আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ স্পেশাল সায়েন্স ফিকশন - অক্টোপাসের চোখ - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!

বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালক মহামান্য কিহি কালো গ্রানাইট টেবিলের চারপাশে বসে থাকা অন্য সদস্যদের মুখের দিকে একনজর তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, ‘অনেক দিন পর আজ আমি তোমাদের সবাইকে আমার এখানে ডেকে এনেছি। আমার ডাক শুনে তোমরা সবাই এসেছ, সে জন্য অনেক ধন্যবাদ। ’ একাডেমির তরুণ সদস্য ফিদা তার মাথার সোনালি চুল হাত দিয়ে পেছনে সরিয়ে বলল, ‘মহামান্য কিহি, আপনি আমাদের ডেকেছেন, এটি আমাদের কত বড় সৌভাগ্য!’ অন্য সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল, বলল, ‘অনেক বড় সৌভাগ্য। ’ মহামান্য কিহি মৃদু হেসে বললেন, ‘অনেক বয়স হয়েছে, কখন পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়, তাই ভাবলাম, একবার তোমাদের সবার সঙ্গে বসি। একটু খোলামেলা কথা বলি।

’ জীববিজ্ঞানী রিকি মাথা নেড়ে বলল, ‘আপনাকে আমরা এত সহজে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে দেব না। আপনি আরও অনেক দিন আমাদের সঙ্গে থাকবেন। ’ অন্যরাও মাথা নাড়ল, গণিতবিদ টুহাস সোজা হয়ে বসে বলল, ‘মহামান্য কিহি, আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে বিজ্ঞান একাডেমির সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপরিচালক। আপনার সময় এই পৃথিবী সব দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় পৌঁছেছে। ’ বিজ্ঞানী ফিদা মাথাটা সামনে এগিয়ে এনে বলল, ‘হ্যাঁ।

এই মুহূর্তে পৃথিবী যে অবস্থায় পৌঁছেছে, আর কখনো সে রকম অবস্থায় ছিল না। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিল্পে-সাহিত্যে সব দিক দিয়ে পৃথিবীর মানুষ একটা নতুন অবস্থায় পৌঁছেছে। ’ গণিতবিদ টুহাস বলল, ‘এর পুরো কৃতিত্ব আপনার। ’ মহামান্য কিহি বাধা দিয়ে বললেন, ‘না, না, তোমরা তোমাদের কথায় অতিরঞ্জন করছ। এটা মোটেই আমার একক কৃতিত্ব নয়।

আমি কখনোই একা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তোমাদের সবার সঙ্গে কথা বলেছি, কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাজেই যদি কোনো কৃতিত্ব থাকে তাহলে সেটা আমার একার নয়, আমাদের সবার। ’ বিজ্ঞানী ফিদা বলল, ‘কিন্তু নেতৃত্বটুকু দিয়েছেন আপনি। ’ মহামান্য কিহি বললেন, ‘যা-ই হোক, আমি এটা নিয়ে তোমাদের সঙ্গে তর্ক করতে চাই না।

বরং তোমাদের কি জন্য ডেকেছি সেটা নিয়ে কথা বলি। ’ সবাই মাথা নেড়ে সোজা হয়ে বসে উত্‍সুক চোখে মহামান্য কিহির দিকে তাকাল। মহামান্য কিহি খানিকটা অন্যমনস্কভাবে বললেন, ‘এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে মানুষ হচ্ছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। হোমো স্যাপিয়েনস এই পর্যায়ে এসেছে বিবর্তনের ভেতর দিয়ে, তার জন্য সময় লেগেছে লাখ লাখ বছর। সেই দুই শ হাজার বছর আগের হোমো স্যাপিয়েনস বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে।

এই বিবর্তনটুকু পুরোপুরি এসেছে প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রভাবে, স্বাভাবিকভাবে। ’ মহামান্য কিহি একটু থামলেন, তিনি ঠিক কী বলতে চাইছেন বোঝার জন্য সবাই আগ্রহ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। মহামান্য কিহি আবার শুরু করলেন, বললেন, ‘এ মুহূর্তে এই পৃথিবীতে মানব প্রজাতি তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থায় আছে। আমরা কি জানি, আজ থেকে এক লাখ বছর পর কিংবা এক মিলিয়ন বছর পর আমরা কোন পর্যায়ে থাকব? আমরা কি আমাদের মতোই থাকব, নাকি অন্য রকম হয়ে যাব?’ জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, ‘আমরা সিমুলেশন করে সেটা দেখেছি ...’ মহামান্য কিহি মাথা নাড়লেন, বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি সেই সিমুলেশন দেখেছি। তোমরাও দেখেছ।

