আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন সৌভাগ্যের দিন যদি প্রতিদিন আসত!

কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।

আজ এক সৌভাগ্যের দিন আমার। খূব কমই এমন দিন আসে জীবনে। জীবনে এ নিয়ে দূবার এমন সৌভাগ্যের অংশীদার হতে পারলাম। মসজিদে 'ইশার নামাজ় শেষ করে বাংলাদেশী দু'জন মুসল্লীর সাথে কথা বলছিলাম।

ওদিকে মসজিদের মেইন হলের বাইরে সূদানী ভাই আহমদ কার সাথে যেন সেল ফোনে কথা বলছিল, আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি বাইরে আসতেই সে আমাকে ফোন দিয়ে বলল এক বাংলাদেশী ভদ্রলোক কথা বলতে চাচ্ছেন। ফোন ধরে ভদ্রলোককে চিনতে পারলামনা। তবে তিনি যা বললেন তা হল একজন লোক আমাদের মসজিদে ইসলাম গ্রহন করতে এসেছে। আসলে যে ফোনে কথা বলছিলাম তা ছিল সে লোকটারই।

লোকটাকে নামাজ় শেষে মসজিদেই দেখেছিলাম, কেমন যেন অস্বাভাবিকভাবে সিজদা করছিল। তার ঐ অস্বাভাবিক সিজদার ধরণ তাজ্জব হয়ে দেখছিল তার পাশে বসা এক পাকিস্তানী মুসল্লী। আমি ভেবেছিলাম হয়তো মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত কোন ভাই। যাই হোক জানতে পারলাম এই লোক ইসলাম গ্রহন করতে এসেছে। খূশী হয়ে তাকে ইসলাম গ্রহন করতে হলে কি করতে হবে তা ব্যাখ্যা করলাম।

সমস্যা হচ্ছে ভদ্রলোক ভাল ইংরেজী বুঝেননা এবং ভাল করে বলতেও পারেননা। মেক্সিকান এই ভাইটি স্প্যানীশ বলতে পারেন। কি করা যায় চিন্তা করছিলাম। এমন সময় মনে পড়ল বছর দুয়েক আগে মুসলমান হওয়া মেক্সিকান ভাই আব্দুল্লাহ মার্টিনেজ়ের কথা। নিজের ফোনের এড্রেস বুক চেক করে তার সেল নম্বরটাও পাওয়া গেল।

আব্দুল্লাহ্‌কে ফোন করে তার লোকেশন জেনে নিয়ে বাংলাদেশী মাহ্‌বূব ভাইকে পাঠানো হল তাকে আমাদের মসজিদে নিয়ে আসার জন্য। এই ফাঁকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে তার কাছ থেকে যা জানা গেল তা হল তার বাবা ছিলেন মুসলমান। বাবাকেই সে দেখেছে সিজদা করতে। কিন্তু তার মা ছিল খ্রীস্টান। তার মা তাদেরকে তার বাবার ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতে দেয়নি।

বাবা মারা যাওয়ার পর মা তার বাবার সংগ্রহে থাকা স্প্যানীশ ভাষার সব ইসলামিক বই-পুস্তক পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে সে সবসময়ই মনে করত তার বাবার ধর্ম সঠিক, কারন বাবা বলতেন খোদা শুধু একজন। এখন বড় হয়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলাম গ্রহন করার। তার মায়ের এখন আর তার ইসলাম গ্রহনে কোন আপত্তি নেই। এক সন্তানের জনক ও বিবাহ বিচ্ছেদ প্রাপ্ত এই ভাইটি তার মা-এবং ছেলেকে নিয়ে ব্রুকলিন থাকেন।

এদিকে মাহবূব ভাই ব্রাদার আব্দুল্লাহ্‌কে নিয়ে আসলে তিনি স্প্যানীশ ভাষায় ইসলাম গ্রহন করার নিয়ম কানুন এবং ইসলামের প্রাথমিক দায়িত্বসমূহ বুঝিয়ে দিলে এই ভাইটি শাহাদাহ্‌ গ্রহন (কালিমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলামে দাখিল হওয়া) করেন। স্পিদার নামীয় এই ভাইটিকে আমরা কোন নতুন নাম দেইনি এখনো। আব্দুল্লাহ্‌ তাকে ওজ়ু করা শিখিয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন সে সন্ধ্যেই আমাদের মসজিদে আসবে। আর ব্রাদার আব্দুল্লাহ্‌ তাকে ইসলামের করণীয়গুলো শেখাবে।

এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা সে আনন্দ যাতে হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠে যখন দেখি কেউ মানুষ হয়ে মানুষ বা তার চেয়েও অধম কোন প্রাণী বা বস্তুর উপাসনা ছেড়ে এক সর্বশক্তিমান স্রস্টার আনুগত্যকে মেনে নেয়। আরেকবার হয়েছিল এ আনন্দধারায় অবগাহনের সুযোগ। সিস্টার আল্লানা হিগিন্স বছর দুয়েক আগে শাহাদাহ্‌ গ্রহন করেছিল অনলাইন -"ইসলাম এন্সার্স ব্যাক" নামক পাল্টক চ্যাট রুমে। তার শাহাদাহ্‌ ঘোষণা করার আগে তাকে শাহাদাহ্‌ উচ্চারণ করা শেখানোর দায়িত্ব ছিল আমার।

আরেক বাংলাদেশী ভাই শামীম খান তাকে নিয়ে এসেছিলেন (অনলাইনে) আমার কাছে। সে বোনটি এখনো মুসলমান। আমার ব্যস্ততার জন্য যোগাযোগ নিয়মিত রাখতে পারিনা। তবে যখনি আমার ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার অন করি (আমি সাধারণত করিনা) তার কাছ থেকেই প্রথম ম্যাসেজ আসে। ওরা আমাদের অনেক পড়ে ইসলাম গ্রহন করেছে।

কিন্তু মর্যাদায় আমাদের ছাড়িয়ে গেছে নিজেদের আত্মত্যাগ এবং ভক্তিতে। আল্লাহ্‌! আমাদেরকে এবং তাদেরকে আমৃত্যু তোমার আনুগত্যের পথে অটল রাখো! আমীন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।