকারী উপকরণ হিসেবে কাজে লাগাতে চান। কিন্তু আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে ! এমন কিছু চলচ্চিত্র কর্মী আছেন যারা ভীষন ভালোবেসে বিপুল অর্থপ্রাপ্তির ধারে কাছে না থেকে মেধাবী ও আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মান করতে চান। যা আমাদের জীবন নিয়ে সত্য কথা বলবে, যা শুধুমাত্র বিনোদনের কাছে নতি স্বীকার না করে, সমাজ/মানুষের অবক্ষয় বা প্রাপ্তির জায়গাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে।

হাতে গোনা কিছু নির্মাতা এধরনের কাজ করার জন্য সাহস করে এগিয়ে এসেছেন বলেই, তাদের কাজ গুলো পৃথিবীর বিভিন্ন চলচ্চিত্র মেলায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে এদের পাশে কে দাড়াবে ? বন্ধু পরিজন, রাষ্ট্রয়ন্ত্রের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয়, প্রদর্শক, দর্শক বা সাধারণ শুভাকাংখী। যেসব উৎসাহী প্রযোজক হয়তো একটু এগিয়ে এসেছেন। তাদের স্বার্থত্যাগের ক্ষমতাই বা কতটুকু ? আর্থিক ক্ষতির কাছে সবই হার মেনে যায়। তাই সুস্থ চলচ্চিত্রের নির্মাতাকে মাঝে মধ্যেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।

স্বপ্নদেখা মানুষটি যেনো অপরাধী, কত যে সমালোচনা - - কি এমন ছবি বানাও সিনেমা হলে চলে না, দর্শক কি আর্টফিল্ম দেখতে চায় ? - শুধু শিল্পফেষ্টিভ্যালের জন্য ছবি বানালে প্রযোজক টাকা দেবে কেনো ? - যদি টিভি প্রিমিয়ার হলে সেটা আবার ফিল্ম হয় নাকি, নাটক বানাও ? যেকোনো লক্ষ্যপূরণের জন্য লাগে সম্মিলিত উদ্যোগ। কিছু মানুষের ত্যাগ এবং ভাবনার একাত্মতা । কিন্তু আমাদের রয়েছে আরেকটা বাস্তবতা । বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র কর্মীগন অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত, মুক্ত ও স্বল্পদৈর্ঘ, বিকল্পধারা, মূলধারা, কর্মাশিয়াল এবং আর্টফিল্ম। কিন্তু এতসব ভগ্নাংশ নিয়ে কি কেনো শুভউদ্যোগ সফল করা সম্ভব? আসলেতো ছবির ধরণ হবে দু’টো - সুস্থ বা অসুস্থ ছবি অর্থাৎ ভালো কিংবা খারাপ ছবি।

এখন যেটা প্রয়োজন নিজেদের চাওয়াটাকে বুঝতে পারা, একটা ব্যক্তিগত অবস্থান, আরেকটা দেশ, জাতি, সমাজ, দায়বদ্ধতা সবকিছুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে। যে কোনো ধরণের ছবিই নির্মিত হোক না কেন যদি তা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সামনে হাজির না হয় বা দর্শক দেখতে না চান তবে সবকিছুই অর্থহীন। এটা কি খুব কঠিন সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য উৎসাহ দিয়ে যদি একটু পাশে এসে দাঁড়ান। দর্শককে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করেন ভালোছবি দেখতে। গুরুজন মুরুব্বী যারা আছেন তারা যদি একটু বসে মনখুলে বাংলাদেশের ভালো চলচ্চিত্রের স্বপক্ষে কতগুলো আলোচনা একটু এগিয়ে নিতে পারেন, কতইনা কল্যাণ হয়।

এই সব আলোচনা থেকে - আসবে প্রস্তাবনা তারপর সিদ্ধান্ত। নতুন ছবি নির্মাতাদের উৎসাহ উদ্দিপনা দেয়ার প্রকল্প তো থাকবেই - হয়তো আরো কিছু সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেবেন, যেমন - - দেশের বর্তমান সিনেমা হলগুলোকে অবকাঠামোগতভাবে উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকল্প পরিকল্পনা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। - রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে নতুনভাবে ছোট আয়তনের প্রেক্ষাগৃহ নির্মানের জন্য সরকার ও উৎসাহী বিনিয়োগেকারীদের উৎসাহ দেয়া। - যারা ভালো চলচ্চিত্রের উন্নত প্রযুক্তিমানের লক্ষ্যনিয়ে কাজ করেন তাদের কাজ করার ব্যবস্থাগুলো সহজ করে দেয়া। যেমন এই মান বা প্রযুক্তির কারণে ভিনদেশে নেবার সময় যে ঝামেলা পোহাতে হয়, তা উৎসাহ কমায় ।

- যে ছবিগুলো দেশে বিদেশে পুরস্কার পায় সেগুলো, সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় সারাদেশে দেখাবার ব্যবস্থা। - বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে ছবি আমন্ত্রিত হলে সরকারীভাবে তাকে সহায়তা করা। - সবচেয়ে বড় কথা সাধারণ দর্শকদের ভালো ছবি দেখার বিষয়ে সম্মিলিতভাবে উৎসাহ দেয়া। কেনো এতোসব কথা ? যা কিছু বললাম, কোনোটাই তো নতুন কথা নয়। সকল নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আকাংখা অনেক ভালো কাজ করার ।

বিনোদন, আনন্দ বা ভাবনার রাস্তাগুলো নতুন করে জানবার জন্য প্রয়োজন নতুন আঙ্গিকের চলচ্চিত্র নির্মান। সেটা চাইলে ভাবতে হবে আবারো নতুন করে, উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তাদের কাজগুলো দেখতে হবে ভালোবেসে। প্রিয় দর্শক, তখন আপনারা নিজ দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে গর্ব করতে পারবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।