আমি দেখে একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছি এবং সে জন্যই আমি তোমাদের ডেকেছি। ’ মহামান্য কিহি একটু থামলেন। সবার চোখের দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘মানুষ প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের ভেতর দিয়ে এখানে এসেছে, কিন্তু এখন বিজ্ঞানের মহিমায় আমাদের আর বিবর্তনের ওপর নির্ভর করতে হয় না। মানুষের ভেতরে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, আমরা ইচ্ছে করলে সেটা আনতে পারি। ’ জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, ‘মহামান্য কিহি, আপনি কি বলতে চাইছেন আমরা নিজে থেকে মানুষের ভেতরে কোনো পরিবর্তন আনি?’ ‘আমি সেটা সেভাবে বলতে চাইছি না।

আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি। বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য হিসেবে এই পৃথিবীর মানবজাতির পুরো দায়িত্ব আমাদের হাতে। ভবিষ্যতের মানুষ এই পৃথিবীতে কীভাবে থাকবে, সেটা নির্ভর করে বর্তমানের মানুষকে আমরা কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করি। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি, পৃথিবীর মানুষ কি ভবিষ্যতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত? মানবদেহ কি নিখুঁত?’ হঠাত্‍ করে সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করল, আবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সবাই চুপ করে গেল। জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, ‘না, মহামান্য কিহি, মানবদেহ নিখুঁত নয়।

এর মধ্যে অনেক ত্রুটি আছে। আমরা সবাই সেটা জানি। বিবর্তনের কারণে আমাদের চোখটা ভুল, চোখের ভেতরে আলো-সংবেদন কোষ নিচে, নার্ভ ওপরে। অক্টোপাসের চোখ হচ্ছে সঠিক। ’ বিজ্ঞানী ফিদা বলল, ‘তুমি চোখের কথা বলছ, কিন্তু আমরা তো সাধারণত চোখের সীমাবদ্ধতাটা দৈনন্দিন জীবনে টের পাই না।

যেটা টের পাই সেটার কথা বলো না কেন?’ ‘সেটা কী?’ ‘নবজাতকের মাথা। তুমি জানো, মানবশিশুর মাথা কত বড়? একজন মায়ের গর্ভনালি দিয়ে মানবশিশু বের হতে পারে না, মায়ের সন্তান জন্ম দিতে কত কষ্ট হয়, তুমি জানো?’ জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, ‘আমি পুরুষ মানুষ, সন্তান জন্ম দিতে হয় না। তাই কষ্টের পরিমাণটুকু জানি না। কিন্তু বিষয়টি আমি বুঝতে পারছি। ’ গণিতবিদ রিকি বলল, ‘বিবর্তনের কারণে মানুষ হঠাত্‍ করে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে, কিন্তু হাড়ের সংযোগটা মানুষের পুরো ওজন ঠিকভাবে নিতে পারে না।

দুটি পা না হয়ে চারটি পা হলে ওজনটা ঠিকভাবে নিতে পারত। মানুষের হাঁটুও খুব দুর্বল। ’ প্রযুক্তিবিদ রিভিক কম কথা বলে, সে সবাইকে বাধা দিয়ে বলল, ‘তোমরা কেউ এপেনডিক্সের কথা কেন বলছ না? এটা শরীরের কোনো কাজে লাগে না। হঠাত্‍ হঠাত্‍ সংক্রমিত হয়ে কী ঝামেলা করে দেখেছ?’ রিভিকের কথার ভঙ্গিতে সবাই হেসে উঠল। জীববিজ্ঞানী সুহাস বলল, ‘এটা ঝামেলা দিতে পারে, কিন্তু এর গুরুত্ব কম।

এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পুরুষ ও নারীর জননেন্দ্রিয় এবং এগুলো কোনোভাবেই সঠিক নয়। এর অবস্থান খুবই বিপজ্জনক!’ বিজ্ঞানী ফিদা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। মহামান্য কিহি হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিলেন। মৃদু হেসে বললেন, ‘আমি জানি, মানবদেহের ডিজাইনের অসম্পূর্ণতা নিয়ে তোমাদের সবারই অনেক কিছু বলার আছে! আমরা ইচ্ছে করলে এটা নিয়ে সারা দিন কথা বলতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করতে চাইছি না।

আমাদের কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে মানবদেহের সীমাবদ্ধতার পুরো তালিকা রয়েছে। তোমরা এখন যা যা বলেছ, তার বাইরে আরও অনেক বিষয় আছে। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি, আমরা কি প্রাকৃতিক বিবর্তনের ওপর ভরসা করে অপেক্ষায় থাকব, নাকি আমরা নিজেরা মানবদেহের সীমাবদ্ধতাগুলো মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব?’ বিজ্ঞান একাডেমির সদস্যরা আবার সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা অবশ্য থেমে গেল। তারপর একজন একজন করে নিজের বক্তব্য বলল।

দীর্ঘ আলোচনার পর বিজ্ঞান একাডেমি থেকে মানবজাতির ভবিষ্যত্‍ নিয়ে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলো। বিজ্ঞান একাডেমি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিল, মানবজাতির জেনোমে আগামী এক শ বছরে খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হবে, যেন এক শ বছর পর মানবদেহে আর কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকে। মানবদেহ হবে নিখুঁত, যেন তারা ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে অত্যন্ত সফল একটা প্রজাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মহামান্য কিহি নরম গলায় বললেন, ‘তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতের মানব আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

’ সবাই মাথা নাড়ল, বিজ্ঞানী ফিদা বলল, ‘আপনার নেতৃত্ব ছাড়া আমরা কখনোই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না, মহামান্য কিহি। ’ *** **** *** *** *** বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালকের সামনে রাষ্ট্রীয় চিকিত্সাকেন্দ্রের পরিচালক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। পরিচালক মাথা তুলে বলল, ‘এটি আপনি কী বলছেন, মহামান্য কিহি?’ ‘আমি এটা ঠিকই বলছি। আমি অনেক চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ মহামান্য কিহি বললেন, ‘তুমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করো।

’ চিকিত্সাকেন্দ্রের পরিচালক বলল, ‘আপনার দেহ সুস্থ ও নিরোগ। আপনি আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন। আপনি কেন এখনই শীতল ঘরে যেতে চাইছেন?’ মহামান্য কিহি বললেন, ‘তার দুটি কারণ। প্রথমত, আমি নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই। আমি দীর্ঘদিন বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছি।

এখন অন্য কেউ করুক। দ্বিতীয়ত, আমি খুব বেশি বৃদ্ধ হয়ে অচল হওয়ার আগেই শীতল ঘরে যেতে চাই। আজ থেকে এক শ বছর পর আমি জেগে উঠে পৃথিবীর মানুষকে দেখতে চাই। মানবদেহের সব সম্পূর্ণতা আর ত্রুটি দূর করার পর তারা পৃথিবীতে কীভাবে বসবাস করবে, আমি সেটা নিজের চোখে দেখতে চাই। ’ চিকিত্সাকেন্দ্রের পরিচালক বিষন্ন গলায় বলল, ‘আপনি যদি সেটাই চান, তাহলে আমরা সেটাই করব।

তবে, মহামান্য কিহি, পৃথিবীর মানুষ কিন্তু আপনাকে এভাবে হারাতে চাইবে না। ’ মহামান্য কিহি মৃদু হেসে বললেন, ‘তুমি সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না। আমাকে একটা শীতল ঘরে রাখার ব্যবস্থা করো। আমাকে জাগিয়ে তুলবে আজ থেকে ঠিক এক শ বছর পর। ’ চিকিত্সাকেন্দ্রের পরিচালক মাথা নুইয়ে বলল, ‘আপনার আদেশ আমাদের সবার জন্য শিরোধার্য।

’ *** *** *** *** *** ক্যাপসুলের ভেতর খুব ধীরে ধীরে চোখ খুললেন মহামান্য কিহি। ভেতরে আবছা ও নীলাভ এক ধরনের আলো। মাথার কাছে কোনো একটা পোর্ট থেকে শীতল বাতাস বইছে। সেই বাতাসে এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ। চোখের কাছাকাছি একটা প্যানেল।

সেখানে সবুজ আলোর একটা সংকেত। ছোট মিটারটি দেখাচ্ছে, পৃথিবীতে এর মধ্যে একশ বছর কেটে গেছে। মহামান্য কিহি শান্ত হয়ে শুয়ে রইলেন, তাঁর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিছুক্ষণের মধ্যেই সচল হয়ে উঠবে। তখন তিনি এই ক্যাপসুলের ভেতর থেকে বের হয়ে আসবেন। তিনি নিজের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করতে থাকেন।

মহামান্য কিহি যখন ক্যাপসুল খুলে বের হয়ে এলেন তখন পৃথিবীতে সূর্য ঢলে পড়ে বিকেল নেমে এসেছে। তিনি সুরক্ষিত ঘরের ভারী দরজা খুলে বের হয়ে আসতেই বাইরের সতেজ সবুজ পৃথিবীর ঘ্রাণ অনুভব করলেন। চারপাশে বড় বড় গাছ, ঘাস উঁচু হয়ে আছে, ওপরের নীল আকাশে সাদা মেঘ। তিনি কান পেতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পেলেন। বুকের ভেতর তিনি এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করলেন।

ফিসফিস করে নিজের মনে বললেন, ‘আহা! এই পৃথিবী কী অপূর্ব! সৃষ্টিকর্তা, তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য!’ মহামান্য কিহি ঘাসের ওপর পা দিয়ে সামনে হেঁটে যেতে থাকেন। তাঁকে একটা লোকালয়, একটা জনপদ খুঁজে বের করতে হবে। পৃথিবীর পূর্ণাঙ্গ মানুষকে নিজের চোখে দেখতে হবে। তাঁর কৌতূহল আর বাধ মানতে চাইছে না। হঠাত্‍ মহামান্য কিহি এক ধরনের সতর্কশব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন।

খানিকটা দূরে কয়েকটি চতুষ্পদ প্রাণী তাদের চার পায়ের ওপর ভর করে তাঁর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কী বিচিত্র এই প্রাণীটি, আর কী বিচিত্র তার দৃষ্টি! তাঁর সময় কখনো তিনি এ ধরনের কোনো প্রাণী দেখেননি। প্রাণীগুলো এক ধরনের হিংস্র শব্দ করতে করতে হঠাত্‍ চার পায়ে ভর করে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং হঠাত্‍ করে তিনি বুঝতে পারেন, এগুলো আসলে মানুষ। ভয়াবহ আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত তাঁর মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায়। তাঁর ভবিষ্যতের মানুষের এটি কোন ধরনের পরিণাম? মানুষগুলো একটু কাছে এলে তিনি বুঝতে পারেন, মায়েদের সন্তান জন্ন দেওয়ার কষ্ট লাঘব করার জন্য এদের মাথা ছোট করে দেওয়া হয়েছিল।

সে জন্য মস্তিষ্কের আকারও ছোট হয়েছে। এখন তারা আর বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ নয়। তারা এখন বুদ্ধিবৃত্তিহীন পশু। তারা সবাই উলঙ্গ, কাপড় পরার প্রয়োজনীয়তাটুকু পর্যন্ত অনুভব করে না। শরীরের ওজন সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা এখন চার হাত পায়ে ছোটাছুটি করে।

বিবর্তনে মানুষ একবার দুই পায়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন উল্টো বিবর্তনে আবার তারা চার পায়ে ফিরে গেছে। মহামান্য কিহি এই মানুষগুলোর দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। তাদের ভেতরে আরও অনেক সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু সেগুলো বোঝার আগেই মানুষগুলো তাকে ধরে ফেলল, হাতগুলো এখনো ব্যবহার করতে পারে। শক্ত হাতে তাঁকে ধরে ফেলে হিংস্র শব্দ করতে করতে দাঁত দিয়ে কামড়ে তাঁর কণ্ঠনালি ছিঁড়ে ফেলল।

মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তিনি তাদের চোখের দিকে একবার তাকাতে পেরেছিলেন, বোধহীন পশুর হিংস্র চোখ, কিন্তু সেগুলো ছিল নিখুঁত অক্টোপাসের চোখ। সৌজন্যে - প্রথম আলো # আপনি সম্ভবত এই পোস্টগুলোও পছন্দ করবেন - সায়েন্স ফিকশন - একটি মৃত্যুদণ্ড - মুহম্মদ জাফর ইকবাল ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু - হুমায়ূন আহমেদ টুয়েন্টি টুয়েন্টি - আনিসুল হক গল্প - ইফতার - প্রণব ভট্ট

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।